বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের রেফ্রিজারেটর বাজারের জায়ান্ট ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের ৭২৯তম নিয়মিত সভায় কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মো: সাইফুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে মোট ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এরমধ্যে বিডিংয়ে অংশ নেওয়া যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৫ টাকা ও আইপিওতে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৯ কোটি ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৯৫ টাকা সংগ্রহ করা হবে। উত্তোলনযোগ্য ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ৩৩ কোটি টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ ও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে আইপিও খরচ পরিচালনা করা হবে।
বিডিংয়ে ওয়ালটনের কাট-অফ প্রাইস হয়েছে ৩১৫ টাকা। এই দরে বিডিংয়ে অংশ নেওয়া যোগ্য বিনিয়োগকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার কিনবেন। তবে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্টে আইপিওতে শেয়ার ইস্যুর বিধান থাকলেও ওয়ালটন সাধারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্টে প্রতিটি শেয়ার ২৫২ টাকা করে ইস্যু করবে। অর্থাৎ শুরুতেই আইপিওতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিটি শেয়ারে ৬৩ টাকা লাভবান হবেন। এছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের কারনে ওয়ালটনে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত।
আরও পড়ুন…….
ইনটেকের প্রত্যেক পরিচালককে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা
রেস স্পেশাল অপরচুনিটিস ফান্ডের প্রসপেক্টাস অনুমোদন
সিটি ও যমুনা ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন
এমআই সিমেন্টের প্রত্যেক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
শেয়ারবাজারে আসার আগেই আল ফারুক ব্যাগসের অনিয়ম, কমিশনের জরিমানা
দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইপিএস নিয়ে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ওয়ালটন। এছাড়া কোম্পানিটির ইপিএস তালিকাভুক্ত প্রথম সারির কোম্পানিগুলোর তালিকায়। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ অর্থবছরের ইপিএসের বিবেচনায় ওয়ালটন ৮ম স্থানে রয়েছে। এমনকি বহুজাতিক বার্জার পেইন্টস ও গ্রামীণফোনের থেকে ওয়ালটনের ইপিএস বেশি।
শেয়ারবাজারে শীর্ষে থাকা সর্বশেষ অর্থবছরে রেকিট বেনকিজারের ইপিএস হয়েছে ১৩১.০৬ ইপিএস টাকা। এরপরে ম্যারিকো বাংলাদেশের ৮৪.০১ টাকা, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ৮১.৮৩, লিন্ডে বিডির ৮০.৯৩ টাকা, বাটা সুর ৭২.৭৯ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৫১.৩৭ টাকা ও রেনেটার ৪৬.৬৩ টাকা। এরপরেই রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পথে থাকা ওয়ালটন। এ কোম্পানির ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা।
ইপিএস বিবেচনায় তালিকাভুক্তির শুরুতে ওয়ালটনের শেয়ার দর অনেক কমে পাওয়া যাবে। যে বাজারে ওয়ালটনের সমান ও বেশি ইপিএস থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ৬৯৩.২০ টাকা শেয়ার দর অবস্থান করছে বাটা সু। আর ওয়ালটন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ৩১৫ টাকায়। তবে লেনদেন শুরু হওয়ার পরে প্রতিনিয়ত উঠা-নামার সুযোগ থাকবে।
প্লেসমেন্ট বিতর্ক থেকেও দূরে রয়েছে ওয়ালটন। ২০০৯-১০ সালে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের অন্যতম কারন বলেও মনে করা হয় ওই সময়ের অনিয়ন্ত্রিত প্লেসমেন্ট বাণিজ্যকে। এছাড়া ২০১০ সালের ধসের কারন অনুসন্ধানে ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনেও প্লেসমেন্টের বিষয়টি উঠে আসে। ঠিক ৮ বছর পরে আবারও ২০১৯ সালে আলোচনায় উঠে আসে প্লেসমেন্ট। তবে এই বিতর্কিত প্লেসমেন্টের পথে হাটেনি দেশের বৃহৎ রেফ্রিজারেটর উৎপাদনকারী কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ।
ওয়ালটনের বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। যার পুরোটাই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের দখলে। এরফলে ৩০০ কোটি টাকার শেয়ারের পুরোটাই ৩ বছর লক ইন (বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা) থাকবে। তাই ১-২ বছরের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া নিয়ে যে শঙ্কা থাকে, তার সুযোগ ওয়ালটনে নেই।
ওয়ালটনে ৫ হাজার ৪৮৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে। তবে ওয়ালটনের সমস্ত দায় দেনা শেষে অস্থায়ীসহ নিট ৭ হাজার ২৯৭ কোটি ৮০ লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৮ টাকার সম্পদ রয়েছে। এ হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) রয়েছে ২৪৩.১৬ টাকার।
কোম্পানিটির বসুন্ধরা ও গাজীপুরে ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ১৭৩ স্কয়ার ফিটের ভবন রয়েছে। এরমধ্যে গাজীপুরের কারখানায় ১৯টি ভবন ও শেডে ৪৭ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৪ স্কয়ার ফিট জায়গা রয়েছে। যেখানে বাৎসরিক সাড়ে ১৭ লাখ রেফ্রিজারেটর, ৫০ হাজার এসি, ৩ লাখ টিভি ও ১০ লাখ কম্প্রেসার তৈরীর সক্ষমতা রয়েছে। এ কোম্পানিটির দখলে রয়েছে দেশীয় রেফ্রিজারেটর বাজারের ৭০ শতাংশ। আর বসুন্ধরায় অফিসের জন্য নির্মিত আধুনিক ভবনে রয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩৯ স্কয়ার ফিট জায়গা।
উল্লেখ্য, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০৬ সালের ১৭ এপ্রিল প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে গঠিত। ২০০৮ সালে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৮ সালের ১৪ মে পাবলিক কোম্পানিতে রুপান্তর হয়। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনার এবং কম্প্রেশার উৎপাদন দিয়ে যাত্রা শুরু করা ওয়ালটন এখন টেলিভিশনসহ ইলেকট্রিকাল জিনিসপত্র তৈরী করে। এ কোম্পানি মূলত ওয়ালটন এবং মার্সেল ব্র্যান্ডে পণ্য বাজারজাত করে।
বিজনেস আওয়ার/২৩ জুন, ২০২০/আরএ
2 thoughts on “ওয়ালটনের আইপিও অনুমোদন”