ব্যাংকের ব্যাংকের মুনাফা হলেই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক ভালো মুনাফা করেছে তাদের বেশি লভ্যাংশ দেয়া উচিত। অন্যথায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমিন ব্যাংকেরও ইমেজ নস্ট হবে এবং পুঁজিবাজারে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে ব্যাংকের শেয়ার। তবে যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি, প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি রয়েছে তাদের নগদে লভ্যাংশ না দিয়ে স্টক ডিভিডেন্ড দেয়া প্রয়োজন। এতে এক দিকে ব্যাংকের মূলধন বাড়বে, অপর দিকে ব্যাংকের অর্থ ব্যাংকেই থেকে যাবে।
জানা গেছে, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কিছু ব্যাংক ২০১৯ সালের লভ্যাংশ দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি অংশও এ বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। যদিও বিপক্ষেও মতামত আছে। বিপক্ষের মতামত হলো, করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে চলতি বছর। আয় কমে যেতে পারে চলতি বছরে। আর ব্যাংকগুলো এবার লভ্যাংশ দেবে ২০১৯ সালের মুনাফা থেকে। এ কারণে গত বছরের মুনাফা থেকে লভ্যাংশ না দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যদি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে নিতে হবে ২০২০ সালের মুনাফার লভ্যাংশ নিয়ে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কোনো ব্যাংক যদি মুনাফা করে তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের অবশ্যই লভ্যাংশ দেয়া উচিত। তিনি বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে বিনিয়োগ করে মুনাফার জন্য। অনেকেই বছর শেষে ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা পান তা দিয়ে সংসার চালান। বর্তমানে এমনিতেই করোনার কারণে অফিস আদালত বন্ধ। ফলে অনেকেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এতে মানুষের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এরওপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা না পেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসতে হবে। তাদের ক্রয়ক্ষমতা আরো কমে যাবে। সংসার চালাতে না পেরে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে ফেলবেন। এতে পুঁজিবাজারে মূলধন কমে যাবে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকের লভ্যাংশ না দেয়ার যদি কোনো প্রক্রিয়া থাকে তাহলে তা থেকে সরে আসা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আখতার হোসেন সান্নামাত এ বিষয়ে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানি হলে এবং সেই কোম্পানি মুনাফা করলে অবশ্যই তা থেকে লভ্যাংশ দিতে হবে। এতে পুজিবাজার টেকসই হবে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। এ ক্ষেত্রে লভ্যাংশ না দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে তিনি মনে করেন। কোনো ব্যাংকের পারফরম্যান্স খারাপ হলে, অর্থাৎ ভালো মুনাফা করতে না পারলে, খেলাপি ঋণ বেশি, মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংকের ক্ষেত্রে আলাদা চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে যারা ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারী তাদের কথাও ভাবতে হবে। লভ্যাংশ না দেয়ার কারণে তাদের কী যে ক্ষতি হবে সেই ক্ষতি কিভাবে সমন্বয় করা যায় সে দিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকার নানা খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। পুঁজিবাজারের সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদৈর দিকেও নজর দেয়া উচিত। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে টেকসই এবং তারল্য প্রবাহ বাড়াতে হলে বিদ্যমান কিছু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যেমন, সারা বছরের লভ্যাংশ একবারে না দিয়ে ব্যাংকের এফডিআরের মতো তিন মাস অন্তর অন্তর দেয়া যেতে পারে। এতে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। ব্যাংকে কম মুনাফা নিয়ে যেখানে আমানতকারীরা সন্তুষ্ট থাকে, সেখানে বেশি মুনাফার আশায় বিনিয়োগকারীরা এফডিআর কম রেখে পুঁজিবাজারের ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। এতে পুুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কট কেটে যাবে। দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ বাড়বে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলো প্রতি বছর যে পরিমাণ মুনাফা করে তা থেকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ, করপোরেট ট্যাক্স বাদ দিয়ে যা থাকে তা নিট মুনাফা হিসেবে ধরা হয়। ওই মুনাফার একটি অংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে দেয়া হয়। কিছু অংশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ডে রাখা হয়। ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের একাংশ এবং কিছু ব্যাংক করোনার কারণে ব্যাংকের লভ্যাংশ না দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগের মধ্যে এর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে।