ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়ার গ্রীডের ২৯১ কোটি টাকা আদায়ে শঙ্কা

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা মানছে না শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে কোম্পানিটির গ্রাহকদের কাছ থেকে ২৯১ কোটি টাকার পাওনা আদায় নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।

পাওয়ার গ্রীডের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক এসব তথ্য জানিয়েছেন।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পাওয়ার গ্রীডের পাওনা রয়েছে ৬২২.৬১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ডিপিডিসির কাছে ৯৮.২৯ কোটি টাকা, ডেসকোর কাছে ২৭.৯৪ কোটি টাকা, বিপিডিবির কাছে ২৬৫.০৯ কোটি টাকা, পিবিএসের কাছে ১৮৬.৪৪ কোটি টাকা, ডব্লিউজেডপিডিসিএলের কাছে ১৭.৫৪ কোটি টাকা, এম/এস আবুল খায়ের স্টিল প্রডাক্টের কাছে ০.৬৪ কোটি টাকা ও বিডব্লিউডিবি জিকের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার প্রজেক্টের কাছে ০.১৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এসব গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকার পরিমাণ বছরের পর বছর বাড়ছে।

ওই গ্রাহকদের কাছে পাওনা টাকার মধ্যে ২৯১.১৭ কোটি টাকা আদায় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ডিপিডিসির কাছে ৬৯.৮৫ কোটি টাকা, ডেসকোর কাছে ০.৫৬ কোটি টাকা, বিপিডিবির কাছে ২১৮.৩১ কোটি টাকা, পিবিএসের কাছে ১.৬৪ কোটি টাকা, ডব্লিউজেডপিডিসিএলের কাছে ০.০০৭ কোটি টাকা, এম/এস আবুল খায়ের স্টিল প্রডাক্টের কাছে ০.৬৪ কোটি টাকা ও বিডব্লিউডিবি জিকের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার প্রজেক্টের কাছে ০.১৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এই টাকা আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছে নিরীক্ষক।

এফআরসির চলতি বছরের ২ মার্চের এক নির্দেশনায় শেয়ার মানি ডিপোজিটকে অফেরতযোগ্য ও ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনায় বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ এফআরসির এই নির্দেদশনা মানছে না।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, পাওয়ার গ্রীডে ‘ডিপোজিট ফর শেয়ার’ হিসাবে ৫৮৮৫.৮৮ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এফআরসির নির্দেশনার পরে কোম্পানিটি থেকে ওই অর্থের মধ্য থেকে ১২৫.৭৬ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করেনি এবং ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি। অন্যথায় কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের ইপিএসে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।

এ বিষয়ে অব্যাহতি চেয়ে এফআরসিতে চিঠি দিয়েছে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এফআরসি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

আর্থিক হিসাবে ১৪২৯০.৮৯ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে কোম্পানিটির এই সম্পত্তির রেজিস্টারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এছাড়া স্বশরীরে ওইসব সম্পত্তির অস্তিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি।

এই বিশাল পরিমাণ স্থায়ী সম্পদ থাকলেও পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করে না। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩৬ লংঘন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

পাওয়ার গ্রীডের আর্থিক হিসাবে ২০৬.৯৬ কোটি টাকার মজুদ পণ্য আছে বলে দেখানো হয়েছে। কিন্তু স্টর লেজার ও অ্যাকাউন্টস লেজারে ভিন্ন তথ্য রয়েছে। নিরীক্ষক পরিদর্শনে দেখেন, স্টর লেজারে মজুদ পণ্য হিসেবে ৫১.২৮ কোটি টাকা ও অ্যাকাউন্টস লেজারে ৩৪.৩০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ দুই হিসাবে মধ্যে পার্থক্য ১৬.৯৮ কোটি টাকা। যে কারনে মজুদ পণ্যের মূল্য ও অস্বিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি নিরীক্ষক।

আরও পড়ুন…….
আরামিটেও সহযোগি কোম্পানিতে অর্থ সরবরাহ নিয়ে জটিলতা
রবি থেকে বিনিয়োগ ফেরতে অপেক্ষা করতে হবে ১৭২ বছর

বিজনেস আওয়ার/১২ জানুয়ারি, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

2 thoughts on “গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়ার গ্রীডের ২৯১ কোটি টাকা আদায়ে শঙ্কা

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়ার গ্রীডের ২৯১ কোটি টাকা আদায়ে শঙ্কা

পোস্ট হয়েছে : ০১:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা মানছে না শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে কোম্পানিটির গ্রাহকদের কাছ থেকে ২৯১ কোটি টাকার পাওনা আদায় নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।

পাওয়ার গ্রীডের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক এসব তথ্য জানিয়েছেন।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পাওয়ার গ্রীডের পাওনা রয়েছে ৬২২.৬১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ডিপিডিসির কাছে ৯৮.২৯ কোটি টাকা, ডেসকোর কাছে ২৭.৯৪ কোটি টাকা, বিপিডিবির কাছে ২৬৫.০৯ কোটি টাকা, পিবিএসের কাছে ১৮৬.৪৪ কোটি টাকা, ডব্লিউজেডপিডিসিএলের কাছে ১৭.৫৪ কোটি টাকা, এম/এস আবুল খায়ের স্টিল প্রডাক্টের কাছে ০.৬৪ কোটি টাকা ও বিডব্লিউডিবি জিকের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার প্রজেক্টের কাছে ০.১৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এসব গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকার পরিমাণ বছরের পর বছর বাড়ছে।

ওই গ্রাহকদের কাছে পাওনা টাকার মধ্যে ২৯১.১৭ কোটি টাকা আদায় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ডিপিডিসির কাছে ৬৯.৮৫ কোটি টাকা, ডেসকোর কাছে ০.৫৬ কোটি টাকা, বিপিডিবির কাছে ২১৮.৩১ কোটি টাকা, পিবিএসের কাছে ১.৬৪ কোটি টাকা, ডব্লিউজেডপিডিসিএলের কাছে ০.০০৭ কোটি টাকা, এম/এস আবুল খায়ের স্টিল প্রডাক্টের কাছে ০.৬৪ কোটি টাকা ও বিডব্লিউডিবি জিকের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার প্রজেক্টের কাছে ০.১৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এই টাকা আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছে নিরীক্ষক।

এফআরসির চলতি বছরের ২ মার্চের এক নির্দেশনায় শেয়ার মানি ডিপোজিটকে অফেরতযোগ্য ও ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনায় বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ এফআরসির এই নির্দেদশনা মানছে না।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, পাওয়ার গ্রীডে ‘ডিপোজিট ফর শেয়ার’ হিসাবে ৫৮৮৫.৮৮ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এফআরসির নির্দেশনার পরে কোম্পানিটি থেকে ওই অর্থের মধ্য থেকে ১২৫.৭৬ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করেনি এবং ইপিএস গণনায় বিবেচনায় নেয়নি। অন্যথায় কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের ইপিএসে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।

এ বিষয়ে অব্যাহতি চেয়ে এফআরসিতে চিঠি দিয়েছে পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এফআরসি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

আর্থিক হিসাবে ১৪২৯০.৮৯ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে কোম্পানিটির এই সম্পত্তির রেজিস্টারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এছাড়া স্বশরীরে ওইসব সম্পত্তির অস্তিত্ব নিশ্চিত করা হয়নি।

এই বিশাল পরিমাণ স্থায়ী সম্পদ থাকলেও পাওয়ার গ্রীড কর্তৃপক্ষ ইমপেয়ারমেন্ট টেস্ট করে না। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৩৬ লংঘন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

পাওয়ার গ্রীডের আর্থিক হিসাবে ২০৬.৯৬ কোটি টাকার মজুদ পণ্য আছে বলে দেখানো হয়েছে। কিন্তু স্টর লেজার ও অ্যাকাউন্টস লেজারে ভিন্ন তথ্য রয়েছে। নিরীক্ষক পরিদর্শনে দেখেন, স্টর লেজারে মজুদ পণ্য হিসেবে ৫১.২৮ কোটি টাকা ও অ্যাকাউন্টস লেজারে ৩৪.৩০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ দুই হিসাবে মধ্যে পার্থক্য ১৬.৯৮ কোটি টাকা। যে কারনে মজুদ পণ্যের মূল্য ও অস্বিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি নিরীক্ষক।

আরও পড়ুন…….
আরামিটেও সহযোগি কোম্পানিতে অর্থ সরবরাহ নিয়ে জটিলতা
রবি থেকে বিনিয়োগ ফেরতে অপেক্ষা করতে হবে ১৭২ বছর

বিজনেস আওয়ার/১২ জানুয়ারি, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: