স্পোর্টস ডেস্ক : গত বছর মার্চে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন। এরপর দেশের মাটিতে আসন্ন পরের ওয়ানডে সিরিজেই দলে জায়গা পেলেন না পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা।
বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় না থাকায়, মাশরাফিকে বিবেচনায় রাখা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মাশরাফির আর মাঠ থেকে বিদায় নেয়া হবে না? তবে কি শেষ হয়ে গেল মাশরাফি-উপাখ্যান?
এদিকে মাশরাফি দলে না থাকায় অগনিত ভক্ত-সমর্থক হতাশ, ক্ষুব্ধ, মনোক্ষুণ্ন। তাদের দাবি, মাশরাফি গত মাসে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপেও সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। তাই তাকে দলে নেয়াই যেত।
বিশ্বকাপ ২০২৩ পর্যন্ত না হোক, বিসিবির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় না থাকুন, তার পক্ষে তো আরও কিছু দিন খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই তাকে দলে রাখাই যেত।
সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীদের পক্ষের মত, মাশরাফি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক প্রবাদপ্রতিম চরিত্র। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ও সফলতম পেসার। তাকে সম্মানজনক বিদায়ের ব্যবস্থা করা যেত।
বিকেএসপির জন্মলগ্ন থেকে দেশবরেণ্য অনেক ক্রিকেটারের গুরু, মেন্টর, শিক্ষক এবং ক্রিকেটারদের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ফাহিম মনে করেন, মাশরাফির মতো ক্রিকেটারের বিদায়টা সম্মানজনক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া স্বাক্ষাতকারে ফাহিম বলেন, আমি জানি না মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ব্যাপারে বোর্ডের সাথে কোনো কথাবার্তা হয়েছে কি না। যেহেতু আমি বিষয়টি নিশ্চিত নই, তাই নেতিবাচক কিছু বলার আগে ভাবতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, মাশরাফি সন্দেহাততীতভাবেই আমাদের দেশের দক্ষ ও সফলতম অধিনায়ক। দুর্দান্ত পারফরমারও। দেশের সব সময়ের অন্যতম সেরা বোলার। এত বড় তারকা ও সফলতম পারফরমারের মাঠের বাইরে থেকে অবসর মোটেই ভালো দেখায় নয়।
ফাহিম বলেন, তার মেধা, প্রজ্ঞা, প্রাপ্তি, অর্জন আর জাতীয় দলের জন্য অবদানের কথা চিন্তা করলে সেটা বেমানান। তাই মাশরাফি যদি অবসরের ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে, তাহলে তাকে সম্মানের সাথে মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার সুযোগ করে দেয়া উচিত।
মাশরাফি কি কখনো বোর্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন? এ ব্যাপারে জাতীয় দলের ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম বলেন, আমার জানা মতে মাশরাফি বোর্ডের কাছে কখনই অবসরের ইচ্ছা প্রকাশ করে কোনো চিঠিও দেয়নি। আমাদের বা নির্বাচকদের কাছেও অবসরের কথা বলেনি। বললে অবশ্যই একটা পথ বের করা যেত।
নাজমুল আবেদিন ফাহিমও মানছেন, মাশরাফির যা বয়স, তাতে আর বেশিদিন জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব নয়। তবে তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে অন্তত একটি বা দুটি ম্যাচ খেলিয়ে অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া যেত।
নাজমুল আবেদিন ফাহিম একা নন, মাশরাফির অগনিত ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করেন, মাশরাফি বিসিবির দীর্ঘ পরিকল্পনায় না থাকলেও তাকে অল্প কয়েকটা ম্যাচে সুযোগ দেয়া যেত।
দলের অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন আজ অকপটে স্বীকার করেছেন, বোলার মাশরাফি স্টিল গুড (এখনও যথেষ্ট ভালো)। তাহলে তাকে দল থেকে এত তাড়াতাড়ি ছেঁটে ফেলা হলো? প্রশ্ন উঠতেই পারে।
এদিকে ভেতরের খবর মাশরাফি নিজে থেকে নাকি অবসরে যেতে অনিচ্ছুক। তার কথা, আমি কেন যেচে অবসরের ঘোষণা দেব? কেন বলবো আমি অমুক দিন খেলা ছেড়ে দিতে চাই!
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চলাকালে বোর্ড পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথে একান্ত আলাপে মাশরাফি বলেন, তিনি খেলা চালিয়ে যেতে চান। নির্বাচকরা তাকে যোগ্য মনে করলে বিবেচনা করবেন, না হলে করবেন না।
প্রসঙ্গত, গত বিশ্বকাপ শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, মাশরাফির বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সব কিছুই করা হবে।
কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে প্রশ্ন উঠছে- মাশরাফির ভাগ্যে কি অমন রাজকীয় বিদায় জুটবে? নাকি পূর্বসূরিদের মতো মনের দুঃখ-কষ্ট আর অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়ে মাঠের বাইরে থেকেই ইতি ঘটবে এত বড় ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার?
উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাসে বড় ক্রিকেটারদের ঘটা করে বিদায় দেয়ার রীতি খুব একটা নেই। এছাড়া অনেক মেধাবী ও যোগ্য ক্রিকেটারের বিদায়টাও সুখকর ছিল না। মাশরাফির শেষটাও কি আক্ষেপময় হবে?
বিজনেস আওয়ার/০৫ জানুয়ারি, ২০২০/এ