ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথা কেউ চিন্তা করে না

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০২০
  • 103

পুঁজিবাজারে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড আসার কথা আবারও শোনা যাচ্ছে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিচ্ছেন। সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যদি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সামান্য চিন্তা থাকত, তাহলে বাজার এভাবে পড়ে যেত না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথা কেই চিন্তা করে না। বাজারের পতন হলেই আমরা বারবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছি। যদি এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই দরকার হয়, তাহলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কী করছে? ১০ হাজার টাকার ফান্ডের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুদবিহীন কিছু অর্থ সরবরাহ করা যায় কি না, সেটা চিন্তা করা যেতে পারে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।

মোশতাক সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন ও সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী।

আল-আমিন বলেন, সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারে বড় পতনের পর আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপসহ বাজারে নতুন ফান্ড বা অর্থ সরবরাহের তথ্য আসার পর বাজারের গতি পরিবর্তন হয়; অর্থাৎ পতন রোধ হয়। এর আগেও দেখা গেছে, বাজারের জন্য কোনো আশ্বাস থাকলে কিছুদিন বাজার ভালো থাকে। স্বাভাবিকভাবে অনেকে ভাবছেন, সাম্প্রতিক এই পতন থেকে বাজার আবার চাঙা হবে। কিন্তু দেখা গেছে বাজারের জন্য নানা আশ্বাস থাকলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকে না। এর আগে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফান্ড এসেছিল, কিন্তু সেটার ফলোআপে জানা যায়নি বাজার কতটুকু উপকৃত হয়েছে।

এখন আবার ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড আসার কথা হচ্ছে। এটা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিচ্ছেন। সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যদি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সামান্য চিন্তা থাকত, তাহলে বাজার এভাবে পড়ত না। বাজারের পতন হলেই আমরা বারবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছি। যদি এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই দরকার, তাহলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কী করছে? আমার মনে হয়, বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্বে যারা আছেন, তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না এবং তা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে করেন কি না, তা দেখা দরকার। আর ১০ হাজার টাকার ফান্ডের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুদবিহীন কিছু অর্থ সরবরাহ করা যায় কি না, সেটাও চিন্তা করা যেতে পারে।

ফজলুল বারী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত লুণ্ঠিত হচ্ছে। এরা সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো দেশের সম্পদ বাইরে নিচ্ছে। এমন লুণ্ঠন মনোবৃত্তির কারণে দেশের মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কেউ ভালো করতে পারছেন না। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফুলেফেঁপে বড় হচ্ছেন, কর ফাঁকি দিচ্ছেন, দেশের অর্থ বাইরে পাচার করছেন। এই ব্যবসায়ীরাই পুঁজিবাজারের নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকলেও কারও বিচার হচ্ছে না। মূলত বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। বিএসইসি ও ডিএসই কী করছে? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর বাজারের গতি ফিরল। বাজারের গতি ঊর্ধ্বমুখী হলেই আবার চিঠিপত্র দেওয়া-নেওয়া করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। যখনই একে অপরের স্বার্থে আঘাত হানে, তখনই চিঠি চালাচালি শুরু করে। সাধারণ মানুষের কিন্তু এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সেগুলোর নেতৃত্বদানকারীদের প্রতি কোনো আস্থা নেই।

প্লেসমেন্ট শেয়ার কিংবা বোনাস শেয়ার দেওয়ার ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই। আর এসইসি বা ডিএসই আইপিও আনার ব্যাপারে এত উদগ্রীব কেন জানি না। প্রশ্ন হচ্ছে আইপিও নিয়ে আসার সময় ডিসক্লোজারগুলো ঠিক আছে কি না, সেগুলো কি তারা যথাযথভাবে দেখেন? নতুন আনার পর তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেছেন? কখনও তো দেখলাম না কোনো ইস্যু ম্যানেজারকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছে! ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের কারসাজির জন্য আজ পর্যন্ত কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। বাজার কিংবা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি, যেখানে সবাই সৎ ও পেশাদার হবে। বাজার কারসাজিতে জড়িতদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথা কেউ চিন্তা করে না

পোস্ট হয়েছে : ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০২০

পুঁজিবাজারে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড আসার কথা আবারও শোনা যাচ্ছে। এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিচ্ছেন। সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যদি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সামান্য চিন্তা থাকত, তাহলে বাজার এভাবে পড়ে যেত না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথা কেই চিন্তা করে না। বাজারের পতন হলেই আমরা বারবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছি। যদি এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই দরকার হয়, তাহলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কী করছে? ১০ হাজার টাকার ফান্ডের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুদবিহীন কিছু অর্থ সরবরাহ করা যায় কি না, সেটা চিন্তা করা যেতে পারে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।

মোশতাক সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন ও সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী।

আল-আমিন বলেন, সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারে বড় পতনের পর আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপসহ বাজারে নতুন ফান্ড বা অর্থ সরবরাহের তথ্য আসার পর বাজারের গতি পরিবর্তন হয়; অর্থাৎ পতন রোধ হয়। এর আগেও দেখা গেছে, বাজারের জন্য কোনো আশ্বাস থাকলে কিছুদিন বাজার ভালো থাকে। স্বাভাবিকভাবে অনেকে ভাবছেন, সাম্প্রতিক এই পতন থেকে বাজার আবার চাঙা হবে। কিন্তু দেখা গেছে বাজারের জন্য নানা আশ্বাস থাকলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকে না। এর আগে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফান্ড এসেছিল, কিন্তু সেটার ফলোআপে জানা যায়নি বাজার কতটুকু উপকৃত হয়েছে।

এখন আবার ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড আসার কথা হচ্ছে। এটা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিচ্ছেন। সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের যদি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সামান্য চিন্তা থাকত, তাহলে বাজার এভাবে পড়ত না। বাজারের পতন হলেই আমরা বারবার প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছি। যদি এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই দরকার, তাহলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কী করছে? আমার মনে হয়, বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্বে যারা আছেন, তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কি না এবং তা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে করেন কি না, তা দেখা দরকার। আর ১০ হাজার টাকার ফান্ডের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুদবিহীন কিছু অর্থ সরবরাহ করা যায় কি না, সেটাও চিন্তা করা যেতে পারে।

ফজলুল বারী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত লুণ্ঠিত হচ্ছে। এরা সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো দেশের সম্পদ বাইরে নিচ্ছে। এমন লুণ্ঠন মনোবৃত্তির কারণে দেশের মধ্যবিত্তরা বিপাকে পড়ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কেউ ভালো করতে পারছেন না। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফুলেফেঁপে বড় হচ্ছেন, কর ফাঁকি দিচ্ছেন, দেশের অর্থ বাইরে পাচার করছেন। এই ব্যবসায়ীরাই পুঁজিবাজারের নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকলেও কারও বিচার হচ্ছে না। মূলত বাজার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। বিএসইসি ও ডিএসই কী করছে? প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর বাজারের গতি ফিরল। বাজারের গতি ঊর্ধ্বমুখী হলেই আবার চিঠিপত্র দেওয়া-নেওয়া করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। যখনই একে অপরের স্বার্থে আঘাত হানে, তখনই চিঠি চালাচালি শুরু করে। সাধারণ মানুষের কিন্তু এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সেগুলোর নেতৃত্বদানকারীদের প্রতি কোনো আস্থা নেই।

প্লেসমেন্ট শেয়ার কিংবা বোনাস শেয়ার দেওয়ার ব্যাপারে আমার আপত্তি নেই। আর এসইসি বা ডিএসই আইপিও আনার ব্যাপারে এত উদগ্রীব কেন জানি না। প্রশ্ন হচ্ছে আইপিও নিয়ে আসার সময় ডিসক্লোজারগুলো ঠিক আছে কি না, সেগুলো কি তারা যথাযথভাবে দেখেন? নতুন আনার পর তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেছেন? কখনও তো দেখলাম না কোনো ইস্যু ম্যানেজারকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছে! ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের কারসাজির জন্য আজ পর্যন্ত কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। বাজার কিংবা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য দরকার একটি সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি, যেখানে সবাই সৎ ও পেশাদার হবে। বাজার কারসাজিতে জড়িতদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: