ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে কৃত্রিম লোকসানের শঙ্কা

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে কৃত্রিম লোকসান দেখানোর সন্দেহ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটি এফডিআর থেকে অর্জিত সুদজনিত আয়কে গায়েব করে দেওয়ার জন্য এমনটি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারনে সত্য ঘটনা অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের আলহাজ্বের এফডিআর করা আছে ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদজনিত আয় হয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যে কোম্পানিটির ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিতে প্রয়োজন ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে ব্যবসা না করলেও কোম্পানিটির পক্ষে শুধু এফডিআর দিয়েই ১৫ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেই কোম্পানিটিই এখন পরিচালকদের খামখেয়ালিপনায় লভ্যাংশ না দিয়ে‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হয়েছে।

দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তুলা থেকে সূতা উৎপাদনকারী আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পণ্য বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। যে পণ্য উৎপাদনে ১২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। আগের অর্থবছরেও বিক্রির থেকে উৎপাদন ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটিকে লোকসান দেখানো হচ্ছে। আর এখানেই সন্দেহ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আলহাজ্ব টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ বিক্রির বিপরীতে গত ২ অর্থবছরে যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যয় দেখিয়েছি, সেটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। যদি লোকসানই হয়, তাহলে কেনো বিক্রি করতে হবে। অন্যদেরতো এমন হচ্ছে না। তাই শেয়ারবাজার ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে সঠিক কারন অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও পরিচালকদের পেছনে কোম্পানির ব্যয় থেমে নেই। একইসঙ্গে স্টাফদের পেছনে বেতনাদিবাবদ ব্যয় বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে আলহাজ্ব টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালের ২৫ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি তালহা তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন। এর কারন হিসেবে জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক হারে বিক্রি কমে যাওয়ায় এমনটি করা হয়েছে।

এরপরেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিচালকদের সম্মানিবাবদ ১২ লাখ টাকা, চেয়ারম্যানের সম্মানিবাবদ ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, বোর্ড মিটিং ফিবাবদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, অডিট কমিটির মিটিংবাবদ ১ লাখ ২০ হাজার, ক্রয় কমিটির মিটিংবাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার, এনআরসি কমিটির মিটিংবাবদ ৩০ হাজার টাকা ও ভ্রমনের জন্য ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আগের বছরের ৭২ লাখ ২৯৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭২ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৫ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।

বিএসইসির ওই কর্মকর্তা বলেন, আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পর্ষদের খামখেয়ালিপনার কারনে কোম্পানিটি ডুবতে বসেছে। তারা যোগ্য না হয়েও শুধুমাত্র কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ আকড়ে ধরে রাখতে গিয়ে এই পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ কোম্পানিটির যে পরিমাণ এফডিআর রয়েছে, শুধু তা দিয়েই নিয়মিত ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব। এ কারনে কোম্পানির সার্বিক তদারকির জন্য বিএসইসি, ডিএসই ও একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের চলমান দূরাবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য কমিশনের একজন নির্বাহি পরিচালক, ডিএসইর একজন সিনিয়র অফিসার ও কমিশনের নিয়োগকৃত একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। যারা আলহাজ্ব টেক্সটাইলের সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন।

একইদিনে কোম্পানিটির সর্বশেষ ২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবসহ (২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০) কোম্পানির সার্বিক বিষয় নিরীক্ষার জন্য কমিশন বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এজন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে নিরীক্ষকের চাহিদা অনুযায়ি সহযোগিতা করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারন হিসেবে আর্থিক হিসাবে কাচাঁ তুলা, মজুরী ও বেতন, বিদ্যুৎ খরচ, গ্যাস খরচ, ইন্স্যুরেন্স, প্যাকিং ম্যাটারিয়াস, মেশিনের খুচরা যন্ত্রাংশের ক্রয় মূল্যের বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছে আলহাজ্ব টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ। যা ম্যানেজমেন্টের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে ছিল বলে জানিয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/০৬ জানুয়ারি, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে কৃত্রিম লোকসানের শঙ্কা

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে কৃত্রিম লোকসানের শঙ্কা

পোস্ট হয়েছে : ১০:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জানুয়ারী ২০২১

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে কৃত্রিম লোকসান দেখানোর সন্দেহ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটি এফডিআর থেকে অর্জিত সুদজনিত আয়কে গায়েব করে দেওয়ার জন্য এমনটি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারনে সত্য ঘটনা অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের আলহাজ্বের এফডিআর করা আছে ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদজনিত আয় হয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যে কোম্পানিটির ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিতে প্রয়োজন ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে ব্যবসা না করলেও কোম্পানিটির পক্ষে শুধু এফডিআর দিয়েই ১৫ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেই কোম্পানিটিই এখন পরিচালকদের খামখেয়ালিপনায় লভ্যাংশ না দিয়ে‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হয়েছে।

দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তুলা থেকে সূতা উৎপাদনকারী আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পণ্য বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। যে পণ্য উৎপাদনে ১২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। আগের অর্থবছরেও বিক্রির থেকে উৎপাদন ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটিকে লোকসান দেখানো হচ্ছে। আর এখানেই সন্দেহ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিএসইসির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আলহাজ্ব টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ বিক্রির বিপরীতে গত ২ অর্থবছরে যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যয় দেখিয়েছি, সেটা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। যদি লোকসানই হয়, তাহলে কেনো বিক্রি করতে হবে। অন্যদেরতো এমন হচ্ছে না। তাই শেয়ারবাজার ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে সঠিক কারন অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও পরিচালকদের পেছনে কোম্পানির ব্যয় থেমে নেই। একইসঙ্গে স্টাফদের পেছনে বেতনাদিবাবদ ব্যয় বেড়েছে বলে উল্লেখ করেছে আলহাজ্ব টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালের ২৫ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি তালহা তার প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন। এর কারন হিসেবে জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক হারে বিক্রি কমে যাওয়ায় এমনটি করা হয়েছে।

এরপরেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিচালকদের সম্মানিবাবদ ১২ লাখ টাকা, চেয়ারম্যানের সম্মানিবাবদ ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা, বোর্ড মিটিং ফিবাবদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, অডিট কমিটির মিটিংবাবদ ১ লাখ ২০ হাজার, ক্রয় কমিটির মিটিংবাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার, এনআরসি কমিটির মিটিংবাবদ ৩০ হাজার টাকা ও ভ্রমনের জন্য ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আগের বছরের ৭২ লাখ ২৯৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭২ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৫ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।

বিএসইসির ওই কর্মকর্তা বলেন, আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পর্ষদের খামখেয়ালিপনার কারনে কোম্পানিটি ডুবতে বসেছে। তারা যোগ্য না হয়েও শুধুমাত্র কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ আকড়ে ধরে রাখতে গিয়ে এই পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ কোম্পানিটির যে পরিমাণ এফডিআর রয়েছে, শুধু তা দিয়েই নিয়মিত ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব। এ কারনে কোম্পানির সার্বিক তদারকির জন্য বিএসইসি, ডিএসই ও একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ২৯ ডিসেম্বর আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের চলমান দূরাবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য কমিশনের একজন নির্বাহি পরিচালক, ডিএসইর একজন সিনিয়র অফিসার ও কমিশনের নিয়োগকৃত একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। যারা আলহাজ্ব টেক্সটাইলের সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন।

একইদিনে কোম্পানিটির সর্বশেষ ২ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবসহ (২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০) কোম্পানির সার্বিক বিষয় নিরীক্ষার জন্য কমিশন বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এজন্য কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে নিরীক্ষকের চাহিদা অনুযায়ি সহযোগিতা করতে হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ার কারন হিসেবে আর্থিক হিসাবে কাচাঁ তুলা, মজুরী ও বেতন, বিদ্যুৎ খরচ, গ্যাস খরচ, ইন্স্যুরেন্স, প্যাকিং ম্যাটারিয়াস, মেশিনের খুচরা যন্ত্রাংশের ক্রয় মূল্যের বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছে আলহাজ্ব টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ। যা ম্যানেজমেন্টের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে ছিল বলে জানিয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/০৬ জানুয়ারি, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: