বিনোদন ডেস্ক : সময়টা ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। বসন্তের প্রথম সকাল। বাসন্তী রঙে সেজে গোটা শহর বসন্ত বরণে প্রস্তুত। কিন্তু সকাল ১০টায় শহরের সব রঙ আর উৎসব কেড়ে নিল ধানমন্ডির ৯/এ’র ৭২ নাম্বার বাসা।
খবর এলো, বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি আর নেই। এরপর থেকে হুমায়ুন ফরীদির এই শহরে নিয়ম করে বসন্ত নামে। এই কিংবদন্তি না থাকার ৯ বছর পূর্ণ হলো আজ।
১৯৬৪ সালে প্রথম কিশোরগঞ্জে মহল্লার মঞ্চনাটক দিয়ে শুরু। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করা নাটক ‘নিখোঁজ সংবাদ’। আর প্রথম সিনেমার ‘হুলিয়া’। এরপর হুমায়ুন ফরীদি আলো ছড়িয়েছেন তিন দশক।
হুমায়ুন ফরীদির অভিনীত চরিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত সংশপ্তক নাটকে ‘কানকাটা রমজান’ দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত হয়েছিলেন।
‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। এ ছাড়া নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা।
শুধু অভিনয় দিয়েই মানুষকে বিমোহিত করেছিলেন ডাকসাইটে এই অভিনেতা। তাকে বলা হয় অভিনেতাদের অভিনেতা, আদর্শ শিল্পী। তার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্বের ভক্ত কে না ছিলেন!
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। হুমায়ুন ফরীদির প্রকৃত নাম হুমায়ুন কামরুল ইসলাম।
ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন স্নাতক করতে।
কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম রেখে কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেছেন তিনি।
স্বাধীনতার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক জীবন শুরু করেন হুমায়ুন ফরীদি। এখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ হয়েছিল। অর্থনীতির খটমটে তত্ত্ব বাদ দিয়ে সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই সদস্যপদ পান ঢাকা থিয়েটারের। এই নাট্যদল থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার অভিনয়ের রঙগুলো। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক।
দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ও রোমান্টিক এ মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তখন এ বিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ ঘরে তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। নাম দেবযানি।
পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
বিজনেস আওয়ার/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১/এ