ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অভিনব উপায়ে করোনা সচেতনতা চালাচ্ছেন এএসপি শামিম আনোয়ার

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১
  • 93

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গী হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোটবড় বিভিন্ন আকৃতির অনেকগুলো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস৷ স্যানিটাইজার বা ডিজইনফ্যাক্ট্যান্ট ছিটিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করার বদলে পুলিশ তাদেরকে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু হঠাৎ পুলিশের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কেন!

জানা যায়, সরকার ঘোষিত লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে কৃত্রিমভাবে বানানো ঢাউস আকারের দুটি এবং ছোট আকারের অনেকগুলো করোনা ভাইরাসের পুত্তলিকা নিয়ে অভিনব উপায়ে করোনা সচেতনতা কার্যক্রমে নেমেছেন চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। এই করোনা মানুষের ফুসফুসকে অচল করে মৃত্যু ডেকে আনার বদলে বরং ঘুরেঘুরে মানুষকে মাস্ক পরিধান, স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ করোনার প্রযোজ্য সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে চলেছে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিদিন দেশেও বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে দেশব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সাধারণ জনগণের তরফে এই লকডাউন মানার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যেই চট্টগ্রামের এএসপির এই নজিরবিহীন উদ্যোগ।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাধীন পাহাড়তলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসের অনেকগুলো রেপ্লিকা নিয়ে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে হাঁটছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন কাজে বাইরে আসা মানুষকে করোনার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ক উপহার দিচ্ছিলেন।

পুলিশকে করোনার রেপ্লিকা নিয়ে হাঁটতে দেখে অনেক দোকানিকে নিজে থেকেই দোকান বন্ধ করে চলে যেতে দেখা যায়। পথচারীরা থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রাখা মাস্ক আনমনেই তুলে দিচ্ছিলেন নাকের উপরভাগ পর্যন্ত। পুলিশের সাবধানবাণীর পাশাপাশি করোনা ভাইরাস নিজেও ডাবিংকৃত গুরুগম্ভীর কন্ঠে ছন্দের তালে পরামর্শ দিয়ে চলছিলেন জনসাধারণকে।

“আমি করোনা ভাইরাস বলছি….
আমার থেকে নিরাপদ থাকতে যদি চাও, সামাজিক দূরত্ব মানো মুখে মাস্ক লাগাও।
সাবান দিয়ে হাত দুইটা ধুইলে ভাল করে, তোমাদের কাছ থেকে আমি যাব দূরে সরে।
স্বাস্থ্যবিধি মানো যদি আর কয়েকটা মাস, লোকালয় ছেড়ে আমি যাব বনবাস।”

জানা যায়, এই স্লোগান রচনা করেছেন সার্কেল এএসপি নিজেই। আর ডাবিংয়ে করোনা ভাইরাসের কণ্ঠ দিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আসাদুল আলম। এই ভাবনা মূলত করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা প্রসার করার জন্য। যদিও, সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণার পরেও মানুষ বাইরে যাচ্ছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে একটু ভয় দেখানোর কৌশল বলেও মনে করছেন কেউ কেউ!

অভিনব এই জনসচেতনতামূলক উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রাও। পথচারী আব্দুল জব্বার বলেন, কখনো নিজ চোখে করোনা ভাইরাসকে দেখতে পারব, আবার তারা নিজেদের কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সাবধান করবে, তা কোনদিন ভাবি নাই। এরকম সুন্দর উপায়ে মানুষকে বুঝানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

এ প্রসঙ্গে এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, শুধু মুখে বলে সচেতন করার বদলে করোনা ভাইরাসের রেপ্লিকা দেখিয়ে, করোনা ভাইরাসের কণ্ঠে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি আমরা। বিশেষ করে কম বয়সীদের মনে এটা বেশি করে দাগ কাটবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করছি এর ফলে সকলের আচরণে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের বিভিন্ন জায়গায় দিনব্যাপী চলা পুলিশের এই কর্মযজ্ঞ দেখে তাজ্জব বনে গেছেন উত্তর চট্টগ্রামবাসী! তাছাড়া ‘লক্ ডাউনে’র আবহে পুলিশের করোনা সচেতনতার এই কৌশল নজর কেড়েছে দেশবাসীর। প্রশংসা কুড়াচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ!

বিজনেস আওয়ার/০৭ এপ্রিল, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

অভিনব উপায়ে করোনা সচেতনতা চালাচ্ছেন এএসপি শামিম আনোয়ার

পোস্ট হয়েছে : ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১

বিজনেস আওয়ার ডেস্ক : চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গী হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোটবড় বিভিন্ন আকৃতির অনেকগুলো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস৷ স্যানিটাইজার বা ডিজইনফ্যাক্ট্যান্ট ছিটিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করার বদলে পুলিশ তাদেরকে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। কিন্তু হঠাৎ পুলিশের এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কেন!

জানা যায়, সরকার ঘোষিত লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে কৃত্রিমভাবে বানানো ঢাউস আকারের দুটি এবং ছোট আকারের অনেকগুলো করোনা ভাইরাসের পুত্তলিকা নিয়ে অভিনব উপায়ে করোনা সচেতনতা কার্যক্রমে নেমেছেন চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম। এই করোনা মানুষের ফুসফুসকে অচল করে মৃত্যু ডেকে আনার বদলে বরং ঘুরেঘুরে মানুষকে মাস্ক পরিধান, স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ করোনার প্রযোজ্য সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে চলেছে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিদিন দেশেও বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে দেশব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হলেও সাধারণ জনগণের তরফে এই লকডাউন মানার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যেই চট্টগ্রামের এএসপির এই নজিরবিহীন উদ্যোগ।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাধীন পাহাড়তলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসের অনেকগুলো রেপ্লিকা নিয়ে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে হাঁটছেন। এ সময় তারা বিভিন্ন কাজে বাইরে আসা মানুষকে করোনার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ক উপহার দিচ্ছিলেন।

পুলিশকে করোনার রেপ্লিকা নিয়ে হাঁটতে দেখে অনেক দোকানিকে নিজে থেকেই দোকান বন্ধ করে চলে যেতে দেখা যায়। পথচারীরা থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রাখা মাস্ক আনমনেই তুলে দিচ্ছিলেন নাকের উপরভাগ পর্যন্ত। পুলিশের সাবধানবাণীর পাশাপাশি করোনা ভাইরাস নিজেও ডাবিংকৃত গুরুগম্ভীর কন্ঠে ছন্দের তালে পরামর্শ দিয়ে চলছিলেন জনসাধারণকে।

“আমি করোনা ভাইরাস বলছি….
আমার থেকে নিরাপদ থাকতে যদি চাও, সামাজিক দূরত্ব মানো মুখে মাস্ক লাগাও।
সাবান দিয়ে হাত দুইটা ধুইলে ভাল করে, তোমাদের কাছ থেকে আমি যাব দূরে সরে।
স্বাস্থ্যবিধি মানো যদি আর কয়েকটা মাস, লোকালয় ছেড়ে আমি যাব বনবাস।”

জানা যায়, এই স্লোগান রচনা করেছেন সার্কেল এএসপি নিজেই। আর ডাবিংয়ে করোনা ভাইরাসের কণ্ঠ দিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আসাদুল আলম। এই ভাবনা মূলত করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা প্রসার করার জন্য। যদিও, সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণার পরেও মানুষ বাইরে যাচ্ছেন, সেখানে দাঁড়িয়ে একটু ভয় দেখানোর কৌশল বলেও মনে করছেন কেউ কেউ!

অভিনব এই জনসচেতনতামূলক উদ্যোগে খুশি স্থানীয়রাও। পথচারী আব্দুল জব্বার বলেন, কখনো নিজ চোখে করোনা ভাইরাসকে দেখতে পারব, আবার তারা নিজেদের কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সাবধান করবে, তা কোনদিন ভাবি নাই। এরকম সুন্দর উপায়ে মানুষকে বুঝানোর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ।

এ প্রসঙ্গে এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, শুধু মুখে বলে সচেতন করার বদলে করোনা ভাইরাসের রেপ্লিকা দেখিয়ে, করোনা ভাইরাসের কণ্ঠে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি আমরা। বিশেষ করে কম বয়সীদের মনে এটা বেশি করে দাগ কাটবে বলে আমি মনে করি। আমি আশা করছি এর ফলে সকলের আচরণে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানের বিভিন্ন জায়গায় দিনব্যাপী চলা পুলিশের এই কর্মযজ্ঞ দেখে তাজ্জব বনে গেছেন উত্তর চট্টগ্রামবাসী! তাছাড়া ‘লক্ ডাউনে’র আবহে পুলিশের করোনা সচেতনতার এই কৌশল নজর কেড়েছে দেশবাসীর। প্রশংসা কুড়াচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ!

বিজনেস আওয়ার/০৭ এপ্রিল, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: