1. [email protected] : anjuman : anjuman
  2. [email protected] : user : user
  3. [email protected] : Admin : Admin
  4. [email protected] : Nayan Babu : Nayan Babu
বিধিবর্হিভূতভাবে উচ্চ দরে শেয়ার অফলোড করতে চায় লা মেরিডিয়ান : বিএসইসির বাধা
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন

বিধিবর্হিভূতভাবে উচ্চ দরে শেয়ার অফলোড করতে চায় লা মেরিডিয়ান : বিএসইসির বাধা

  • পোস্ট হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০
print sharing button

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হোটেল কোম্পানিগুলোর ব্যবসার দুরাবস্থার কারনে শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা নেই। যাতে প্রিমিয়াম নেওয়া হোটেলগুলোর শেয়ার এখন ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থা করছে। এরমধ্য দিয়েই এবার উচ্চ প্রিমিয়ামে শেয়ার অফলোড করতে চায় বেস্ট হোল্ডিংস ( হোটেল লা মেরিডিয়ান)। সেটাও আবার বিধিবর্হিভূতভাবে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক বিতর্কিত পরিচালক। তবে এতে বাধা হয়ে দাড়িঁয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ডিএসইর ২০১৫ সালের লিস্টিং রুলসে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে সব কোম্পানির শেয়ার অফলোড করার সুযোগ রাখা ছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর নির্দেশনার মাধ্যমে সরকারি কোম্পানি ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট লিস্টিং নিষিদ্ধ করেছে। আর এই নিষিদ্ধের মধ্য দিয়েই বেসরকারি হোটেল লা মেরিডিয়ানকে শেয়ারবাজারে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও এটাকেই এখন সরকারি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ও পরবর্তীতে শেয়ারে রুপান্তর করায়, এমনটি করার চেষ্টা চলছে। অথচ হোটেলটি নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে পুরো বেসরকারিভাবে। আর সরকারি ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বিডি সার্ভিসেস) চলছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যেটা নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই। যে কারনে বিএসইসি লা মেরিডিয়ানকে সরকারি মানতে নারাজ।

কোম্পানিটিতে বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানা ৫২.০১ শতাংশ। এছাড়া ৪৭.৯৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের। এরমধ্যে সরকারি ৪ ব্যাংকের মালিকানা ২৯.৫৮ শতাংশ (সোনালি ব্যাংকের ৮.৮৩%, জনতা ব্যাংকের ৮.৮৩%, অগ্রনি ব্যাংকের ৬.৬২% ও রূপালি ব্যাংকের ৫.৩০%)।

এসত্ত্বেও অর্থমন্ত্রীর নামে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া এক চিঠিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে অবকাঠামো খাতের এ জাতীয় কোম্পানিকে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। তবে ওই চিঠি নিয়েই রয়েছে প্রশ্ন। চিঠিতে তারিখ ও রেফারেন্স নেই।

নিজে ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে শেয়ারে রুপান্তর করা লা মেরিডিয়ান থেকে আবার ৩টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৯৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৩১ কোটি ২২ লাখ টাকা (এরমধ্যে প্রিমিয়াম ৬৩০ কোটি ৩১ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করা হয়েছে বেস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডে। যে কোম্পানিটি সর্বশেষ অর্থবছরে মাত্র ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আয় করেছে। আর বাকি দুটি কোম্পানি ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত কোন আয় করেনি।

এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার ব্যতিত অন্যকোন উপায়ে বিগত ২ বছরের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করার জন্য ডিএসইর বিধান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটির ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে নগদে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও নগদ ব্যতিত অন্যভাবে ১৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকার মূলধন বাড়ানো হয়েছে। এসত্ত্বেও লা মেরিডিয়ানকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য একটি গ্রুপ উঠে পড়ে লেগেছে। 

এলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) ডিএসইর বোর্ড মিটিংয়ে লা মেরিডিয়ানের ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়টি আলোচ্যসূচীতে (এজেন্ডা) রাখা হয়েছে। তবে অন্যান্য আলোচনার বিষয়গুলো আগেই পরিচালকদের পাঠানো হলেও লা মেরিডিয়ানের ইস্যুটি গতকাল (১৬ ডিসেম্বর) সরকারি ছুটির দিন সকালে পাঠানো হয়েছে। অনেকটা চুপিসারে কাজটি করতে চেয়েছিলেন ডিএসইর ওই বিতর্কিত পরিচালক। যার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বোর্ড মিটিংয়ের এজেন্ডা পাঠানোর দায়িত্ব পালন করা ডিএসইর সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান।

ডিএসইর এমন কর্মকাণ্ডে নাখোশ বিএসইসি। যারফলে বেসরকারি কোম্পানির ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এজেন্ডায় লা মেরিডিয়ানের অন্তর্ভূক্তির কারন জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের চিঠিটি যে অর্থমন্ত্রীই দিয়েছেন, সেটা ডিএসই কিভাবে নিশ্চিত হয়েছে, তা কমিশন জানতে চেয়েছে। একইসঙ্গে চিঠিতে আরও কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। যার জবাব চিঠি পাওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। আর বিষয়গুলো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ডাইরেক্ট লিস্টিং থেকে ডিএসইকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আমরা বেস্ট হোল্ডিংসের (লা মেরিডিয়ান) ডাইরেক্ট লিস্টিং নিয়ে ডিএসইর আজকের বোর্ড মিটিংয়ের এজেন্ডার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এর আলোকে কমিশন কোম্পানিটির নানা বিষয় ও ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের প্রক্রিয়ার কিছু বিষয়ে জানতে চেয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ডিএসইকে চিঠি দিয়েছে।

লা মেরিডিয়ানের বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ৮৭১ কোটি টাকা। কোম্পানিটির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ি শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা। এই ইপিএস নিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার অফলোড করতে চায় সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা করে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারে সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা প্রিমিয়াম নিতে চায়। যেখানে এরচেয়ে ভালো ব্যবসার হোটেল কোম্পানিগুলোর শেয়ার তলানিতে।

এদিকে প্রতিটি ৬৫ টাকায় শেয়ারবাজারে ৪.৩৫ কোটি শেয়ার অফলোড করতে চায় লা মেরিডিয়ান। যা হবে মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ। এটা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের নিয়ম বর্হিভূত। এই লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোডের কথা বলা আছে। এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলসে দর নির্ধারনের প্রক্রিয়া বলা আছে। সে হিসাবে দর কত হবে, তা আগেই নির্ধারন করে দেওয়ার সুযোগ নেই।

ডিএসইর পুরাতন এক সদস্য বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বিধিবর্হিভূতভাবে লা মেরিডিয়ানকে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা সফল হলে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবেন। আর ক্ষতিগ্রস্থ হবে শেয়ারবাজার। এর আগে আমরা বেসরকারি ওশান কন্টেইনার লিমিটেডকে (ওসিএল) এই পদ্ধতিতে লিস্টিং হতে দেখেছি। যার এখন কোন অস্তিত্ব নেই।  

নিম্নে প্রিমিয়াম নিয়ে তালিকাভুক্ত হওয়া হোটেলগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামইস্যু দরবাজার দরফ্লোর প্রাইস
ইউনিক হোটেল৭৫৩৯.৫০৩৯.৫০
পেনিনসুলা চিটাগাং৩০২১.৬০১৭.১০

লা মেরিডিয়ানকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য ইস্যু ম্যানেজমেন্টের কাজ করছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ও রেস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

উল্লেখ্য, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের পরে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ লিস্টিংয়ের অনুমোদন দেয়। আর ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে টাকা তোলার বিষয় না থাকায়, স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদনের মাধ্যমে মূলত কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের অনুমোদন সাপেক্ষে ১টি কোম্পানির ডাইরেক্ট লিস্টিং হবে।

এই লিস্টিং হওয়ার পরে লেনদেন শুরু হওয়ার পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদেরকে তাদের শেয়ার বিক্রি (অফলোড) করতে হবে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোড করতে হবে। তবে বিদ্যমান কোন শেয়ারহোল্ডার তার ধারন করা থেকে অর্ধেকের বেশি বিক্রি করতে পারবেন না।

এই অফলোড করার জন্য শেয়ার দর নির্ধারনে প্রক্রিয়া রয়েছে। এজন্য প্রথমদিন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্পট মার্কেটে লেনদেন হবে। প্রথমদিনের প্রথম ৩০ মিনিটের শেয়ার দর নির্ধারনের সময় বিবেচ্য হবে। এরপরে ৩১ মিনিট থেকে নির্ধারিত ব্রোকার টাচলাইন বা মার্কেট প্রাইসে দর প্রস্তাব করবে।

প্রথম দুই দিনের লেনদেনের শেয়ার বিতরনের জন্য তৃতীয় দিন লেনদেন বন্ধ থাকবে। প্রথম ২দিন কোন সাধারন বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। চতুর্থ কার্যদিবস থেকে স্বাভাবিক টি+২ তে সেটেলমেন্ট সিস্টেম কার্যকর হবে। প্রথম ৫ দিনের লেনদেনে ১ আদেশে ১ হাজারের বেশি ক্রয় বা বিক্রয়াদেশ দেওয়া যাবে না।

বিজনেস আওয়ার/১৭ ডিসেম্বর, ২০২০/আইএইচআর

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের আরো সংবাদ