ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রয়োজন না থাকলে পুঁজিবাজার বন্ধ করে দেয়া হোক

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০২০
  • 75

২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ বছরে অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। একটি দেশের অর্থনীতি কেমন সেটার প্রতিফলন দেখা যায় সে দেশের পুঁজিবাজারে। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণই ভিন্নরূপে দেখা যাচ্ছে। গত ১০ বছরে বেশিরভাগ নিম্নমানের কোম্পানি আসায় বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হচ্ছেন।

বুধবার এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।

মোস্তাক আহমেদ সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ ২৪ ডটকমের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি এবং দ্য ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান।

আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, গত ১০ থেকে ১২ বছরে দেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে অনেক এগিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থারাও এ অগ্রগতির কথা বলে আসছেন। অর্থনীতির এ অগ্রগতি সবার মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু সে আশা পুঁজিবাজারে দেখা যায়নি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় কেন অর্থনীতির উন্নয়ন পুঁজিবাজারে প্রতিফলিত হয়নি। এ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি। ২০১০ সালে বাজারধসের পর প্রায় ১০০ কোম্পানি বাজারে এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মানহীন। এ কোম্পানিগুলো নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বাজার নিয়ে ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন; এর মধ্যে বাজারে কোম্পানির ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাজারে মানসম্মত কোম্পানি আসছে না। এতদিন যেসব কোম্পানি বাজারে এসেছে, সবই নিম্নমানের। গতকাল আমান ফিডের চার পরিচালককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানিটির পরিচালকরা ভুল তথ্য দিয়ে বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ভুল তথ্য দিয়ে কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে।

সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার এ অবস্থায় থাকার বেশকিছু কারণ রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ১১ বছরে অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। একটি দেশের অর্থনীতি কেমন-এর প্রতিফলন দেখা যায় সে দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণই ভিন্নরূপে দেখা যাচ্ছে। গত ১০ বছরে বেশিরভাগ নি¤œমানের কোম্পানি আসায় বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হচ্ছেন। আবার অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে দেশের ব্যাংক খাতে সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। তবে কিছু ব্যাংকের উন্নয়ন হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক খারাপ অবস্থানে রয়েছে। যেহেতু এক ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংকের সম্পর্ক রয়েছে। তাই কোনো একটি ব্যাংকের সমস্যা হলে সেটার প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়ে। পুঁজিবাজারে প্রায় ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১০ সালে বাজারধসের পর কোম্পানিগুলো আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখানে আসলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতা রয়েছে। কারণ এ খাতটির প্রতি তাদের অনীহা রয়েছে। এখন এ খাতটির অবস্থা খুবই খারাপ। বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো অবস্থায় নেই। এ বিষয়গুলো বাজারে নেতিবাচক হিসেবে কাজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এটি নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আবার বিদেশি বিনিয়োগকারীও বিরক্তিবোধ করছেন। বাজারে তাহলে বিনিয়োগকারীরা কীভাবে আস্থা পাবেন। আসলে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব বুঝতে হবে, এটি কেন দরকার। যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে বাজারকে বন্ধ করে দেয়া হোক। তাহলে বিনিয়োগকারীদের আর লোকসান হবে না। কারণ এ অর্থ ব্যাংকে রাখলেও অন্তত মূল টাকাটা তো পাওয়া যাবে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

প্রয়োজন না থাকলে পুঁজিবাজার বন্ধ করে দেয়া হোক

পোস্ট হয়েছে : ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০২০

২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ বছরে অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। একটি দেশের অর্থনীতি কেমন সেটার প্রতিফলন দেখা যায় সে দেশের পুঁজিবাজারে। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণই ভিন্নরূপে দেখা যাচ্ছে। গত ১০ বছরে বেশিরভাগ নিম্নমানের কোম্পানি আসায় বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হচ্ছেন।

বুধবার এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।

মোস্তাক আহমেদ সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ ২৪ ডটকমের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি এবং দ্য ডেইলি স্টারের বিজনেস এডিটর সাজ্জাদুর রহমান।

আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, গত ১০ থেকে ১২ বছরে দেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে অনেক এগিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থারাও এ অগ্রগতির কথা বলে আসছেন। অর্থনীতির এ অগ্রগতি সবার মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু সে আশা পুঁজিবাজারে দেখা যায়নি। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় কেন অর্থনীতির উন্নয়ন পুঁজিবাজারে প্রতিফলিত হয়নি। এ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে কোনো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি। ২০১০ সালে বাজারধসের পর প্রায় ১০০ কোম্পানি বাজারে এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মানহীন। এ কোম্পানিগুলো নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বাজার নিয়ে ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন; এর মধ্যে বাজারে কোম্পানির ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাজারে মানসম্মত কোম্পানি আসছে না। এতদিন যেসব কোম্পানি বাজারে এসেছে, সবই নিম্নমানের। গতকাল আমান ফিডের চার পরিচালককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানিটির পরিচালকরা ভুল তথ্য দিয়ে বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ভুল তথ্য দিয়ে কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে।

সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার এ অবস্থায় থাকার বেশকিছু কারণ রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ১১ বছরে অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। একটি দেশের অর্থনীতি কেমন-এর প্রতিফলন দেখা যায় সে দেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার সম্পূর্ণই ভিন্নরূপে দেখা যাচ্ছে। গত ১০ বছরে বেশিরভাগ নি¤œমানের কোম্পানি আসায় বিনিয়োগকারীরা বাজারবিমুখ হচ্ছেন। আবার অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে দেশের ব্যাংক খাতে সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। তবে কিছু ব্যাংকের উন্নয়ন হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক খারাপ অবস্থানে রয়েছে। যেহেতু এক ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংকের সম্পর্ক রয়েছে। তাই কোনো একটি ব্যাংকের সমস্যা হলে সেটার প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়ে। পুঁজিবাজারে প্রায় ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১০ সালে বাজারধসের পর কোম্পানিগুলো আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এখানে আসলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতা রয়েছে। কারণ এ খাতটির প্রতি তাদের অনীহা রয়েছে। এখন এ খাতটির অবস্থা খুবই খারাপ। বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো অবস্থায় নেই। এ বিষয়গুলো বাজারে নেতিবাচক হিসেবে কাজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো খারাপ অবস্থানে রয়েছে। এটি নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আবার বিদেশি বিনিয়োগকারীও বিরক্তিবোধ করছেন। বাজারে তাহলে বিনিয়োগকারীরা কীভাবে আস্থা পাবেন। আসলে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব বুঝতে হবে, এটি কেন দরকার। যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে বাজারকে বন্ধ করে দেয়া হোক। তাহলে বিনিয়োগকারীদের আর লোকসান হবে না। কারণ এ অর্থ ব্যাংকে রাখলেও অন্তত মূল টাকাটা তো পাওয়া যাবে।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: