স্পোর্টস ডেস্ক : ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে হতাশার মাঝে আশার আলো জ্বালিয়েছিল লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজের জুটি। ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ দলকে টেনে অনেকটা পথ নিয়ে গেছেন তারা। লিটন-মিরাজের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ক্যারিবীয়দের প্রথম ইনিংসে গড়া ৪০৯ রানের কাছাকাছিও যাওয়া সম্ভব।
তবে লিটনের আউটের পর পরই সেই স্বপ্ন ভেঙেছে। সপ্তম উইকেটে ১২৬ রানের জুটি গড়ে লিটন সাজঘরে ফিরেছেন রাহকিম কর্নওয়ালের শিকার হয়ে। সেই ধাক্কায় ৯ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের ৯২তম ওভারে কর্নওয়াল লিটনের পর ফিরিয়েছেন নাঈম হাসানকেও।
লিটন ১৩৩ বলে করেন ৭১ রান। পরের ওভারে শেনন গ্যাব্রিয়েলের শিকার হন মেহেদি মিরাজও। ১৪০ বলে ৫৭ রান করেন মিরাজ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আলজেরি জোসেফ তুলে নিয়েছেন আবু জায়েদকে (১)। ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলাম। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমেছে ২৯৬ রানে। প্রথম ইনিংসে ক্যারিবীয়দের থেকে ১১৩ রানে পিছিয়ে রয়েছে টাইগাররা।
এর আগে টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে প্রথম দিন বাংলাদেশ করেছিল ১০৫ রান। মাত্র ৭১ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর ফলোঅনের শঙ্কা দেখা দিলেও শেষ বিকেলে আশা দেখান মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহীম। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দিন শেষের ২০.১ ওভারে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। আশা ছিল দ্বিতীয় দিনও তারা এ ধারা বজায় রাখবেন।
আজ শনিবার সকালের শুরুটাও দারুণ করেছিলেন মিঠুন ও মুশফিক। দিনের প্রথম ওভার থেকেই রানের খাতা সচল রেখে খেলতে থাকেন তারা। কিন্তু হুট করেই রাহকিম কর্নওয়ালের স্পিনে ছন্দপতন, ১৩ রানের ব্যবধানে মুশফিক-মিঠুনের বিদায়ে ফের বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
আগেরদিন ৬১ বলে ৫ রান মিঠুন আজ দিনের প্রথম ওভারেই দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভে হাঁকান নিজের ইনিংসের প্রথম চার। অন্যপ্রান্তে মুশফিকও খেলতে থাকেন ইতিবাচকভাবে। কোপটা বেশি পড়ছিল পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের ওপরই। তার গতিময় বোলিংয়ে রান তোলার কাজটা যেন সহজ হয় মুশফিক-মিঠুন জুটির।
এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানের বোলিংয়েও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের পরিকল্পনা ও ইচ্ছা পরিষ্কার করে দেন মুশফিক। পরে কর্নওয়াল আক্রমণে এলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মিডউইকেট দিয়ে চার মারেন মিঠুন। কিন্তু অতিরক্ষণাত্মক থেকে হুট করে আক্রমণাত্মক হওয়াটাই বিপদ ডেকে আনে মিঠুনের জন্য।
দিনের দশম ও ইনিংসের ৪৬তম ওভারের প্রথম বলটি আলতো করে লেগসাইডে খেলার চেষ্টা করেছিলেন মিঠুন। কিন্তু বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে চলে যায় শর্ট মিডউইকেটে। দারুণভাবে সেই বলটি তালুবন্দী করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। সমাপ্তি ঘটে মিঠুনের দুই বাউন্ডারির মারে খেলা ৮৬ বলে ১৫ রানের ইনিংসের।
মিঠুন ফেরার আগেই ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন মুশফিক। তবে হাফসেঞ্চুরির পর তেমন উদযাপন করেননি তিনি, ব্যাটটাও ওপরে তুলেননি, শুধু ড্রেসিংরুমের অভিবাদনের জবাবটা দিয়েছিলেন হাত উঁচিয়ে। মুশফিক যেন বোঝাতে চেয়েছিলেন, ফিফটিতেই শেষ হয়ে যায়নি তার কাজ।
কর্নওয়ালের বলে সুইপ করতে গিয়ে অল্পের জন্য লেগ বিফোরের হাত থেকে বেঁচে যান তিনি। এরপর তার ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া একটি বল বেরিয়ে যায় লেগস্লিপের একদম পাশ দিয়ে। দুইবার এমন হওয়ার পরেও সতর্ক হননি মুশফিক। ম্যাচের পরিস্থিতি না বুঝেই খেলেন রিভার্স সুইপ। ব্যাটের সামনে লেগে বল চলে যায় শর্ট কভারে দাঁড়ানো মায়ারসের হাতে এবং মুশফিক বিদায় নেন ৫৪ রানে।
১৫৫ রানে নেই ৬ উইকেট। ঢাকা টেস্টে ফলোঅন এড়াতে তখনও ৫৫ রান দরকার বাংলাদেশের। ব্যাটিং ধস থামাতে না পারলে সেটাও সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল না। তবে লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজের দায়িত্বশীলতায় ফলোঅন এড়িয়েছে টাইগাররা।
বিজনেস আওয়ার/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১/এ