রেজোয়ান আহমেদ : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ২০২০ সালের ব্যবসায় ভালো লভ্যাংশ করলেও তাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। তবে নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া এবং দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ দেয় না, এমন কোম্পানিতেই আবার তাদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। যে কারনে লোকসানের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে বিনিয়োগকারীদের চিন্তার পরিবর্তন করা দরকার বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকগুলো প্রতিবছরই ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করে। দু-একটি ছাড়া কোন ব্যাংকই ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করে না। তারপরেও ব্যাংকের শেয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় থাকে না। অথচ অন্য যেকোন খাতের তুলনায় ব্যাংকের শেয়ার দরের তুলনায় লভ্যাংশের (ডিভিডেন্ড ইল্ড) হার বেশি।
এক বড় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ব্যাংকগুলো খুবই ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। তারপরেও বিনিয়োগকারীরা কেনো ব্যাংকে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, সেটা বোধগম্য না। তবে আমরা আমাদের ফান্ডগুলো থেকে বিনিয়োগ করছি। ব্যাংকের মতো এতো ভালো রিটার্ন অন্য কোন খাতে পাওয়া সম্ভব না।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সেদিকে যেতে চায় না। তারা মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে গুজবে নির্ভর বিনিয়োগে যায়। বিনিয়োগকারীদেরকে এই চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে।
দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫টির পর্ষদ লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা আয়োজন করেছে। এরমধ্যে দূর্বল আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের পর্ষদ আগের ধারাবাহিকতায় লোকসানের কারনে লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আর একমাত্র আইএফআইসি ব্যাংকের পর্ষদ ১০ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বাকি ১৩টির পর্ষদ ১০ শতাংশ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেওয়া সর্বোচ্চ সীমা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক। এ ব্যাংকটির পর্ষদ ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরপরের অবস্থানে থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পর্ষদ ৩০ শতাংশ ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা উত্তরা ব্যাংকের পর্ষদ ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, অন্যসব কোম্পানির তুলনায় ব্যাংকের আর্থিক হিসাব স্বচ্ছ। এই খাতটি থেকে প্রতিবছর ভালো লভ্যাংশ দেওয়া হয়। যে ধারাবাহিকতা এবছরও রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বাজারের অবস্থায় অন্য যেকোন খাতের তুলনায় ব্যাংক বিনিয়োগযোগ্য। লভ্যাংশের তুলনায় ব্যাংকের মতো কম দামে অন্য কোন শেয়ার নেই। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা চায় দুইদিনে ক্যাপিটাল গেইন করতে। যা করতে গিয়ে লোকসানে পড়ে আবোল তাবোল বলে এবং বিভিন্ন জনকে দোষারোপ করে।
নিম্নে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের তথ্য তুলে ধরা হল-
কোম্পানির নাম | লভ্যাংশের হার | শেয়ার দর (টাকা) | রেকর্ড ডেট |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ৩৫% (১৭.৫% নগদ ও ১৭.৫% বোনাস) | ৩৯.৮০ | ৫ মে |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ৩০% (১৫% নগদ ও ১৫% বোনাস) | ৫৬.৯০ | ২৮ মার্চ |
উত্তরা ব্যাংক | ২৫% (১২.৫% নগদ ও ১২.৫% বোনাস) | ২৫.২০ | ২ মে |
সিটি ব্যাংক | ২২.৫০% (১৭.৫০% নগদ ও ৫% বোনাস) | ২৩.৭০ | ১৩ এপ্রিল |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ২০% (১২.৫% নগদ ও ৭.৫০% বোনাস) | ১১.১০ | ১২ এপ্রিল |
যমুনা ব্যাংক | ১৭.৫০% নগদ | ১৮.৮০ | ২০ এপ্রিল |
প্রাইম ব্যাংক | ১৫% নগদ | ১৭ | ২৫ এপ্রিল |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ১৫% (১০% নগদ ও ৫% বোনাস) | ১১.২০ | ৫ এপ্রিল |
ব্র্যাক ব্যাংক | ১৫% (১০% নগদ ও ৫% বোনাস) | ৪১.৬০ | ৪ মে |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ১২% (৭% নগদ ও ৫% বোনাস) | ২০ | ৪ এপ্রিল |
ওয়ান ব্যাংক | ১১.৫০% (৬% নগদ ও ৫.৫% বোনাস) | ১০.৩০ | ১১ মে |
ব্যাংক এশিয়া | ১০% নগদ | ১৬.৩০ | ৮ এপ্রিল |
পূবালি ব্যাংক | ১২.৫০% নগদ | ২৩.৮০ | ৯ মে |
আইএফআইসি ব্যাংক | ৫% বোনাস | ১০.২০ | ২৫ এপ্রিল |
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক | ০০ | ৩.৭০ | ১২ মে |
বিজনেস আওয়ার/১৮ এপ্রিল, ২০২১/আরএ