ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এফডিআরের লক্ষ্যে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের উপকার নেই

ফিক্সড ডিপোজিটের (এফডিআর) উদ্দেশ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসা বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের কোন উপকার নেই। বরং তারল্য সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি হবে। এছাড়া এফডিআর করা এমন কোনো কঠিন কাজ না, যা বীমা কোম্পানির মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারীকে করতে হবে। এ কাজ বিনিয়োগকারীসহ সবাই নিজেরাই করতে পারে। আর শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে এফডিআরে শিল্পায়নে অর্থায়ন করার মূল উদ্দেশ্যও পূরন হয় না। তাই বীমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসা থেকে নিরুৎসাহিত করা উচিত বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উপকার না থাকলেও আইনে বীমা কোম্পানিকে লাইসেন্স পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা আছে। অন্যথায় জরিমানা গুণতে হয়। তারপরেও এখনো প্রায় ২৭টি বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্তির বাহির রয়েছে। এ তালিকায় ২০ বছরের পুরানো বীমা কোম্পানিও আছে। এছাড়া অধিকাংশ বীমা কোম্পানি জরিমানাও প্রদান করে না।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা আছে। এখন ওই কোম্পানির টাকা দরকার পড়ুক বা না পড়ুক। না আসলে আবার জরিমানা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। অথচ এফডিআরের লক্ষ্যে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের জন্য কোন উপকার নাই। তাই বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজন ছাড়া শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।

শেয়ারবাজারে গত ৯ বছরে বীমা খাতের পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স আইপিওর পুরোটাই এফডিআর এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। আর পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স পরিশোধ করেছে ঋণ। অথচ সেই ৩ বীমা কোম্পানির মধ্যে ২০১২ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। আর ২০১৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর পেশাদারিত্বের (প্রফেশনালিজম) অনেক ঘাটতি রয়েছে। তারা অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। এছাড়া বর্তমানে শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। সেখানে এফডিআর করতে শেয়ারবাজারের চলমান মন্দাবস্থায় বীমা কোম্পানির অর্থ উত্তোলন কতটা সঠিক হবে, তা বোধগম্য নয়। বরং আমি হলে এফডিআর ভেঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য বলতাম। এখন অনেক কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগ করার মতো অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো: ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, এফডিআর এর উদ্দেশ্যে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের কোন উপকার নেই। বরং ক্ষতি আছে। তারল্য সংকটের সৃষ্টি হবে। তাই শেয়ারবাজারের টাকা শেয়ারবাজারে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

চলমান তারল্য সংকটের মধ্যেই শেয়ারবাজার থেকে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ২৬ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহ করবে। যে কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উপকার নেই। বরং তারল্য সংকটের সৃষ্টি করবে। বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই যেখানে বিনিয়োগ করতে পারে, সেখানে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বড় অংশ ব্যাংকে এফডিআর করবে।

কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলনযোগ্য টাকার ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা বা ৭৪.২৫ শতাংশ এফডিআর করবে। ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিওতে ব্যয় হবে। অথচ এই কোম্পানির হাতেই ৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা নগদ রয়েছে। এরমধ্যে ৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এফডিআর, ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, ব্রোকারেজ হাউজে নগদ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও কোম্পানিতে নগদ ২১ লাখ টাকা রয়েছে।

এছাড়া কোম্পানিটি ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করবে ৫ কোটি ২১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে ২ কোটি টাকা। আর মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১ কোটি টাকা ও ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিতে ২ কোটি ২১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করবে।

বিজনেস আওয়ার/১৪ জুন, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এফডিআরের লক্ষ্যে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের উপকার নেই

পোস্ট হয়েছে : ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুন ২০২০

ফিক্সড ডিপোজিটের (এফডিআর) উদ্দেশ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসা বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের কোন উপকার নেই। বরং তারল্য সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি হবে। এছাড়া এফডিআর করা এমন কোনো কঠিন কাজ না, যা বীমা কোম্পানির মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারীকে করতে হবে। এ কাজ বিনিয়োগকারীসহ সবাই নিজেরাই করতে পারে। আর শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে এফডিআরে শিল্পায়নে অর্থায়ন করার মূল উদ্দেশ্যও পূরন হয় না। তাই বীমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসা থেকে নিরুৎসাহিত করা উচিত বলে মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উপকার না থাকলেও আইনে বীমা কোম্পানিকে লাইসেন্স পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা আছে। অন্যথায় জরিমানা গুণতে হয়। তারপরেও এখনো প্রায় ২৭টি বীমা কোম্পানি তালিকাভুক্তির বাহির রয়েছে। এ তালিকায় ২০ বছরের পুরানো বীমা কোম্পানিও আছে। এছাড়া অধিকাংশ বীমা কোম্পানি জরিমানাও প্রদান করে না।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স পাওয়ার ৩ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা আছে। এখন ওই কোম্পানির টাকা দরকার পড়ুক বা না পড়ুক। না আসলে আবার জরিমানা করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। অথচ এফডিআরের লক্ষ্যে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের জন্য কোন উপকার নাই। তাই বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজন ছাড়া শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।

শেয়ারবাজারে গত ৯ বছরে বীমা খাতের পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স তালিকাভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ও সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স আইপিওর পুরোটাই এফডিআর এবং ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। আর পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স পরিশোধ করেছে ঋণ। অথচ সেই ৩ বীমা কোম্পানির মধ্যে ২০১২ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। আর ২০১৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর পেশাদারিত্বের (প্রফেশনালিজম) অনেক ঘাটতি রয়েছে। তারা অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। এছাড়া বর্তমানে শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। সেখানে এফডিআর করতে শেয়ারবাজারের চলমান মন্দাবস্থায় বীমা কোম্পানির অর্থ উত্তোলন কতটা সঠিক হবে, তা বোধগম্য নয়। বরং আমি হলে এফডিআর ভেঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য বলতাম। এখন অনেক কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগ করার মতো অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো: ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, এফডিআর এর উদ্দেশ্যে বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে শেয়ারবাজারের কোন উপকার নেই। বরং ক্ষতি আছে। তারল্য সংকটের সৃষ্টি হবে। তাই শেয়ারবাজারের টাকা শেয়ারবাজারে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

চলমান তারল্য সংকটের মধ্যেই শেয়ারবাজার থেকে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ২৬ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহ করবে। যে কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উপকার নেই। বরং তারল্য সংকটের সৃষ্টি করবে। বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই যেখানে বিনিয়োগ করতে পারে, সেখানে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বড় অংশ ব্যাংকে এফডিআর করবে।

কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলনযোগ্য টাকার ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা বা ৭৪.২৫ শতাংশ এফডিআর করবে। ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিওতে ব্যয় হবে। অথচ এই কোম্পানির হাতেই ৫৪ কোটি ১২ লাখ টাকা নগদ রয়েছে। এরমধ্যে ৪৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এফডিআর, ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, ব্রোকারেজ হাউজে নগদ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ও কোম্পানিতে নগদ ২১ লাখ টাকা রয়েছে।

এছাড়া কোম্পানিটি ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করবে ৫ কোটি ২১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে ২ কোটি টাকা। আর মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১ কোটি টাকা ও ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিতে ২ কোটি ২১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বিনিয়োগ করবে।

বিজনেস আওয়ার/১৪ জুন, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: