পতনের ধারা থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। নতুন বছরের মাঝখানে একবার বিরতি দিয়ে বাজার আবারও পতনের ধারায়। বাজারের এই নেতিবাচক প্রভাবের কারণে প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসান। ফলে বিনিয়োগকারীদের হতাশাও দিন দিন বাড়ছে। সাম্প্রতিক বাজার চিত্র লক্ষ্য করলে দেখা যায় চলতি মাসের শুরু থেকে বাজারে বড় পতন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ কোন কারণ ছাড়া এ ধরণের পতন স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয় বলে মনে করেছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাই চলমান বাজারের এই সার্ভিব পরিস্থিতিতে এবং করোনাকালীন সময়কে বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো :
১। বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা কিছুটা হলেও বাজার পতনের জন্য দায়ী। তারা যে কোন কারণে প্যানিক হয়ে শেয়ার কেনা বেচা করেন যা ঠিক নয়। বাজারে যে কোন বৈরী পরিস্থিতিতে তাদের ধৈর্য্য ধারণ করা উচিত।
২। আগামী এপ্রিল মাসে কোয়ার্টার ক্লোজিং আসবে। সেখানে দেখা যাবে যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগণ তারা তাদের বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবে যাতে করে তাদের কোয়ার্টারলি ভালো মুনাফা তারা প্রদর্শন করতে পারে। তাই এই সময়ে বিনিয়োগকারীগণকে বিনিয়োগ করতে হবে খুব ভেবেচিন্তে। ভালো পোর্টফোলিওর দিকে যদি এই সময় বিনিয়োগকারীগণ না যায় তাহলে তাদের বিনিয়োগটা ঝুঁকির মধ্যে চলে যাবার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
৩। ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের প্রতি মনোযোগ এই সময়ে বাড়াতে হবে। ফান্ডামেন্টাল শেয়ার বলতে যে সকল কোম্পানির ইপিএস ও এনএভি ভালো এবং যে সমস্ত কোম্পানিগুলো একটা ধারাবাহিক মুনাফা বাজারে ধরে রেখেছে সেই সকল কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীগণের আগ্রহ বাড়াতে হবে।
৪। তথ্য নির্ভর সংবাদ এর প্রতি বিনিয়োগকারীগণকে মনোযোগী হতে হবে এবং গুজবে কান দেয়া বন্ধ করতে হবে। যেহেতু সরকার থেকে বলা হয়েছে ব্যাংক খোলা থাকলে বাজারও খোলা থাকবে তাই এইটা নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। কোন রকম গুজবে কান দিয়ে যাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হোন সেদিকে তাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে।
৫। বিনিয়োগকারীগণকে বাজারের বিষয়ে শিক্ষিত করার জন্য বিআইসিএম কর্তৃক অনেকগুলো সচেতনতামূলক প্রশিক্ষন কার্যক্রম সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক নেয়া হয়েছে, যে কর্মসূচিগুলোতে বিনিয়োাগকারীগণকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে তারা বাজারে কোন কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে এবং কিভাবে তারা তাদের বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে। তাই বিনিয়োগকারীগণকে এই সমস্ত কর্মসূচিবতে অংশগ্রহণ করে বাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে তাদের আরো বেশি শিক্ষিত হতে হবে।
৬। সামনে এপ্রিল মাসে নতুন আইপিও আইনের ধারা অনুযায়ী বাজারে নতুন কোম্পানি আইপিওতে আসার পরিকল্পনা আছে। নতুন আইপিও আইনে যেহেতু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কোটা কমিয়ে আনা হয়েছে, সেহেতু বাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীরা এই সুবিধাটা ভোগ করবে। তাই সামনের দিকে নতুন আইপিও অধীনে যে সকল কোম্পাানিগুলো বাজারে অন্তর্ভুক্তির জন্য আসবে, সেখানে যদি বিনিয়োগাকারীগণ বিনিয়োগ করেন তাহলে তারা অনেকটাা ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন, কেননা নতুন আইপিও আইনে সাধারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বহুলাংশে প্রতিফলিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
৭। যেহেতু বর্তমান বীমা খাতে স্টক ডিভিডেন্টটা বেশি দেয়া হচ্ছে এবং বীমা খাতকে নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেকগুলো ভালো ভালো পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন এবং এই সেক্টরে যে সকল অনিয়ম ছিল সেগুলো দূর করা হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে বিনিয়োগকারীগন এই বীমা খাতে শেয়ারের প্রতি তাদের আগ্রহের পরিমাণটা বহুলাংশে বাড়িয়েছেন। বর্তমান করোনাকালীন এই নিম্নমুখি ধারার বাজারে বীমা খাতে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি বিনিয়োগকারীরা কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ করতে পারেন।
৮।করোনাকালের অর্থনৈতিক দৈন্য অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য দেশের অর্থনীতি এখন স্বাভাবিক হওয়ার পথে যাচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে দেশের উন্নয়নমূলক কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প উন্নয়নের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যার ফলাফল গত কয়েক সপ্তাহে নির্মাণখাত সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা নির্মাণখাত সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এই খাতের কোম্পানিগুলোও বিনিয়োগকারীগণকে এই মুহূর্তে এই সংকটকালীন বাজারে তাদের মুনাফা এই খাতে বিনিয়োাগ করে তাদের বিনিয়োগ কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারেন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক
মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম
এফসিএ, সিপিএ, সিএফএ