ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএসইসির সঙ্গে লুব-রেফের প্রতারণা

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেয় বিএনও ব্র্যান্ডের লুব-রেফ বাংলাদেশ। যা কোম্পানিটির কাছে কমিশনের স্থায়ী সম্পদের অবচয়ের বিস্তারিত চাওয়ার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে। তারা আর্থিক হিসাবে যেভাবে অবচয় চার্জ করেছে, তার সঙ্গে কমিশনকে ব্যাখ্যা দেওয়ার তথ্যের কোন মিল নেই।

অথচ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ২সিসি এর অধীনে ১১ নং শর্তে বলা হয়েছে, আইপিওতে যেকোন ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রদান আইপিও বাতিল হওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। এছাড়া আবেদনের ২৫% অর্থ বা শেয়ার ক্ষতিপূরন দেবে। যা বিএসইসির হিসাবে জমা করা হবে। এছাড়াও আইন দ্ধারা অন্যান্য শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।

লুব-রেফ বাংলাদেশ এরইমধ্যে আর্থিক হিসাবে অবচয় এবং একই বিষয়ে কমিশনকে কোয়ারির আলোকে ভিন্ন তথ্য প্রদানের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত তথ্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য কমিশন থেকে প্রায় সব কোম্পানিকেই বিভিন্ন ইস্যুতে কোয়ারি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কমিশন কোয়ারি দেওয়ার বিষয়ে পরিস্কার হতে চায়। কারন সব বিষয়ে প্রসপেক্টাসে বিস্তারিত থাকে না। আর ওইসব বিষয়ে কমিশন বিস্তারিত জানতে চায়। এক্ষেত্রে প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত হিসাবের সঙ্গে কোয়ারির জবাবেব ভিন্ন ফলাফল হওয়ার সুযোগ নেই।

বিএসইসির পক্ষ থেকে লুব-রেফের অবচয় গণনার তথ্য চাওয়ার প্রেক্ষিতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রতারণার আশ্রয় নেয়। বিএসইসির অবচয়ের কোয়ারির আলোকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেনা স্থায়ী সম্পদের উপরে ব্যবহার উপযোগি হওয়ার দিন থেকে অবচয় চার্জ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা করা হয়নি। তারা ওই অর্থবছরে কেনা (ক্যাপিটাল ওয়ার্ক ইন প্রসেস থেকে স্থানান্তরসহ) ৫৫ কোটি ১২ লাখ ৩১ হাজার ৭৫০ টাকার স্থায়ী সম্পদের উপরে ১ টাকারও অবচয় চার্জ করেনি।

লুব-রেফ কর্তৃপক্ষ বিএসইসির কোয়ারিতে জানায়, তারা ওই অর্থবছরে কেনা স্থায়ী সম্পদের মধ্যে প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজের উপর ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৭ টাকা, ভেহিক্যালের উপর ১৩৯ টাকা ও ফ্যাক্টরী ইক্যুপমেন্টের উপরে ৮ হাজার ৪৮৬ টাকার অবচয় চার্জ করেছে। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে কেনা স্থায়ী সম্পদগুলোর উপরে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৮২ টাকার অবচয় চার্জ করা হয়েছে।

(বিএসইসির কোয়ারির আলোকে নতুন স্থায়ী সম্পদে অবচয়ের বিষয়ে লুব-রেফের জবাব)

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেনা ভেহিক্যাল, প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ ও ফ্যাক্টরী ইক্যুপমেন্টের উপরে অবচয় চার্জ করা হয়নি। যাতে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে অবচয়বাবদ ব্যয় দেখানো হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার জন্য আর্থিক হিসাবে মিথ্যা তথ্য প্রদানের কথা শোনা যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন তথ্য চাওয়ার পরে, সে বিষয়ে আর্থিক হিসাবের সঙ্গে ভিন্ন তথ্য দেওয়ার ঘটনা লুব-রেফের আগে ঘটেছে কিনা, তা জানা নেই। তাই কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখতে পারে কমিশন। একইসঙ্গে তারা আরও কোন অনিয়ম করেছে কিনা, তাও যাচাই করে দেখা যেতে পারে।

দেখা গেছে, ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে (রিডিউসিং) অবচয় চার্জ করা লুব-রেফে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরুতে ৩০৫৭১২০১ টাকার ভেহিক্যাল ও ওই সম্পদের উপরে ২৩৬২১৬৪৫ টাকার পূঞ্জীভূত অবচয় ছিল। এখন এই সম্পদের উপরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অবচয় হয় (৩০৫৭১২০১-২৩৬২১৬৪৫*২০%)= ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯১১ টাকা। আর এই পরিমাণ অবচয়ই চার্জ করেছে লুব-রেফ কর্তৃপক্ষ। অথচ তারা ওই অর্থবছরের মাঝে কেনা ১৬৯২০০ টাকার ভেহিক্যালের উপরেও অবচয় চার্জ করেছে বলে উল্লেখ করেছে।

(প্রসপেক্টাসে প্রকাশিত হিসাব)

একইভাবে প্লান্ট অ্যা্ন্ড মেশিনারীজ ও ফ্যাক্টরী ইক্যুপমেন্টের উপরে শুধুমাত্র বছরের শুরুর সম্পদে অবচয় চার্জ করা হয়েছে। ওই বছরে কেনা এ জাতীয় সম্পদে অবচয় চার্জ করা হয়নি। তারপরেও বিএসইসি বিস্তারিত চাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কেনা সম্পদেও চার্জ করেছে বলে উল্লেখ করেছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোম্পানিটির আইপিও ফাইল না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে জানতে লুব-রেফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মফিজুর রহমানের ২৩ মে যোগাযোগ করলে ব্যস্ততার কথা বলে। পরে সেদিন অবচয়ের বিষয়ে জানতে চেয়ে লিখিত দিলেও জবাব দেয় না। এরপরের দিন (২৪ মে) যোগাযোগ করলে বলে, বিষয়টি এখনো দেখতে পারেননি। পরে জানাবেন। এরপরের দিন (২৫ মে) জবাব চেয়ে ম্যাসেজ দিলেও তিনি প্রতিউত্তর করেননি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মে, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “বিএসইসির সঙ্গে লুব-রেফের প্রতারণা

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিএসইসির সঙ্গে লুব-রেফের প্রতারণা

পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেয় বিএনও ব্র্যান্ডের লুব-রেফ বাংলাদেশ। যা কোম্পানিটির কাছে কমিশনের স্থায়ী সম্পদের অবচয়ের বিস্তারিত চাওয়ার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে। তারা আর্থিক হিসাবে যেভাবে অবচয় চার্জ করেছে, তার সঙ্গে কমিশনকে ব্যাখ্যা দেওয়ার তথ্যের কোন মিল নেই।

অথচ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ২সিসি এর অধীনে ১১ নং শর্তে বলা হয়েছে, আইপিওতে যেকোন ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রদান আইপিও বাতিল হওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। এছাড়া আবেদনের ২৫% অর্থ বা শেয়ার ক্ষতিপূরন দেবে। যা বিএসইসির হিসাবে জমা করা হবে। এছাড়াও আইন দ্ধারা অন্যান্য শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।

লুব-রেফ বাংলাদেশ এরইমধ্যে আর্থিক হিসাবে অবচয় এবং একই বিষয়ে কমিশনকে কোয়ারির আলোকে ভিন্ন তথ্য প্রদানের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত তথ্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য কমিশন থেকে প্রায় সব কোম্পানিকেই বিভিন্ন ইস্যুতে কোয়ারি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কমিশন কোয়ারি দেওয়ার বিষয়ে পরিস্কার হতে চায়। কারন সব বিষয়ে প্রসপেক্টাসে বিস্তারিত থাকে না। আর ওইসব বিষয়ে কমিশন বিস্তারিত জানতে চায়। এক্ষেত্রে প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত হিসাবের সঙ্গে কোয়ারির জবাবেব ভিন্ন ফলাফল হওয়ার সুযোগ নেই।

বিএসইসির পক্ষ থেকে লুব-রেফের অবচয় গণনার তথ্য চাওয়ার প্রেক্ষিতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রতারণার আশ্রয় নেয়। বিএসইসির অবচয়ের কোয়ারির আলোকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেনা স্থায়ী সম্পদের উপরে ব্যবহার উপযোগি হওয়ার দিন থেকে অবচয় চার্জ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা করা হয়নি। তারা ওই অর্থবছরে কেনা (ক্যাপিটাল ওয়ার্ক ইন প্রসেস থেকে স্থানান্তরসহ) ৫৫ কোটি ১২ লাখ ৩১ হাজার ৭৫০ টাকার স্থায়ী সম্পদের উপরে ১ টাকারও অবচয় চার্জ করেনি।

লুব-রেফ কর্তৃপক্ষ বিএসইসির কোয়ারিতে জানায়, তারা ওই অর্থবছরে কেনা স্থায়ী সম্পদের মধ্যে প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজের উপর ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৭ টাকা, ভেহিক্যালের উপর ১৩৯ টাকা ও ফ্যাক্টরী ইক্যুপমেন্টের উপরে ৮ হাজার ৪৮৬ টাকার অবচয় চার্জ করেছে। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে কেনা স্থায়ী সম্পদগুলোর উপরে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৮২ টাকার অবচয় চার্জ করা হয়েছে।

(বিএসইসির কোয়ারির আলোকে নতুন স্থায়ী সম্পদে অবচয়ের বিষয়ে লুব-রেফের জবাব)

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেনা ভেহিক্যাল, প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ ও ফ্যাক্টরী ইক্যুপমেন্টের উপরে অবচয় চার্জ করা হয়নি। যাতে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে অবচয়বাবদ ব্যয় দেখানো হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার জন্য আর্থিক হিসাবে মিথ্যা তথ্য প্রদানের কথা শোনা যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন তথ্য চাওয়ার পরে, সে বিষয়ে আর্থিক হিসাবের সঙ্গে ভিন্ন তথ্য দেওয়ার ঘটনা লুব-রেফের আগে ঘটেছে কিনা, তা জানা নেই। তাই কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখতে পারে কমিশন। একইসঙ্গে তারা আরও কোন অনিয়ম করেছে কিনা, তাও যাচাই করে দেখা যেতে পারে।

দেখা গেছে, ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে (রিডিউসিং) অবচয় চার্জ করা লুব-রেফে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরুতে ৩০৫৭১২০১ টাকার ভেহিক্যাল ও ওই সম্পদের উপরে ২৩৬২১৬৪৫ টাকার পূঞ্জীভূত অবচয় ছিল। এখন এই সম্পদের উপরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অবচয় হয় (৩০৫৭১২০১-২৩৬২১৬৪৫*২০%)= ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৯১১ টাকা। আর এই পরিমাণ অবচয়ই চার্জ করেছে লুব-রেফ কর্তৃপক্ষ। অথচ তারা ওই অর্থবছরের মাঝে কেনা ১৬৯২০০ টাকার ভেহিক্যালের উপরেও অবচয় চার্জ করেছে বলে উল্লেখ করেছে।

(প্রসপেক্টাসে প্রকাশিত হিসাব)

একইভাবে প্লান্ট অ্যা্ন্ড মেশিনারীজ ও ফ্যাক্টরী ইক্যুপমেন্টের উপরে শুধুমাত্র বছরের শুরুর সম্পদে অবচয় চার্জ করা হয়েছে। ওই বছরে কেনা এ জাতীয় সম্পদে অবচয় চার্জ করা হয়নি। তারপরেও বিএসইসি বিস্তারিত চাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন কেনা সম্পদেও চার্জ করেছে বলে উল্লেখ করেছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোম্পানিটির আইপিও ফাইল না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে জানতে লুব-রেফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মফিজুর রহমানের ২৩ মে যোগাযোগ করলে ব্যস্ততার কথা বলে। পরে সেদিন অবচয়ের বিষয়ে জানতে চেয়ে লিখিত দিলেও জবাব দেয় না। এরপরের দিন (২৪ মে) যোগাযোগ করলে বলে, বিষয়টি এখনো দেখতে পারেননি। পরে জানাবেন। এরপরের দিন (২৫ মে) জবাব চেয়ে ম্যাসেজ দিলেও তিনি প্রতিউত্তর করেননি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ মে, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: