বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে নতুন ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ‘জেড’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক কোম্পানিটিকে সচল করার পাশাপাশি আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সকল পরিচালকদের কাছে পাঠিয়েছে বিএসইসি।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের জন্য বিএসইসির মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন- অতিরিক্ত সচিব নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ, ড. মোহাম্মদ শরিয়ত উল্লাহ, ড. এ বি এম শহীদুল ইসলাম, ড. রেজওয়ানুল হক খান, ড. এ বি এম আশরাফুজ্জামান, ড. তৌফিক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ এহসান। এর মধ্যে অতিরিক্ত সচিব নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার ২ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে, ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। পুনর্গঠিত পর্ষদে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা পুনরায় পরিচালক হওয়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়া, কমিশন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। ওই নির্দেশনার আলোকেই কোম্পানিটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির পুনর্গঠন করা পরিচালনা পর্ষদ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর, এফডিআরসহ কোনো কিছুর পরিবর্তন করতে পারবেন না।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। একইসঙ্গে গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে ব্যর্থ হয়েছেন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।
এছাড়া কোম্পানিটি আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতেও ব্যর্থ হয়েছে। আর ২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির পর থেকে টানা ৫ বছর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। এখন পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না এবং প্রতিনিয়তই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে কোম্পানিটি। আর ২০১৬ সালের পর থেকে কোম্পানিটির ব্যর্থতার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ‘পুঁজিবাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। নানা কারণে বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম নেই এমন কোম্পানিগুলোকে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা মোর্শেদ, পরিচালক শারমিন আকতার ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক বাংলাদেশ শু ইন্ডাস্ট্রিজকে গত জুলাইয়ে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। আইন লঙ্ঘন করে কোনো ঘোষণা ছাড়া তাদের হাতে থাকা বিপুল শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ১২ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করায় এ জরিমানা করা হয়।
এছাড়া সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আইপিওতে আসার অভিযোগ রয়েছে।
২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১৬ হাজারটি। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬২.১৯ শতাংশ শেয়ার। প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৫.৬৭ শতাংশ এবং উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ২২.১৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/০১ মার্চ, ২০২১/এস