ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে গোল্ডেন হার্ভেস্টের ঋণ প্রতারণা

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০
  • 76

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : গোল্ডেন হার্ভেষ্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনেও ঋণ প্রতারণার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ কোম্পানিটি ২ দফায় শেয়ারবাজার থেকে ঋণ পরিশোধের নামে অর্থ সংগ্রহ করেছে। অথচ এই কোম্পানিটি থেকেই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের অন্য কোম্পানিতে প্রায় ৮২ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও শেয়ারহোল্ডারদের থেকে অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন মনে করেনি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুসন্ধানে কোম্পানিটির ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে। কোম্পানিটি নিজে ঋণে জর্জরিত থাকলেও একই গ্রুপের উদ্যোক্তা/পরিচালকদের নিজস্ব কোম্পানিতে বিনাসুদে ঋণ দিয়েছে। অনেকটা নিজে সুদের উপর ঋণ নিয়ে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিকে বিনাসুদে সরবরাহ করা হয়েছে। এতে করে সুদজনিত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে গোল্ডেন হার্ভেষ্টকে। যার দায়ভার পড়ছে বিনিয়োগকারীদের কাঁধে।

তবে কোম্পানি সচিব নির্মল চন্দ্র সরদারের দাবি, তারা উদ্যোক্তাদের কোন কোম্পানিতে বিনাসুদে ঋণ দেন নাই।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আর্থিক হিসাবের নোট ১৪এ.০২ অনুযায়ি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট থেকে একই গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিতে ৮১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। যা ‘আদার রিসিভঅ্যাবল’ হিসাবে চলতি সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে এই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে সমন্বিত আর্থিক হিসাবের নোট ২৫.০২ এ ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) হিসাবে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকার সঞ্চিতি দেখানো হয়েছে। যা চলতি দায় হিসাবে এমপ্লয়ীজ ওয়েলফেয়ার ফান্ড শিরোনামে ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড শিরোনামে ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও ডব্লিউপিপিএফ শিরোনামে ১ কোটি ৫২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু শ্রম আইন অনুযায়ি বিতরন করা হয়নি। এক্ষেত্রেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

আরও পড়ুন……
বিএসইসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা ঋণ জালিয়াতির বিস্তারিত তথ্য

এই কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) এবং ২০১৯ সালে রাইট রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে।

কোম্পানিটি গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শেয়ারবাজার থেকে রাইট ইস্যুর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। ৪টি সাধারন শেয়ারের বিপরীতে ৩টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার ৪২০ টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারন ও ঋণ পরিশোধের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা করে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। ওইসময় ৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৩ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার কথা বলেছিল।

উল্লেখ্য, রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ১৬.৭০ টাকায়। এটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা)।

বিজনেস আওয়ার/১৪ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

6 thoughts on “নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে গোল্ডেন হার্ভেস্টের ঋণ প্রতারণা

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে গোল্ডেন হার্ভেস্টের ঋণ প্রতারণা

পোস্ট হয়েছে : ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : গোল্ডেন হার্ভেষ্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনেও ঋণ প্রতারণার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ কোম্পানিটি ২ দফায় শেয়ারবাজার থেকে ঋণ পরিশোধের নামে অর্থ সংগ্রহ করেছে। অথচ এই কোম্পানিটি থেকেই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের অন্য কোম্পানিতে প্রায় ৮২ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও শেয়ারহোল্ডারদের থেকে অনুমোদন নেওয়া প্রয়োজন মনে করেনি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ।

এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুসন্ধানে কোম্পানিটির ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি উঠে আসে। কোম্পানিটি নিজে ঋণে জর্জরিত থাকলেও একই গ্রুপের উদ্যোক্তা/পরিচালকদের নিজস্ব কোম্পানিতে বিনাসুদে ঋণ দিয়েছে। অনেকটা নিজে সুদের উপর ঋণ নিয়ে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিকে বিনাসুদে সরবরাহ করা হয়েছে। এতে করে সুদজনিত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে গোল্ডেন হার্ভেষ্টকে। যার দায়ভার পড়ছে বিনিয়োগকারীদের কাঁধে।

তবে কোম্পানি সচিব নির্মল চন্দ্র সরদারের দাবি, তারা উদ্যোক্তাদের কোন কোম্পানিতে বিনাসুদে ঋণ দেন নাই।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আর্থিক হিসাবের নোট ১৪এ.০২ অনুযায়ি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট থেকে একই গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানিতে ৮১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। যা ‘আদার রিসিভঅ্যাবল’ হিসাবে চলতি সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে এই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বার্ষিক সাধারন সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে সমন্বিত আর্থিক হিসাবের নোট ২৫.০২ এ ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) হিসাবে ২ কোটি ১৭ লাখ টাকার সঞ্চিতি দেখানো হয়েছে। যা চলতি দায় হিসাবে এমপ্লয়ীজ ওয়েলফেয়ার ফান্ড শিরোনামে ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড শিরোনামে ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও ডব্লিউপিপিএফ শিরোনামে ১ কোটি ৫২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু শ্রম আইন অনুযায়ি বিতরন করা হয়নি। এক্ষেত্রেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

আরও পড়ুন……
বিএসইসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা ঋণ জালিয়াতির বিস্তারিত তথ্য

এই কোম্পানিটি ঋণ পরিশোধের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) এবং ২০১৯ সালে রাইট রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে।

কোম্পানিটি গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে শেয়ারবাজার থেকে রাইট ইস্যুর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। ৪টি সাধারন শেয়ারের বিপরীতে ৩টি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৮৯ কোটি ৯৩ লাখ ২৩ হাজার ৪২০ টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। এরমধ্যে ২৯ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে কোম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারন ও ঋণ পরিশোধের কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ার ২৫ টাকা করে ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ করে। ওইসময় ৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৩ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার কথা বলেছিল।

উল্লেখ্য, রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ১৬.৭০ টাকায়। এটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস (দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা)।

বিজনেস আওয়ার/১৪ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: