ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও কালো অধ্যায়

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
  • 39

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৪ মার্চ) দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে সংঘটিত এ গণহত্যায় শহীদ হন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অগণিত মানুষ। এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ত্রিশ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগের মহান স্বীকৃতির পাশাপাশি তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদের প্রতীক।’

রাষ্ট্রপতি এ দিনে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলার মহান স্বাধীনতা। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন ২৫ মার্চ কালরাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম গণহত্যার শিকার সব শহীদকে। এছাড়াও তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থকসহ দেশের জনগণকে, যাদের অসামান্য অবদান ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। অপারেশন সার্চলাইট নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতাকামী ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এর ব্যাপ্তি ছিল ঢাকাসহ সারাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানাসহ (বর্তমানে বিজিবি সদর দফতর) যশোর, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামে একযোগে গণহত্যা চলে। বিশ্বের সব গণমাধ্যমেই গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় এ গণহত্যার খবর। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, যার পথ ধরে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ত্রিশ লক্ষ মানুষ। হত্যা-নিপীড়নের ভয়াবহতায় এক কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতে। একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করা হয়েছে।’ তিনি আশা করেন, এ বিচার কার্যক্রম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘সব বাধা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে। দেশকে মধ্য আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার প্রত্যয়ে গৃহীত রূপকল্প-২০২১ এর সফল পরিসমাপ্তি হতে চলেছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন।’ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যুগসন্ধিক্ষণে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার মধ্য দিয়েই জাতি একাত্তরের গণহত্যায় জীবন দানকারী প্রতিটি প্রাণের প্রতি জানাতে পারে চিরন্তন শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও কালো অধ্যায়

পোস্ট হয়েছে : ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৪ মার্চ) দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে সংঘটিত এ গণহত্যায় শহীদ হন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অগণিত মানুষ। এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ত্রিশ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগের মহান স্বীকৃতির পাশাপাশি তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদের প্রতীক।’

রাষ্ট্রপতি এ দিনে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলার মহান স্বাধীনতা। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন ২৫ মার্চ কালরাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম গণহত্যার শিকার সব শহীদকে। এছাড়াও তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থকসহ দেশের জনগণকে, যাদের অসামান্য অবদান ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। অপারেশন সার্চলাইট নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতাকামী ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এর ব্যাপ্তি ছিল ঢাকাসহ সারাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানাসহ (বর্তমানে বিজিবি সদর দফতর) যশোর, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামে একযোগে গণহত্যা চলে। বিশ্বের সব গণমাধ্যমেই গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় এ গণহত্যার খবর। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, যার পথ ধরে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ত্রিশ লক্ষ মানুষ। হত্যা-নিপীড়নের ভয়াবহতায় এক কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতে। একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করা হয়েছে।’ তিনি আশা করেন, এ বিচার কার্যক্রম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘সব বাধা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে। দেশকে মধ্য আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার প্রত্যয়ে গৃহীত রূপকল্প-২০২১ এর সফল পরিসমাপ্তি হতে চলেছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছেন।’ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যুগসন্ধিক্ষণে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার মধ্য দিয়েই জাতি একাত্তরের গণহত্যায় জীবন দানকারী প্রতিটি প্রাণের প্রতি জানাতে পারে চিরন্তন শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মার্চ, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: