বীমা কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির জন্য ২০ শতাংশ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি এ নির্দেশনা জারি করেছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি এমন ২৬টি ইন্সুরেন্সএ আইন পরিপালন করে করতে হবে। এ ছাড়া যে কোনও ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে শেয়ারবাজার থেকে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা জোগাড় করতে হবে।
ত্রিশ কোটি টাকারও বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে, তাদের তালিকাভুক্ত হতে চাইলে তাদের ইক্যুইটির কমপক্ষে ২০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, সমস্ত বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
এদিকে আগামী বছরে ব্যাংকিং চ্যানেলগুলির মাধ্যমে ব্যাংকাসুরেন্স করার প্রক্রিয়া শেষের দিকে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ডাঃ মোশাররফ হোসেন এফ.ই.কে বলেন, “জনগণের মতামত পাওয়ার পরে আমরা স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করব। তারপরে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে চালু করা হবে।”
এর আগে, সিকিউরিটিজ রেগুলেটর বীমা কোম্পানিকে সিকিউরিটিজ বিধি থেকে ছাড় দেয় যাতে তারা নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতির আওতায় শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হতে সক্ষম হয়।
নতুন সুবিধার আওতায় বীমা কোম্পানিগুলো আইপিওতে ৩০ কোটি টাকারও কম অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে কমিশনে আবেদন করতে পারবেন।
বিএসইসি এ বিষয়ে বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (ইড্রা) একটি আবেদনের জবাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে, অর্থমন্ত্রী এএইচএম মোস্তফা কামাল বলেছিলেন যে দেশের সমস্ত বীমা সংস্থাগুলি ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
তিনি হুমকি দিয়েছিলেন যে সমস্ত সংস্থা এই নির্দেশনা মেনে চলা ব্যর্থ হয়েছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেবে।
তবে সংশোধিত পাবলিক ইস্যু বিধিমালার বাধ্যবাধকতার কারণে কোম্পানিগুলো কমিশনে আবেদনের কোনও বিকল্প ছিল না।
বাংলাদেশের বীমা খাতে ৭৮ টি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ টি জীবন বীমা এবং ৪৬ টি জীবন-বীমা বীমা সংস্থা।
ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালা চুড়ান্ত প্রক্রিয়ায়
এদিকে দেশের বীমা ব্যবসা কার্যক্রম সম্প্রসাণের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) একটি ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালা প্রণয়ন করছে। নীতিমালাটি বর্তমানে চুড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যা আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে।
জানা গেছে, বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ইতোমধ্যে ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালার একটি খসড়া তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। মতামত পাঠাতে হবে ই-মেইলে সফটকপি (মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে) ও হার্ডকপি (পিডিএফ) আকারে। বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও খসড়া বিষয়ে মতামত প্রদান করতে পারবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
নীতিমালার খসড়া অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে নিয়ন্ত্রিত যেকোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) বা অন্য কোন দলিলের মাধ্যমে এজেন্ট হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর বীমা ব্যবসা সংগ্রহ করা নিশ্চিত করবে।
কোন ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট নির্দিষ্ট প্রকারের বীমা কোম্পানির তিনের অধিক লাইফ বা নন-লাইফ বীমা কোম্পানির সাথে যুক্ত হতে পারবে না। বীমা কোম্পানিকে এজেন্টের সাথে চুক্তির আগে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টকে অনুমোদন নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
ব্যাংকের সম্মানীর বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, করপোরেট বীমা এজেন্ট হিসেবে বীমা ব্যবসা সংগ্রহ ও পরিচালনার জন্য ব্যাংকের সম্মানীর মাত্রা নির্ধারিত হবে তার কর্মদক্ষতার নির্ণায়কের ওপর যাতে বীমাকারী ও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একমত হবে। সম্মানীর কাঠামো ও হার ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
প্রধান ব্যাংকাস্যুরেন্স নির্বাহীর ক্ষেত্রে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রত্যেক প্রধান ব্যাংকাস্যুরেন্স নির্বাহী এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রত্যেককে বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ১২৫(২) এবং ১২৪(৪) এর অধীন নির্দিষ্ট কোন অযোগ্যতা থাকতে পারবে না। এ ছাড়াও প্রয়োজন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্য কোন যোগ্যতা।
তাছাড়া আবেদনকারী একটি ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রাতিষ্ঠানিক এজেন্ট নিয়োগকারী হিসেবে কাজ করার লাইসেন্স পেতে চাইলে নির্ধারিত ফরমের সাথে ২০০০ টাকাসহ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীকে বিবেচনা করার সময় কর্তৃপক্ষ আবেদনকারী বা তার প্রবর্তকদের বা শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা বীমা পরিকল্ বিতরণের ওপর প্রবাব ফেলার সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রাখবে।
ব্যাংকাস্যুরেন্সের জন্য প্রদত্ত লাইসেন্সটি ৩ বছরের জন্য প্রদান করা হবে। একই লাইসেন্স পরবর্তীতে ৩ বছর করে নবায়ন করা যাবে। প্রত্যেক ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট ১০০০ টাকা প্রদান সাপেক্ষে নির্ধারিত ফরমে নবায়নের আবেদন করবে এবং লাইসেন্সের মেয়াদ পূর্তির ৩০ দিন পূর্বে কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করবে।
এদিকে নবায়নের আবেদনের সাথে প্রধান ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট নির্বাহীসহ শাখায় কর্মরত এজেন্ট বা এজেন্টগণের বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির ২ সপ্তাহ ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে। কোন লাইসেন্স স্থগিত করা হলে কর্তৃপক্ষের নিকট ১০০০ টাকা ফিসহ আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে পুনরায় লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে।
এছাড়া চুক্তির ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বীমাকারীর পক্ষে বীমা পরিকল্পসমূহ এমনভাবে বিক্রি করবে যাতে অবশ্যই প্রতীয়মান হয় যে, সম্ভাব্য ক্রয়কারী বীমা চক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আবেদনপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে, নিজস্ব ই-মেইলের মাধ্যমে অথবা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব করবে এবং বীমাকারীর পক্ষ থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা গ্রহণ করবে অথবা বীমাকারী নিজেই তা সরাসরি গ্রহণ করবে। প্রস্তাব ও তা গ্রহণের প্রমাণাদি ব্যতিরেকে কোন বীমা বিক্রি সম্পন্ন হবে না এবং বীমা চুক্তি হয়নি বলে গণ্য হবে।
বিজনেস আওয়ার/এন