ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদাকে বিদেশে নিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চাইবে পরিবার

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 60

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও পুরোপুরি মুক্ত নন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দলটির নেতারা বলছেন, তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার কারাবাসের তিন বছর পূর্তি আজ। এ উপলক্ষে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরীসহ দেশে সব জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি প্রধানের লন্ডন যাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাকে বিদেশে যেতে দেয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানা গেছে। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ও তার জামিনের মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের সদস্যরাও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। চলতি সপ্তাহেই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানানো হবে।

দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২৫ মাস জেল খাটার পর গত বছরের ২৫ মার্চ জামিন পান। দুই মেয়াদে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর পর গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। এবার ছয় মাসের সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে।

সূত্র জানায়, নতুন জামিনের জন্য ফের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে তার পরিবার। জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে খালেদাকে বিদেশে নিতে লিখিত আবেদনে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চাইবেন তারা। সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি শুভেচ্ছা চিঠিও নিয়ে যাওয়া হবে।

আগামী ২৬ মার্চের আগেই মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করবে পরিবার। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চার আইনজীবী খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর একটি খসড়া আবেদন তৈরি করেছেন। চলতি সপ্তাহেই সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হবে।

তবে এসব বিষয়ে দলের নেতারা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তাদের বক্তব্য, দলীয় প্রধানের বিষয়ে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত তার পরিবারের। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ম্যাডাম ও তার পরিবার তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাইবেন। কারণ, তার আত্মীয়রা স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখিয়ে মুক্তির আবেদন করেছেন, সরকারও মানবিকভাবে তা গ্রহণ করেছে। এখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে এবং সরকার সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

গত ২৬ মার্চ শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পরও বসে নেই খালেদা জিয়ার পরিবার। সমঝোতার যে সূত্রে তার প্যারোলে মুক্তি হয়েছিল, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিতে সরকারের সেই সূত্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। এরইমধ্যে একবার বৈঠকও হয়েছে দুপক্ষের। কিন্তু দুপক্ষের কেউই এসব নিয়ে মুখ খুলছে না।

সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই করোনার অজুহাতে দেশের কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানো হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও পরিবারের সমঝোতার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এসকান্দার ব্রিটিশ হাইকমিশনে তার এবং বোন খালেদা জিয়ার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।

এর আগে কূটনৈতিক মহলও এ নিয়ে বেশ উদ্যোগী হয়। সরকার অনুমতি দিলে ব্রিটিশ হাইকমিশন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ভিসা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন জানিয়েছিলেন, সরকার অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য তারা ব্রিটেন যেতে ভিসা দেবেন।

সরাসরি রাজনীতি থেকে অবসরের কথা না বললেও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে দুটি শর্তের কথা জানানো হয়েছে। প্রথমত, লন্ডনে গিয়েও চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারবেন না তিনি। গুলশানে যেভাবে বাস করছেন লন্ডনে ঠিক তেমনি থাকবেন।

দ্বিতীয়ত, বিদেশিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকবেন। লন্ডনে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া ও সভা-সমাবেশে যোগদান থেকে বিরত থাকা এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে খালেদার পরিবার চায় শর্ত মেনেই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন তিনি। তবে খালেদা জিয়া চান শর্ত ছাড়াই লন্ডন যেতে।

এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, জামিনের পরে তিনি এখন পর্যন্ত কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। তাই এ ব্যাপারে সরকার কঠোর হবে না। তার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন। শারীরিক অবস্থার এখনও তেমন উন্নতি হয়নি। চলাফেরাও করতে পারছেন না। মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আবেদন তো করতেই হবে। তবে কখন করব সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিজনেস আওয়ার/০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

খালেদাকে বিদেশে নিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চাইবে পরিবার

পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেলেও পুরোপুরি মুক্ত নন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দলটির নেতারা বলছেন, তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এদিকে খালেদা জিয়ার কারাবাসের তিন বছর পূর্তি আজ। এ উপলক্ষে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগরীসহ দেশে সব জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি প্রধানের লন্ডন যাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তাকে বিদেশে যেতে দেয়ার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানা গেছে। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ও তার জামিনের মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের সদস্যরাও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। চলতি সপ্তাহেই পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানানো হবে।

দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২৫ মাস জেল খাটার পর গত বছরের ২৫ মার্চ জামিন পান। দুই মেয়াদে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর পর গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। এবার ছয় মাসের সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে।

সূত্র জানায়, নতুন জামিনের জন্য ফের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে তার পরিবার। জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে খালেদাকে বিদেশে নিতে লিখিত আবেদনে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চাইবেন তারা। সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি শুভেচ্ছা চিঠিও নিয়ে যাওয়া হবে।

আগামী ২৬ মার্চের আগেই মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করবে পরিবার। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চার আইনজীবী খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর একটি খসড়া আবেদন তৈরি করেছেন। চলতি সপ্তাহেই সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হবে।

তবে এসব বিষয়ে দলের নেতারা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তাদের বক্তব্য, দলীয় প্রধানের বিষয়ে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত তার পরিবারের। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ম্যাডাম ও তার পরিবার তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাইবেন। কারণ, তার আত্মীয়রা স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখিয়ে মুক্তির আবেদন করেছেন, সরকারও মানবিকভাবে তা গ্রহণ করেছে। এখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে এবং সরকার সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

গত ২৬ মার্চ শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পরও বসে নেই খালেদা জিয়ার পরিবার। সমঝোতার যে সূত্রে তার প্যারোলে মুক্তি হয়েছিল, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিতে সরকারের সেই সূত্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। এরইমধ্যে একবার বৈঠকও হয়েছে দুপক্ষের। কিন্তু দুপক্ষের কেউই এসব নিয়ে মুখ খুলছে না।

সরকারের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই করোনার অজুহাতে দেশের কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানো হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও পরিবারের সমঝোতার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এসকান্দার ব্রিটিশ হাইকমিশনে তার এবং বোন খালেদা জিয়ার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।

এর আগে কূটনৈতিক মহলও এ নিয়ে বেশ উদ্যোগী হয়। সরকার অনুমতি দিলে ব্রিটিশ হাইকমিশন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ভিসা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন জানিয়েছিলেন, সরকার অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য তারা ব্রিটেন যেতে ভিসা দেবেন।

সরাসরি রাজনীতি থেকে অবসরের কথা না বললেও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে দুটি শর্তের কথা জানানো হয়েছে। প্রথমত, লন্ডনে গিয়েও চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারবেন না তিনি। গুলশানে যেভাবে বাস করছেন লন্ডনে ঠিক তেমনি থাকবেন।

দ্বিতীয়ত, বিদেশিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকবেন। লন্ডনে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া ও সভা-সমাবেশে যোগদান থেকে বিরত থাকা এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে খালেদার পরিবার চায় শর্ত মেনেই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন তিনি। তবে খালেদা জিয়া চান শর্ত ছাড়াই লন্ডন যেতে।

এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, জামিনের পরে তিনি এখন পর্যন্ত কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। তাই এ ব্যাপারে সরকার কঠোর হবে না। তার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজন। শারীরিক অবস্থার এখনও তেমন উন্নতি হয়নি। চলাফেরাও করতে পারছেন না। মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আবেদন তো করতেই হবে। তবে কখন করব সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিজনেস আওয়ার/০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: