বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আর মাত্র ১৫০ মিটার। শেষ স্প্যানটি বসলেই স্বপ্ন স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক সুতোয় গেঁথে দৃষ্টি সীমায় পূর্ণ রূপে ভেসে উঠবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) ৪১ নম্বর স্প্যানটি বসাতে প্রস্তুত প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এদিন সবকিছু ঠিক থাকলে লেখা হবে নতুন ইতিহাস।
চ্যালেঞ্জ জয়ের অদম্য স্পৃহাই যে হাতের মুঠোয় সাফল্য এনে দিয়েছে তারও প্রমাণ মিলবে। তবে এজন্য বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। বিশ্ব দেখছে নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ধূসর রঙের স্প্যানটি বুধবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই-তে করে কাঙ্ক্ষিত পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ খবর নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।
জানা গেছে, মূল সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ২৮৫টি এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ৯৩০টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার-টি গার্ডারের মধ্যে ৩১০টি স্থাপন করা হয়েছে।
স্প্যানগুলোর উপর সড়ক ও ট্রেন লাইন (স্ল্যাব) বসানোর কাজও এগিয়ে চলছে।
সূত্র মতে, গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯১ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার খাত, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ খাত, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা, ভ্যাট ও আয়কর, যানবাহন, বেতন ও ভাতাদি এবং অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ ৭ হাজার ৭১৬ দশমিক ৯১ কোটি টাকা।
প্রকল্পের সর্বমোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক ০২ কোটি টাকা; অর্থাৎ ৭৯ দশমিক ৮৯ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের ফসল এ সেতু। বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে দেশীয় অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি আমাদের সক্ষমতার প্রতীক।
পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, সেতুর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পিলার ও স্প্যান বসানোর কাজ। এ দুটি কাজের সিংহভাগই নদীর ভেতরে করতে হয়। স্রোত, কুয়াশা, বন্যা এ কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আসছে। শেষ স্প্যানটি বসলে বাকি কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ৪৮ মাসে এ সেতু নির্মাণে চুক্তি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন দফায় ৩১ মাস পিছিয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন নির্ধারিত রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের লক্ষ্য ধরা হয়।
বিজনেস আওয়ার/০৯ ডিসেম্বর, ২০২০/এ