বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রশংসায় পঞ্চমূখ থাকা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান পাল্টে গেছেন। ওই কমিশনের বিদায়ের পরে সমালোচনা শুরু করেছেন তিনি। একসময় যোগ্য নেতৃত্ব বললেও এখন বিদায়ি ওই কমিশনকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলছেন তিনি।
শনিবার (০৬ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুল হোসেনের কমিশনকে ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনাও করেন তিনি। যাতে সাংবাদিকেরাও আগে প্রশংসা করে এখন সমালোচনার কারন কি, তা জানতে চেয়ে তার কাছে প্রশ্ন রাখেন।
গত বছরের ১৭ মে রাজধানীর স্কাই সিটি হোটেলে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে সবাই একসঙ্গে কাজ করব। একইসঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আছেন এবং পাশে থাকবেন বলে জানান তিনি।
ওই ইফতার অনুষ্ঠানে রকিবুর রহমান বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অনেক সংস্কার হচ্ছে। আমরা সবাই তার নেতৃত্বে একসঙ্গে কাজ করব। তিনি আমাদের সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা সবাই তার সঙ্গে একমত। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার সমস্যার সমাধান হয়েছে। এছাড়া তিনি শেয়ারবাজারের স্বার্থে আইপিও থেকে শুরু করে প্লেসমেন্ট, উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ২ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন, উদ্যোক্তাদের শেয়ারে লক-ইনসহ প্রত্যেকটি সংস্কার কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সবাই তার নেতৃত্বে শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পাশে আছি এবং থাকব। এছাড়া তিনি শেয়ারবাজারকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে যে কাজ করে যাচ্ছেন, আমরা তার এই কাজের পাশে থাকব।
একইদিনে তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে আস্থার ও তারল্যের সংকট রয়েছে। যা খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বে কেটে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর সামনে একটা সুন্দর শেয়ারবাজার পাব।
এরপরে গত বছরের ২২ মে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) মধ্যে আয়োজিত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে রকিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিএসইসি গত ২৯ এপ্রিল অনেকগুলো সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। কমিশন উদ্যোক্তা/পরিচালকদের পৃথকভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ, অযৌক্তিক বোনাস শেয়ার ঘোষণা বন্ধ, উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি নিয়ন্ত্রণে ব্লক মডিউল তৈরী ইত্যাদি পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন থেকে ইচ্ছা করলেই উদ্যোক্তা/পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না।
ওইদিন আরও বলেন, কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারের দুর্বল দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সবকিছু মিলিয়ে কমিশন বেসিক জায়গায় সংস্কার করেছে। খায়রুল হোসেনের এই উদ্যোগের সঙ্গে আমরা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।
এরপরে গত বছরের ২৪ মে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে শেয়ারবাজার নিয়ে রিপোর্টিং করা সাংবাদিকদের সঙ্গে ডিএসইর আয়োজিত এক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে ডিএসইর এই পরিচালক বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান শেয়ারবাজারের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, আমরা তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছি। এই বাজারকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আইনের মধ্য থেকে যার যার কাজ, তাকে করতে হবে। যাতে কেউ অনিয়ম না করে। করলেই শাস্তি আওতায় আনতে হবে। এখানে আইনের প্রয়োগ থাকতে হবে।
একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এরইমধ্যে কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। বিএসইসি কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বড় বাঁধা রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিট (আরআইইউ) বাতিল ও পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করেছে।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর আইপিও রিভিউ টিম গঠন শেষে রকিবুর রহমান বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন রিভিউ কমিটি গঠন করতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি টিমকে পরিদর্শনের জন্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে কথা দিয়েছেন।
এতো প্রশংসার পরেও খায়রুল হোসেনের কমিশন বিদায় নেওয়ার পর আজ (০৬ জুন) অপ্রত্যাশিতভাবে সমালোচনা করেন রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, খায়রুল হোসেন নেতৃত্বাধীন বিএসইসি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বিগত কমিশন অনেক আইন-কানুন পরিবর্তন করেছে। অনেক এক্সপেরিয়েন্স করেছে। তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। প্রতিটি আইন ব্যক্তি গোষ্ঠীর স্বার্থে করা হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারী ও শেয়ারবাজার। তবে এখনো কোন পারফরমেন্স না দেখালেও বর্তমান কমিশনকে খুবই শক্তিশালী ও সৎ বলে দাবি করেছেন তিনি।
বিগত কমিশনের ক্ষমতায় থাকাকালীন ও বিদায়ের পরে রকিবুর রহমানের দুই রকম আচরনে সাংবাদিকদের প্রশ্নও ছিল অনেক। তিনি আগে প্রশংসা করে এখন সমালোচনা করছেন কেনো, এছাড়া আগের কমিশনও ব্যর্থ হলেও তিনি কেনো প্রতিবাদ করেননি, এছাড়া আইপিও নিয়ে সমালোচনা হলেও স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেনো একটি কোম্পানিরও তালিকাভুক্তি আটকাতে পারেননি ইত্যাদি প্রশ্ন ছিল। তবে এর সঠিক জবাব ছিল না।
রকিবুর রহমানের মনে করা নতুন শক্তিশালী ও সৎ কমিশন মনে করে, বিগত কমিশন শেয়ারবাজারের কাঠামো তৈরী করেছে। যা এর আগে ছিল না। যে কমিশন শেয়ারবাজারের দুরাবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। এরপরে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে ১০৩টি সংস্কার করেছে। এরমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনও আছে। যার সুবাদে রকিবুর রহমানসহ ডিএসইর সব শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশের সুবিধা পাচ্ছেন।
বিজনেস আওয়ার/০৬ জুন, ২০২০/আরআই