ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এফআরসির নির্দেশনা অমান্য করে বেশি ইপিএস দেখিয়েছে রবি

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা অমান্য করে চলতি বছরের ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বাড়িয়ে দেখিয়েছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা। ইপিএস গণনায় শেয়ার মানি ডিপোজিট বা অনুরুপ যেকোন নামে সংগ্রহ করা অর্থকে বিবেচনায় নিতে বলা হলেও রবি তা নেয়নি। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি অতিরঞ্জিত ইপিএস দেখিয়েছে। যা নিয়ে এফআরসি করণীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি এফআরসির প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শেয়ার ইস্যু করা হবে এই প্রতিশ্রুতিতে ‘শেয়ার মানি ডিপোজিট’ বা অনুরূপ অন্য যেকোন নামে সংগ্রহ করা অর্থ নিয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে অপব্যবহার করা হয়। এ সমস্যা কাটিয়ে তোলার জন্য ইপিএস গণনায় ওই অর্থকে বিবেচনায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এফআরসি।

এফআরসি এই নির্দেশনাকে অমান্য করেছে রবি আজিয়াটা। কোম্পানিটি শেয়ার ইস্যু করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আগেই সংগ্রহ করা অর্থকে ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি।

এ বিষয়ে এফআরসির নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, রবি ভবিষ্যতে শেয়ার ইস্যুর জন্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থকে দায় হিসেবে দেখায়। যা আইপিও অনুমোদন পেলে শেয়ার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এখন যেহেতু তারা আইপিও অনুমোদন পেয়ে গেছে, তাই ইপিএস গণনায় ওই অর্থকে বিবেচনায় নিতে হবে।

রবি আজিয়াটার ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০) প্রকাশিত আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, ওই সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১১৬ কোটি ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এই মুনাফাকে ইপিএস গণনার জন্য কোম্পানিটির ২০২০ সালের শুরুতেই শেয়ার ইস্যু করার জন্য সংগৃহিত অর্থের পরিমাণ ছিল ১৩৬ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ছিল ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এফআরসি নির্দেশনা অনুযায়ি ইপিএস গণনায় শেয়ার সংখ্যা হবে কমপক্ষে (৪৭১৪১৪০০০০+১৩৬০৭৮১০০) ৪৮৫০২১৮১০০টি। যা বিবেচনায় ইপিএস হবে ০.২৪ টাকা।

কিন্তু রবি আজিয়াটা কর্তৃপক্ষ শেয়ার ইস্যুর জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকাকে বিবেচনায় না নিয়ে ইপিএস দেখিয়েছে ০.২৫ টাকা।

এছাড়া কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা ওই ৯ মাসের মধ্যেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে শেয়ার ইস্যুর জন্য (সুদসহ) ৫ কোটি ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অর্থও ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নিতে হবে।

এফআরসির নির্বাহি পরিচালক বলেন, চলতি বছরের ৯ মাসের যে আর্থিক হিসাবে রবি তৈরী করেছে, সেখানে ওই অর্থকে বিবেচনায় নিতে হবে। কারন তারাতো আইপিও এবং তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়ে গেছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের কাছে তারা বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে শেয়ার ইস্যুর শর্ত দিয়েছিল।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে রবি আজিয়াটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শেয়ার ইস্যুর জন্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থকে ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি। তাদেরকে সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে এটা করতে হবে। এখন সেটা না করে এফআরসির নির্দেশনার ব্যত্যয় করেছে। অথচ এই শর্ত রবি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই দিয়েছিল। তারা বলেছিল যখন আইপিও অনুমোদন পাবে, তখন এটা করবে। তবে এখনো পালন করেনি। যাতে এর কারন জানতে চেয়ে এফআরসি রবিকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে বা চিঠি দিতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিনের কাছে লিখিত পাঠালেও তিনি কোন প্রতিউত্তর করেননি।

আরও পড়ুন……
সহযোগি কোম্পানির ঋণের দায়ভার বহন করছে রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারহোল্ডাররা

বিজনেস আওয়ার/২৯ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “এফআরসির নির্দেশনা অমান্য করে বেশি ইপিএস দেখিয়েছে রবি

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এফআরসির নির্দেশনা অমান্য করে বেশি ইপিএস দেখিয়েছে রবি

পোস্ট হয়েছে : ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা অমান্য করে চলতি বছরের ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বাড়িয়ে দেখিয়েছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা। ইপিএস গণনায় শেয়ার মানি ডিপোজিট বা অনুরুপ যেকোন নামে সংগ্রহ করা অর্থকে বিবেচনায় নিতে বলা হলেও রবি তা নেয়নি। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি অতিরঞ্জিত ইপিএস দেখিয়েছে। যা নিয়ে এফআরসি করণীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি এফআরসির প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শেয়ার ইস্যু করা হবে এই প্রতিশ্রুতিতে ‘শেয়ার মানি ডিপোজিট’ বা অনুরূপ অন্য যেকোন নামে সংগ্রহ করা অর্থ নিয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে অপব্যবহার করা হয়। এ সমস্যা কাটিয়ে তোলার জন্য ইপিএস গণনায় ওই অর্থকে বিবেচনায় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এফআরসি।

এফআরসি এই নির্দেশনাকে অমান্য করেছে রবি আজিয়াটা। কোম্পানিটি শেয়ার ইস্যু করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আগেই সংগ্রহ করা অর্থকে ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি।

এ বিষয়ে এফআরসির নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, রবি ভবিষ্যতে শেয়ার ইস্যুর জন্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থকে দায় হিসেবে দেখায়। যা আইপিও অনুমোদন পেলে শেয়ার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এখন যেহেতু তারা আইপিও অনুমোদন পেয়ে গেছে, তাই ইপিএস গণনায় ওই অর্থকে বিবেচনায় নিতে হবে।

রবি আজিয়াটার ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০) প্রকাশিত আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, ওই সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১১৬ কোটি ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এই মুনাফাকে ইপিএস গণনার জন্য কোম্পানিটির ২০২০ সালের শুরুতেই শেয়ার ইস্যু করার জন্য সংগৃহিত অর্থের পরিমাণ ছিল ১৩৬ কোটি ৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ছিল ৪ হাজার ৭১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এফআরসি নির্দেশনা অনুযায়ি ইপিএস গণনায় শেয়ার সংখ্যা হবে কমপক্ষে (৪৭১৪১৪০০০০+১৩৬০৭৮১০০) ৪৮৫০২১৮১০০টি। যা বিবেচনায় ইপিএস হবে ০.২৪ টাকা।

কিন্তু রবি আজিয়াটা কর্তৃপক্ষ শেয়ার ইস্যুর জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকাকে বিবেচনায় না নিয়ে ইপিএস দেখিয়েছে ০.২৫ টাকা।

এছাড়া কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা ওই ৯ মাসের মধ্যেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে শেয়ার ইস্যুর জন্য (সুদসহ) ৫ কোটি ৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই অর্থও ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নিতে হবে।

এফআরসির নির্বাহি পরিচালক বলেন, চলতি বছরের ৯ মাসের যে আর্থিক হিসাবে রবি তৈরী করেছে, সেখানে ওই অর্থকে বিবেচনায় নিতে হবে। কারন তারাতো আইপিও এবং তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেয়ে গেছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের কাছে তারা বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে শেয়ার ইস্যুর শর্ত দিয়েছিল।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে রবি আজিয়াটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শেয়ার ইস্যুর জন্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থকে ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি। তাদেরকে সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে এটা করতে হবে। এখন সেটা না করে এফআরসির নির্দেশনার ব্যত্যয় করেছে। অথচ এই শর্ত রবি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই দিয়েছিল। তারা বলেছিল যখন আইপিও অনুমোদন পাবে, তখন এটা করবে। তবে এখনো পালন করেনি। যাতে এর কারন জানতে চেয়ে এফআরসি রবিকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে বা চিঠি দিতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিনের কাছে লিখিত পাঠালেও তিনি কোন প্রতিউত্তর করেননি।

আরও পড়ুন……
সহযোগি কোম্পানির ঋণের দায়ভার বহন করছে রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারহোল্ডাররা

বিজনেস আওয়ার/২৯ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: