ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এখন অতি প্রবল আকার ধারণ করেছে। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দরের সবচেয়ে কাছে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে।
যদিও ঘূর্ণিঝড়টির মূল নিশানা থাকবে ভারতের উত্তর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি বালেশ্বর নদী বরাবর আছড়ে পরবে ইয়াস। তারপরেও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, পূর্ণিমা হওয়ার কারণেই বাংলাদেশ বেশি ভুগবে।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের এর মতো। আমাদের পায়রা বন্দর যদি ধরি তাহলে এর দূরত্ব থাকবে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার। ফলে কিছু অংশ বাংলাদেশের ভেতরে বা অগ্রভাগে পরবে। এসব এলাকায় দমকা হওয়াসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলের একাধিক এলাকায় ঝড়ের আঘাত লাগবে। এ সময়ে উপকূলের কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে ঝড়ো হওয়া বয়ে যেতে পারে। ওই সময়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইয়াস বেশ শক্তিশালী হওয়ায় যেসব অঞ্চলে যাবে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হবে। এখনই এর গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। উড়িষ্যার বালেশ্বর নদী অঞ্চলে এ ধরনের গতি থাকতে পারে।
বুধবার (২৬ মে) সকালে ইয়াস সম্পর্কিত ১৫ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আজ ভোররাত ৩টায় (২৬ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকট সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
ইয়াস আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোয় এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা এটি অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ পরিবর্তন হয় না। ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হলে গতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে। ফলে গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশে বড় ধরনের আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই।
বিজনেস আওয়ার/২৬ মে, ২০২১/এ