বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর স্বপ্নপূরণে বাকি আছে মাত্র আর ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন। সবকিছু ঠিক থাকলে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতুতে বসবে ৪১ নম্বর স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজ। দৃশ্যমান হবে মোট ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল নদীর মধ্যে ১৫০ মিটার পর পর মোট ৪২টি পিয়ারের (পিলার) ওপর বসানো শেষ হবে মোট ৪১টি স্প্যান। সব জটিলতা, আলোচনা, সমালোচনা, সমস্যা, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কঠিন কিন্তু সুখকর বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে পদ্মা সেতু। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর সব কাজ শেষ হবে।
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প।
সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প মাওয়া -জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে দেশের কেন্দ্রের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সরাসরি সংযোগ তৈরি করবে। এই সেতুটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে। সেতুটি চালু হলে দেশের মোট জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসানো হয়েছিল প্রথম স্প্যান। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্প্যান বসানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এরপর থেকে নদীর তলদেশে মাটির স্তরের গঠন নিয়ে জটিলতা কাটিয়ে বর্ষায় নদীর প্রবল স্রোতকে উপেক্ষা করে এ নির্মাণযজ্ঞ চলেছে।
জানা গেছে, পদ্মা নদীর পানির স্তর থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে বসানো হয়েছে প্রতিটি স্প্যান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে চীনসহ ১৪টি দেশের প্রায় ২ হাজার ২০০ জন প্রকৌশলী ও চার হাজারের বেশি শ্রমিকের পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সেতুর সার্বিক অগ্রগতি সাড়ে ৮২ ভাগ। তবে পদ্মা সেতুর অবকাঠামো পুরোপুরি দৃশ্যমান হতে আর মাত্র একটি স্প্যান বাকি থাকলেও যান চলাচল উপযোগী হতে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে। গত ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ ৪০তম স্প্যানটি বসানো হয়। স্প্যান বাসানো ছাড়া সেতুর অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলেছে।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, মূল সেতুর কাজ বাস্তবায়নে অগ্রগতি ৯১ ভাগ, আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ এবং সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া বাস্তবায়ন শতভাগ এগিয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি ও বন্যায় কাজ বাধাগ্রস্ত না হলে ২০২১ সালেই শেষ হতো।
এদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ ২০২২ সালে পুরোপুরি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু ও নদী শাসন তদারকির পরামর্শক সংস্থার মেয়াদ আরও ৩৪ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সরকারের ৩৪৮ কোটি এক লাখ ৩২ হাজার টাকা খরচ বাড়লেও প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে না।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছি। আমরা আশা করছি এরমধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালি। তবে রাতে সেতুতে জ্বলবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল ও সবুজ বাতি।
সেতুটি তৈরি করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। এতে ব্যয় করা হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বিজনেস আওয়ার/০৮ ডিসেম্বর, ২০২০/এ