বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বর্তমানে বেকার এম আশিক রহমানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। তবে তিনি যোগ্য না হওয়ায় সেই নিয়োগে অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন আশিক। তাই এবার এক ধাপ নিচে নেমে প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) পদে আবেদন করেন এবং একই প্রক্রিয়ায় এবারও ডিএসইর পর্ষদের অনুমোদন পেয়েছেন।
গত ৪ মে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় আশিককে সিআরও পদে নিয়োগ দিয়েছে। এরপরে ৬ মে তার অনুমোদন চেয়ে কমিশনে চিঠি দিয়েছে।
ডিএসইর এই পর্ষদই আশিক রহমানকে যোগ্য বিবেচনায় এমডি পদে নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তিনি যোগ্য নন বলে জানায় কমিশন।
যে কারনে কমিশন শেয়ারবাজারের স্বার্থে আশিক রহমানকে গতবার এমডি পদে নিয়োগ দেয়নি। বিএসইসি জানায়, ডিএসই চালানোর মতো পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই আশিক রহমানের। এছাড়া সে দেশের প্রধান শেয়ারবাজারটি চালাতে অক্ষম বলে জানায়।
এছাড়া ওইসময় ডিএসইর এমডি পদে আবেদনকারীরা পূণ:রায় আবেদন করলে, তা গ্রহণ না করার জন্য ডিএসইকে মৌখিকভাবে বলে দেন কমিশন। এ হিসেবে ওই সময়ে আশিক রহমান আবেদন করায়, এবার তার আবেদন গ্রহণ না করার জন্য বলা হয়েছিল।
বিএসইসির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কমিশন এবারও শেয়ারবাজারের স্বার্থে কোন অযোগ্য ব্যক্তির নিয়োগে অনুমোদন দেবে না। যোগ্য হলেই নিয়োগ পাওয়া সম্ভব। একজন ব্যক্তির এমডি পদে ব্যর্থ হয়ে তার নিম্নোস্থ পদে চাকরীর আবেদন করাটা ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না বলে যোগ করেন তিনি।
আশিক রহমানের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকলেও কাজী সানাউল হকের ন্যায় তাকে এমডি হিসেবে নিয়োগে একজন পরিচালক শক্ত ভূমিকা রাখেন বলে ওইসময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। যার নেতৃত্বে আশিককে ডিএসইর পর্ষদ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তবে এবারও দু-একজন সিআরও পদে আশিক রহমানসহ অন্য প্রার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারপরেও ডিএসইর পর্ষদ এমডি পদে ব্যর্থ আশিকের মধ্যে লুকায়িত বিশেষ যোগ্যতা দেখতে পেয়েছেন।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজারের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে একজনের এমডি পদে ব্যর্থ হওয়ার পরে, তার নিচের পদে নেমে আসা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। যে প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক চুক্তি রয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে নিয়োগের মাধ্যমে ডিএসইর সম্মান কতটা সমুন্নত থাকে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সিআরও নিয়োগ প্রক্রিয়ার সুপারিশে এনআরসি কমিটির সদস্যরা বলেছেন, যারা সিআরও পদে আবেদন করেছেন, তাদের যোগ্যতা হতাশাজনক। ডিএসই এমডি, সিআরও ও অন্যান্য পদে যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছে না। এর কারন অনুসন্ধানে ডিএসইর বিষয়টি চিন্তা করা দরকার।
এতে আরও বলা হয়েছে, ডিএসইর এইচআরডি বিভাগের সিভি দিয়ে মূল্যায়ন প্রার্থীর যোগ্যতার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে না। তাই প্রার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে ডিএসইর এমডিকে এইচআরডি বিভাগের প্রধান, সিওও/জিএম এর কাছে মূল্যায়িত রিপোর্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে।
এছাড়া এনআরসি কমিটির আরেক সদস্য বলেছেন, যারা সিআরও পদে প্রার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়ন পেপারস তৈরী করেছে, তাদের এনআরসি কমিটির কাছে ব্যাখ্যা করা উচিত। যে কিসের ভিত্তিতে তারা প্রার্থীদের মূল্যায়ন রিপোর্ট করেছে।
মূল্যায়িত রিপোর্ট অনুযায়ি, ডিএসইর সিআরও পদে ১৪ জন আবেদন করেন। এরমধ্যে আশিক রহমানের সঙ্গে রূপালি ব্যাংকের সিএফও ও জিএম শওকত জাহান খান (এফসিএমএ) ও আক্তারুজ্জামান (এফসিএমএ, এফসিএস) এর সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। এরমধ্যে আশিক রহমান ও আক্তারুজ্জামানের শুধুমাত্র ‘ব্যাচেলর ইন বিজেনস, অর্থনীতি বা আইন ও ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা’ এবং ‘প্রফেশনাল ডিগ্রী’র মধ্যে ১টি শর্ত পরিপালন হয়। তবে রূপালি ব্যাংকের সিএফও ও জিএম শওকত জাহান খানের যোগ্যতা ঊভয় শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে।
তবে এই আশিক রহমানই এর আগে সিআরও পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাক্ষান করেন। এমডি পদে নিয়োগের আগে আশিক রহমান সিআরও পদে আবেদন করেছিলেন। যাকে ওইবারও ডিএসইর পর্ষদ নিয়োগ দিয়েছিল। তবে এমডি পদ খালি হতে যাওয়ার খবরে তিনি সিআরও পদে অনাগ্রহী হন। তিনিই আবার সিআরও পদে চাকরীর জন্য আবেদন করেছেন।
বিজনেস আওয়ার/০৮ মে, ২০২১/এ