ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমদানি করা চাল বাজারে কবে আসবে?

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১
  • 52

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আমদানি করা চাল এখনও বাজারে আসেনি। কবে নাগাদ আসবে তা বলতে পারছে না কেউ। সরকার বলছে, অল্প সময়ের মধ্যেই আসবে এবং দামও কমবে। বেসরকারি পর্যায়ে ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় পাইপলাইনে ২০ লাখ টনের বেশি রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি দুভাবেই আমদানি শুরু হয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা চাল যথাযথভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য ৮ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রশাসক ও পুলিশ সুপার নিয়ে গঠিত মনিটরিং কমিটিতে থাকা জেলাগুলো হচ্ছে দিনাজপুর, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, যশোর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম।

চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ মোতাবেক কী পরিমাণ এলসি খোলা হচ্ছে, সে অনুযায়ী আমদানি হচ্ছে কিনা, কোনও কারণে কার্যক্রম বাধার ‍মুখে পড়ছে কিনা, কোথায় বিক্রি হচ্ছে এবং মাঠপর্যায়ে খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনিরিং করছেন কিনা, এ সব তদারকির জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ হাজার টন চাল দেশে এসেছে। যারা অনুমতি পেয়েছেন তাদের প্রত্যেককে শর্ত দেওয়া হয়েছে- আমদানির অনুমতিপত্র অনুমোদনের সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ ১৮ হাজার টনের আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে এখন পর্যন্ত বাজারে ভারতীয় চাল দেখা যায়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির খবরে এরইমধ্যে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরা পর্যায়ে এখনও কোনও প্রভাব পড়েনি।

বাদামতলী ও বাবুবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ নিজাম উদ্দিন জানান, সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত না নিলে দেশের চালের বাজার আরও অস্থির হতো। ভারত থেকে আমদানির ফলে বাজার স্থিতিশীল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে আসবে দাম।

তিনি আরও জানান, চালের দাম বেশি কমলেও ক্ষতি। তখন দেশের কৃষক উৎপাদনে উৎসাহ হারাবে। প্রতিমণ ধান এখন ১২শ টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধানের দাম ঠিক আছে বলেও জানান নিজাম উদ্দিন।

উল্লেখ্য, দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ (শর্তসাপেক্ষে) করেছে সরকার। সরকারিভাবেও ৩৪ টাকা কেজি দরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি পর্যায়ে বা জিটুজি ভিত্তিতে ভারত থেকে স্বর্ণা, গুটিসহ কয়েক জাতের মোটা চাল আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনের দাম পড়ছে ৪০৭ ডলার। অর্থাৎ প্রতিকেজির দাম ৩৪ টাকা ৫১ পয়সা। আতপ প্রতি টনের খরচ ৪১৭ ডলার ও কেজি ৩৫ দশমিক ১৬ টাকা। খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা হচ্ছে।

খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন, সরকারের নিজস্ব মজুদের জন্য প্রাথমিকভাবে আমদানির পরিমাণ ১০ লাখ টন। তবে সরকারি পর্যায়ে আমদানির সর্বোচ্চ সীমা এখনও ঠিক করা হয়নি।

চলতি বছর সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। সে অনুযায়ী ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সেদ্ধ, ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ টন আতপ এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে আট লাখ টন বোরো ধান কেনার কথা ছিল। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে গতবছরের ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির অনুমতি দেন।

বিজনেস আওয়ার/২৮ জানুয়ারি, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

আমদানি করা চাল বাজারে কবে আসবে?

পোস্ট হয়েছে : ০৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আমদানি করা চাল এখনও বাজারে আসেনি। কবে নাগাদ আসবে তা বলতে পারছে না কেউ। সরকার বলছে, অল্প সময়ের মধ্যেই আসবে এবং দামও কমবে। বেসরকারি পর্যায়ে ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় পাইপলাইনে ২০ লাখ টনের বেশি রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি দুভাবেই আমদানি শুরু হয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা চাল যথাযথভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য ৮ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রশাসক ও পুলিশ সুপার নিয়ে গঠিত মনিটরিং কমিটিতে থাকা জেলাগুলো হচ্ছে দিনাজপুর, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, যশোর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম।

চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ মোতাবেক কী পরিমাণ এলসি খোলা হচ্ছে, সে অনুযায়ী আমদানি হচ্ছে কিনা, কোনও কারণে কার্যক্রম বাধার ‍মুখে পড়ছে কিনা, কোথায় বিক্রি হচ্ছে এবং মাঠপর্যায়ে খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনিরিং করছেন কিনা, এ সব তদারকির জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ হাজার টন চাল দেশে এসেছে। যারা অনুমতি পেয়েছেন তাদের প্রত্যেককে শর্ত দেওয়া হয়েছে- আমদানির অনুমতিপত্র অনুমোদনের সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ ১৮ হাজার টনের আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে এখন পর্যন্ত বাজারে ভারতীয় চাল দেখা যায়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির খবরে এরইমধ্যে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরা পর্যায়ে এখনও কোনও প্রভাব পড়েনি।

বাদামতলী ও বাবুবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ নিজাম উদ্দিন জানান, সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত না নিলে দেশের চালের বাজার আরও অস্থির হতো। ভারত থেকে আমদানির ফলে বাজার স্থিতিশীল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে আসবে দাম।

তিনি আরও জানান, চালের দাম বেশি কমলেও ক্ষতি। তখন দেশের কৃষক উৎপাদনে উৎসাহ হারাবে। প্রতিমণ ধান এখন ১২শ টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধানের দাম ঠিক আছে বলেও জানান নিজাম উদ্দিন।

উল্লেখ্য, দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ (শর্তসাপেক্ষে) করেছে সরকার। সরকারিভাবেও ৩৪ টাকা কেজি দরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি পর্যায়ে বা জিটুজি ভিত্তিতে ভারত থেকে স্বর্ণা, গুটিসহ কয়েক জাতের মোটা চাল আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনের দাম পড়ছে ৪০৭ ডলার। অর্থাৎ প্রতিকেজির দাম ৩৪ টাকা ৫১ পয়সা। আতপ প্রতি টনের খরচ ৪১৭ ডলার ও কেজি ৩৫ দশমিক ১৬ টাকা। খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা হচ্ছে।

খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন, সরকারের নিজস্ব মজুদের জন্য প্রাথমিকভাবে আমদানির পরিমাণ ১০ লাখ টন। তবে সরকারি পর্যায়ে আমদানির সর্বোচ্চ সীমা এখনও ঠিক করা হয়নি।

চলতি বছর সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। সে অনুযায়ী ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সেদ্ধ, ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ টন আতপ এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে আট লাখ টন বোরো ধান কেনার কথা ছিল। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে গতবছরের ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির অনুমতি দেন।

বিজনেস আওয়ার/২৮ জানুয়ারি, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: