ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুধু বক্তৃতা দিয়ে অধিকার অর্জন হয় না : প্রধানমন্ত্রী

  • পোস্ট হয়েছে : ০২:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মার্চ ২০২১
  • 39

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শুধু বক্তৃতা দিয়ে অধিকার অর্জন হয় না। অধিকারটা আদায় করে নিতে হবে। আদায় করার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী অধিকার দাও, নারীর অধিকার দাও- বলে চিৎকার করে ও বক্তব্য দিলেই হবে না। খালি আন্দোলন করলেই অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। সেটা আদায় করতে যোগ্যতা লাগবে। সে যোগ্যতা শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আসবে। নারীরা যোগ্য হবে শিক্ষাদীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর তাই নারী শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। আমরা এখন উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর নারীদের যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সবচেয়ে বড় সফলতা।

শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যাতে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, জননী ও নারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। জাতীয় সংসদে স্পীকার, সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধী নেতা সব নারী। এভাবে রাজনীতিসহ বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ৯৬ সালের আগেও কোনো নারী ডিসি, এসপি, ইউএন ছিল না। এখন আছে। সবক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি সমাজের অর্ধেক যদি অকেজো থাকে সে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। আগে যেমন ধর্মের নামে মেয়েদের বন্দি করে রাখার প্রচেষ্টা ছিল, সেই অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তার পেছনে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অনেক অবদান রয়েছে। পর্দার আড়ালে থেকে তিনি (দেশের জন্য) কাজ করেছেন। কখনও কোনো প্রচার চাননি। আমার বাবা সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। দিনের পর দিন তিনি কারাগারে ছিলেন। মাকে দেখেছি তার পাশে থেকে কীভাবে সহযোগিতা করেছেন।

তিনি বলেন, তার নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে তিনি বাবাকে দেশের কাজে পূর্ণ মনোযোগের সুযোগ করে দিয়েছেন। ছেলে-মেয়ে মানুষ করা থেকে শুরু করে (বঙ্গবন্ধু যখন জেলে থাকতেন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সবার কার্যক্রম দেখা, আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলা- সবই তিনি (বেগম মুজিব) করতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত (মুজিবকে) দিয়েছিলেন, যা স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছিল। আমার বাবাকে দেখেছি, তিনি যথেষ্ট সম্মান দিতেন এবং গুরুত্ব দিতেন আমার মায়ের মতামতকে। যেকোনো অর্জনের পেছনেই একজন নারীর যে অবদান থাকে সেটাই সব থেকে বড় কথা।

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। নারী-পুরুষ সকলে মিলে প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে মেয়েরা আসতে পারতো না। বঙ্গবন্ধু মুজিব তাদের সুযোগ দিয়েছেন। আমরা এসে উচ্চ আদালতেও নারীদের নিয়ে এসেছি। সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ডসহ সব বাহিনীতে নারীদের অংশ নেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি কূটনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও নারীরা হচ্ছেন। স্থানীয় সরকারে নারীদের সংরক্ষিত আসন রেখেছি। ব্যাংকের এমডি, গভর্নর, খেলাধুলাসহ সব যায়গায় নারীদের সুযোগ আছে। ৯৬ সালে রাজশাহীতে প্রমীলা ফুটবল খেলা প্রচণ্ড বাধার মুখে হতে পারেনি, এখন সে অবস্থা নেই।

নারী উন্নয়নের সরকারের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২৫ প্রণয়ন করেছি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরোধ কর্মপরিকল্পনাসহ নারী সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কর্মজীবী নারী হোস্টেল করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি, আমার খামারের মাধ্যমে নারীরা যেন নিজের পায়ে দাড়াতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছি, এতে নারীকেও মালিকানা দেয়া হচ্ছে। ৩২০০ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে নারীদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন করে দিয়েছি।

বিজনেস আওয়ার/০৮ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শুধু বক্তৃতা দিয়ে অধিকার অর্জন হয় না : প্রধানমন্ত্রী

পোস্ট হয়েছে : ০২:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ মার্চ ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শুধু বক্তৃতা দিয়ে অধিকার অর্জন হয় না। অধিকারটা আদায় করে নিতে হবে। আদায় করার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী অধিকার দাও, নারীর অধিকার দাও- বলে চিৎকার করে ও বক্তব্য দিলেই হবে না। খালি আন্দোলন করলেই অধিকার আদায় হয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হবে। সেটা আদায় করতে যোগ্যতা লাগবে। সে যোগ্যতা শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আসবে। নারীরা যোগ্য হবে শিক্ষাদীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর তাই নারী শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। আমরা এখন উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর নারীদের যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। এটি সবচেয়ে বড় সফলতা।

শেখ হাসিনা বলেন, মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যাতে তারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, জননী ও নারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। জাতীয় সংসদে স্পীকার, সংসদ নেতা, উপনেতা, বিরোধী নেতা সব নারী। এভাবে রাজনীতিসহ বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ৯৬ সালের আগেও কোনো নারী ডিসি, এসপি, ইউএন ছিল না। এখন আছে। সবক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি সমাজের অর্ধেক যদি অকেজো থাকে সে সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। আগে যেমন ধর্মের নামে মেয়েদের বন্দি করে রাখার প্রচেষ্টা ছিল, সেই অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তার পেছনে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অনেক অবদান রয়েছে। পর্দার আড়ালে থেকে তিনি (দেশের জন্য) কাজ করেছেন। কখনও কোনো প্রচার চাননি। আমার বাবা সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। দিনের পর দিন তিনি কারাগারে ছিলেন। মাকে দেখেছি তার পাশে থেকে কীভাবে সহযোগিতা করেছেন।

তিনি বলেন, তার নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে তিনি বাবাকে দেশের কাজে পূর্ণ মনোযোগের সুযোগ করে দিয়েছেন। ছেলে-মেয়ে মানুষ করা থেকে শুরু করে (বঙ্গবন্ধু যখন জেলে থাকতেন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সবার কার্যক্রম দেখা, আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলা- সবই তিনি (বেগম মুজিব) করতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত (মুজিবকে) দিয়েছিলেন, যা স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছিল। আমার বাবাকে দেখেছি, তিনি যথেষ্ট সম্মান দিতেন এবং গুরুত্ব দিতেন আমার মায়ের মতামতকে। যেকোনো অর্জনের পেছনেই একজন নারীর যে অবদান থাকে সেটাই সব থেকে বড় কথা।

সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। নারী-পুরুষ সকলে মিলে প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। পাকিস্তান আমলে জুডিশিয়াল সার্ভিসে মেয়েরা আসতে পারতো না। বঙ্গবন্ধু মুজিব তাদের সুযোগ দিয়েছেন। আমরা এসে উচ্চ আদালতেও নারীদের নিয়ে এসেছি। সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ডসহ সব বাহিনীতে নারীদের অংশ নেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি কূটনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও নারীরা হচ্ছেন। স্থানীয় সরকারে নারীদের সংরক্ষিত আসন রেখেছি। ব্যাংকের এমডি, গভর্নর, খেলাধুলাসহ সব যায়গায় নারীদের সুযোগ আছে। ৯৬ সালে রাজশাহীতে প্রমীলা ফুটবল খেলা প্রচণ্ড বাধার মুখে হতে পারেনি, এখন সে অবস্থা নেই।

নারী উন্নয়নের সরকারের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২৫ প্রণয়ন করেছি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরোধ কর্মপরিকল্পনাসহ নারী সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কর্মজীবী নারী হোস্টেল করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ি, আমার খামারের মাধ্যমে নারীরা যেন নিজের পায়ে দাড়াতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছি, এতে নারীকেও মালিকানা দেয়া হচ্ছে। ৩২০০ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে নারীদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন করে দিয়েছি।

বিজনেস আওয়ার/০৮ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: