ঢাকা , সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারে আবারও অস্থিরতা

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ২০২১
  • 55

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৯ সালের শুরুতে কয়েক দিনের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৫৩৮৬ থেকে ৫৯৫০ পয়েন্টে উঠে যায়। এরপরে শুরু হয় টানা ধস। তৈরী হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা। অনেকটা সেই একইপথে চলছে বর্তমান শেয়ারবাজার। এবারও সূচকটি ৫৯০৯ পয়েন্টে উঠার পরেই টানা নামতে শুরু করেছে। যাতে আগের ন্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিশনের সমালোচনা শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গত কয়েকদিনের করোনা বৃদ্ধির প্রভাব শেয়ারবাজারে কিছুটা নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে পতন আরও আগে থেকে। সেটা সেই ১৭ জানুয়ারি থেকে। যে পতনে বীমার শেয়ারে নৈরাজ্যের শাস্তি না হওয়া, হাজার হাজার কোটি টাকা আগমনের স্বপ্ন দেখালেও তার প্রতিফলন না হওয়া, বিএসইসি চেয়ারম্যানের বীমা ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত এবং রবির শেয়ার ভালো হওয়ার বক্তব্যে বিনিয়োগ করে লোকসানে হতাশা হওয়া ভূমিকা রেখেছে।

দেখা গেছে, ২০১৯ সালের শুরুতে মূল্যসূচক ছিল ৫৪৬৫ পয়েন্ট। যা ২৪ জানুয়ারি বেড়ে হয় ৫৯৫০ পয়েন্ট। কিন্তু এরপরে পুরো মার্চ মাস জুড়ে চলে পতন। এছাড়া আরও পতনে ১০ এপ্রিল সূচকটি নেমে যায় ৫২৬২ পয়েন্টে। এই পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরী হয় অস্থিরতা। বিনিয়োগকারীরা নামে রাজপথে। বিভিন্ন স্লোগান দেয় কমিশনের বিরুদ্ধে।

একই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে ২ বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালে এসে। এ বছরের শুরুতে মূল্যসূচক ছিল ৫৪০২ পয়েন্ট। যা ১৪ জানুয়ারি ৫৯০৯ পয়েন্টে উঠে যায়। কিন্তু এখন রয়েছে ধারাবাহিক পতনে। যাতে ৩১ মার্চ সূচকটি নেমে এসেছে ৫২৭৮ পয়েন্টে। এবারও ধসের কারনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরী হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। যে কারনে এবার রাজপথে না নামলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিশনের সমালোচনা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

অথচ দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনে বিনিয়োগকারীদের অনেক আস্থা তৈরী হয়েছিল। এই কমিশনের শুরুতে অনিয়মকারীদের বড় বড় শাস্তি প্রদান, সংস্কার ও বিভিন্ন ইস্যুতে চেয়ারম্যানের আশার বাণি বিনিয়োগকারীদেরকে বাজারমূখী করে তোলে। এছাড়া বড় সমালোচনার জায়গা কিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভালো কোম্পানি আসার প্রত্যাশা তৈরী করে।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কমিশন আগের অবস্থান থেকে সড়ে এসেছে। এখন আর কমিশনকে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হতে দেখা যায় না। তাইতো গণমাধ্যমে বিমা খাতের শেয়ার কারসাজি নিয়ে দলিল প্রকাশের পরেও কাউকে শাস্তি পেতে হয়নি। এছাড়া ভালো কোম্পানি আসার প্রত্যাশায়ও ভাটা পড়েছে। এমনকি কমিশনের চেয়ারম্যানের একেক সময় একেক খাতের কোম্পানি ভালো করবে, এমন বক্তব্যে আশাবাদি হয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে লোকসান করে আস্থাহীনতা তৈরী হয়েছে। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের ৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, অদাবিকৃত ২০ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশসহ বিভিন্ন ফান্ড শেয়ারবাজারে আসছে বলে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তারও কোন বাস্তবে রুপ দেখতে না পেরে হতাশ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

কমিশনের কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরীর পাশাপাশি গত কয়েকদিনে করোনা মহামারির আকার পূণ:রায় বৃদ্ধিও শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত কয়েকদিন যাবৎ দেশে রেকর্ড করোনা রোগী সনাক্ত হচ্ছে। এছাড়া এক সংখ্যার ঘর থেকে মৃত্যুর পরিমাণ পঞ্চাশোর্ধ উঠে গেছে। এতে করে আবারও বিক্রির চাপ তৈরী হয়েছে।

প্রথম সারির এক ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, করোনার প্রভাব বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আসার খবরও চলমান বাজারে বড় ভূমিকা রাখছে। কমিশনের বিনিয়োগ আসার দাবিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরী হলেও সেই বিনিয়োগের খবর নেই। যাতে তৈরী হয়েছে হতাশা। তাই শেয়ারবাজারে অগ্রিম খবর দিয়ে প্রত্যাশা তৈরী করা ঠিক না। যখন আসবে, তখন বলাই ভালো।

বিজনেস আওয়ার/০১ এপ্রিল, ২০২১/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারে আবারও অস্থিরতা

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ২০১৯ সালের শুরুতে কয়েক দিনের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৫৩৮৬ থেকে ৫৯৫০ পয়েন্টে উঠে যায়। এরপরে শুরু হয় টানা ধস। তৈরী হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা। অনেকটা সেই একইপথে চলছে বর্তমান শেয়ারবাজার। এবারও সূচকটি ৫৯০৯ পয়েন্টে উঠার পরেই টানা নামতে শুরু করেছে। যাতে আগের ন্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিশনের সমালোচনা শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গত কয়েকদিনের করোনা বৃদ্ধির প্রভাব শেয়ারবাজারে কিছুটা নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে পতন আরও আগে থেকে। সেটা সেই ১৭ জানুয়ারি থেকে। যে পতনে বীমার শেয়ারে নৈরাজ্যের শাস্তি না হওয়া, হাজার হাজার কোটি টাকা আগমনের স্বপ্ন দেখালেও তার প্রতিফলন না হওয়া, বিএসইসি চেয়ারম্যানের বীমা ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত এবং রবির শেয়ার ভালো হওয়ার বক্তব্যে বিনিয়োগ করে লোকসানে হতাশা হওয়া ভূমিকা রেখেছে।

দেখা গেছে, ২০১৯ সালের শুরুতে মূল্যসূচক ছিল ৫৪৬৫ পয়েন্ট। যা ২৪ জানুয়ারি বেড়ে হয় ৫৯৫০ পয়েন্ট। কিন্তু এরপরে পুরো মার্চ মাস জুড়ে চলে পতন। এছাড়া আরও পতনে ১০ এপ্রিল সূচকটি নেমে যায় ৫২৬২ পয়েন্টে। এই পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরী হয় অস্থিরতা। বিনিয়োগকারীরা নামে রাজপথে। বিভিন্ন স্লোগান দেয় কমিশনের বিরুদ্ধে।

একই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে ২ বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালে এসে। এ বছরের শুরুতে মূল্যসূচক ছিল ৫৪০২ পয়েন্ট। যা ১৪ জানুয়ারি ৫৯০৯ পয়েন্টে উঠে যায়। কিন্তু এখন রয়েছে ধারাবাহিক পতনে। যাতে ৩১ মার্চ সূচকটি নেমে এসেছে ৫২৭৮ পয়েন্টে। এবারও ধসের কারনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরী হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। যে কারনে এবার রাজপথে না নামলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিশনের সমালোচনা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

অথচ দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনে বিনিয়োগকারীদের অনেক আস্থা তৈরী হয়েছিল। এই কমিশনের শুরুতে অনিয়মকারীদের বড় বড় শাস্তি প্রদান, সংস্কার ও বিভিন্ন ইস্যুতে চেয়ারম্যানের আশার বাণি বিনিয়োগকারীদেরকে বাজারমূখী করে তোলে। এছাড়া বড় সমালোচনার জায়গা কিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভালো কোম্পানি আসার প্রত্যাশা তৈরী করে।

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কমিশন আগের অবস্থান থেকে সড়ে এসেছে। এখন আর কমিশনকে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর হতে দেখা যায় না। তাইতো গণমাধ্যমে বিমা খাতের শেয়ার কারসাজি নিয়ে দলিল প্রকাশের পরেও কাউকে শাস্তি পেতে হয়নি। এছাড়া ভালো কোম্পানি আসার প্রত্যাশায়ও ভাটা পড়েছে। এমনকি কমিশনের চেয়ারম্যানের একেক সময় একেক খাতের কোম্পানি ভালো করবে, এমন বক্তব্যে আশাবাদি হয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে লোকসান করে আস্থাহীনতা তৈরী হয়েছে। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের ৮ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ, অদাবিকৃত ২০ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশসহ বিভিন্ন ফান্ড শেয়ারবাজারে আসছে বলে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তারও কোন বাস্তবে রুপ দেখতে না পেরে হতাশ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

কমিশনের কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরীর পাশাপাশি গত কয়েকদিনে করোনা মহামারির আকার পূণ:রায় বৃদ্ধিও শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত কয়েকদিন যাবৎ দেশে রেকর্ড করোনা রোগী সনাক্ত হচ্ছে। এছাড়া এক সংখ্যার ঘর থেকে মৃত্যুর পরিমাণ পঞ্চাশোর্ধ উঠে গেছে। এতে করে আবারও বিক্রির চাপ তৈরী হয়েছে।

প্রথম সারির এক ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, করোনার প্রভাব বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আসার খবরও চলমান বাজারে বড় ভূমিকা রাখছে। কমিশনের বিনিয়োগ আসার দাবিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরী হলেও সেই বিনিয়োগের খবর নেই। যাতে তৈরী হয়েছে হতাশা। তাই শেয়ারবাজারে অগ্রিম খবর দিয়ে প্রত্যাশা তৈরী করা ঠিক না। যখন আসবে, তখন বলাই ভালো।

বিজনেস আওয়ার/০১ এপ্রিল, ২০২১/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: