বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : অবশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদ সভার আলোচ্যসূচী থেকে (এজেন্ডা) বাদ দেওয়া হয়েছে লা মেরিডিয়ানের বিতর্কিত ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়টি।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) পর্ষদ সভায় বিধিবর্হিভূতভাবে লা মেরিডিয়ানকে ডাইরেক্ট লিস্টিং করানোর বিষয়ে আলোচনা করার জন্য রাখা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) হস্তক্ষেপের কারনে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
যে কারনে ডিএসইর আজকের পর্ষদ সভায় কোম্পানিটির ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। আপাতত অনিয়মের মাধ্যমে লা মেরিডিয়ানের ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়ে বিএসইসির চিঠির জবাব দেবে ডিএসই।
বিএসইসির অনুসন্ধানে লা মেরিডিয়ানের ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের বিষয়ে বেশকিছু অনিয়ম উঠে এসেছে। সেসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ১৫ নভেম্বর ডিএসইকে চিঠি দিয়েছে। যা পাওয়ার ৩ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়গুলো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বলা হয়েছে।
বিএসইসির চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ডিএসইর ২০১৫ সালের লিস্টিং রুলসে ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে সব কোম্পানির শেয়ার অফলোড করার সুযোগ রাখা ছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি) ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর সরকারি কোম্পানি ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে ডাইরেক্ট লিস্টিং নিষিদ্ধ করেছে। তারপরেও কিভাবে বেসরকারি লা মেরিডিয়ানকে ডাইরেক্ট লিস্টিং করা সম্ভব।
এছাড়াও বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটিতে বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানা ৫২.০১ শতাংশ। এছাড়া ৪৭.৯৯ শতাংশ মালিকানা রয়েছে প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের। এরমধ্যে সরকারি ৪ ব্যাংকের মালিকানা ২৯.৫৮ শতাংশ (সোনালি ব্যাংকের ৮.৮৩%, জনতা ব্যাংকের ৮.৮৩%, অগ্রনি ব্যাংকের ৬.৬২% ও রূপালি ব্যাংকের ৫.৩০%)। এই পরিস্থিতিতে হোটেলটি কিভাবে সরকারি হয়।
আরও পড়ুন……..
বিধিবর্হিভূতভাবে উচ্চ দরে শেয়ার অফলোড করতে চায় লা মেরিডিয়ান : বিএসইসির বাধা
চিঠিতে তারিখ ও রেফারেন্স না থাকা সত্ত্বেও অবকাঠামো খাতের এ জাতীয় কোম্পানিকে অর্থমন্ত্রী ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা ডিএসই কিভাবে নিশ্চিত হয়েছে, তাও কমিশন জানতে চেয়েছে।
এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার ব্যতিত অন্যকোন উপায়ে বিগত ২ বছরের মধ্যে শেয়ার ইস্যু না করার জন্য ডিএসইর বিধান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে নগদে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৪৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ও নগদ ব্যতিত অন্যভাবে ১৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকার মূলধন বাড়িয়েছে। এ বিষয়েও বিএসইসি জানতে চেয়েছে।
নিজে ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে শেয়ারে রুপান্তর করা লা মেরিডিয়ান থেকে ৩টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৯৪৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৬৩১ কোটি ২২ লাখ টাকা (এরমধ্যে প্রিমিয়াম ৬৩০ কোটি ৩১ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করা হয়েছে বেস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডে। যে কোম্পানিটি সর্বশেষ অর্থবছরে মাত্র ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আয় করেছে। আর বাকি দুটি কোম্পানি ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত কোন আয় করেনি বলে বিএসইসি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, প্রতিটি ৬৫ টাকায় শেয়ারবাজারে ৪.৩৫ কোটি শেয়ার অফলোড করতে চায় লা মেরিডিয়ান। যা হবে মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ। এটা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের নিয়ম বর্হিভূত। এই লিস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোডের কথা বলা আছে। এছাড়া ডাইরেক্ট লিস্টিং রুলসে দর নির্ধারনের প্রক্রিয়া বলা আছে। সে হিসাবে দর কত হবে, তা আগেই নির্ধারন করে দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিজনেস আওয়ার/১৭ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ