বীমা কোম্পানির ব্যবসা এবং লভ্যাংশ যে খুব আহামরি তা না। অধিকাংশ বীমা কোম্পানি এবারও ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যেটা সব বীমা কোম্পানির গড় লভ্যাংশের পরিমাণ ১৩.৭১ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১.৩৭ টাকা। এই ১.৩৭ টাকার লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর প্রতিটি শেয়ার দরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গড়ে ৭৯ টাকায়।
তবে ১ বছর আগে বীমা কোম্পানিগুলোর দর এই আকাশচুম্বি ছিল না। এই সময়ের ব্যবধানে অনেক বীমা কোম্পানির দর কয়েকশ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এই তালিকায় প্রায় ১ হাজার শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিও আছে। তবে ১ বছরের মধ্যে এই উত্থানকে স্বাভাবিক মনে করছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সাম্প্রতিক দর বৃদ্ধির কোন কারন জানে না বীমা কোম্পানিগুলো নিজেরাও। স্টক এক্সচেঞ্জের কোয়ারির আলোকে এমনটিই জানাচ্ছে বীমা কর্তৃপক্ষ।
শেয়ারবাজারের সঙ্গে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে জড়িত এক ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কোন শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি মানেই ভবিষ্যত ভয়াবহ। কারন ছাড়া যখন একটি কোম্পানির দর কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হবে, সেটা আজ বা কাল জায়গায় ফিরে আসতে হবেই। মাঝখানে দু-চারজন ফায়দা লুটে নিতে পারলেও লোকসানে পড়ে অসংখ্য সাধারন বিনিয়োগকারী।
গত ১ বছরে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের। অথচ এই কোম্পানিটি আগের বছর লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ১২ শতাংশ নগদ। কিন্তু ২০২০ সালের জন্য কোন নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। এ বছর ১৭ শতাংশের পুরোটাই বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে ন্যূণতম অর্ধেক নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা না করার কারনে কোম্পানিটিকে বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। তারপরেও বছরের ব্যবধানে ১৯.৪০ টাকার শেয়ারটি এখন ২০০.১০ টাকা।
অথচ শেয়ারবাজারে অনেক কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোর শেয়ার দর বীমা কোম্পানির থেকে লভ্যাংশ বিবেচনায় অনেক কম। বিশেষ করে এক্ষেত্রে ব্যাংকের শেয়ার দর অনেক কম। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা ১ বছর অপেক্ষা করে লভ্যাংশ চায় না। তারা চায় কয়েকদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ ক্যাপিটাল গেইন। যেখানে হবে গেম্বলিং বা জুয়া খেলা। এতে হয় টাকা দ্বিগুণ হবে, না হয় কমবে। কিন্তু দ্বিগুণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা না থাকলেও লোকসানের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দোষারোপ করে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ১ বছরের ব্যবধানে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ১ হাজার শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব না। এছাড়া কোন ১টি খাতের শেয়ার দর টানা বৃদ্ধি পাওয়াও স্বাভাবিক লক্ষণ না। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা কমিশন খতিয়ে দেখতে পারে।
গত বছরের শেষের দিকে হঠাৎ করে বাড়তে থাকে বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর। এরপরে চলতি বছরে গত ২ মাস ধরে দ্বিতীয় ঠেউয়ে প্রায় সব বীমা কোম্পানির শেয়ার দর অনেক বেড়েছে। এই দর বৃদ্ধি বীমা কোম্পানির শেয়ার দরকে যোগ্যতার তুলনায় অনেক বেশিতে তুলে নিয়ে গেছে।
দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৪টি সাধারন বীমা কোম্পানির পর্ষদ ২০২০ সালের ব্যবসায় লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই বীমা কোম্পানিগুলো থেকে গড়ে ১৩.৭১ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১.৩৭ টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়া হবে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর গড়ে শেয়ার দরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৭৮.৬২ টাকায়। অর্থাৎ ৭৮.৬২ টাকা বিনিয়োগে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ১.৩৭ টাকা। যা বাজার দরের তুলনায় ১.৭৪ শতাংশ।
এই ৩৪ কোম্পানি ২০২০ সালের ব্যবসায় মোট ২০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যেখানে একই সময়ের জন্য শুধুমাত্র এক সিটি ব্যাংকই ১৭৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর ২৩টি ব্যাংক ঘোষণা করেছে ২ হাজার ৩২৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার।
এ বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করা সাধারন বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে ১১টি ৪ কোটি ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫১৩টি বোনাস শেয়ার দেবে। এরমধ্যে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স ও প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার দেবে। কিন্তু বাজেটে অনুমোদিত ন্যূনতম ৫০ শতাংশ বা অর্ধেক লভ্যাংশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা অমান্য করার কারনে বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
নিম্নে ২০২০ সালের ব্যবসায় সাধারন বীমা কোম্পানিগুলোর ঘোষণা করা লভ্যাংশ ও ১৫ জুনের শেয়ার দর তুলে ধরা হল-
কোম্পানির নাম | লভ্যাংশের হার | নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ (কোটি টাকা) | বোনাস শেয়ারের সংখ্যা | শেয়ার দর |
অগ্রনি ইন্স্যুরেন্স | ৫% নগদ ও ৫% বোনাস | ১.১৫ | ১৫১২২৩৪ | ৬৯.১০ |
এশিয়া ইন্স্যুরেন্স | ১২% নগদ | ৫.৬৫ | ১০১.৯০ | |
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যু. | ১০% নগদ | ৪.২৪ | ৭৩.২০ | |
বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যু: | ১২% নগদ | ৬.৪৮ | ৫৫.২০ | |
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যু. | ১৫% নগদ | ৬.৬৪ | ১২৬.৩০ | |
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স | ৬% নগদ ও ৭.৫% বোনাস | ২.৯৭ | ৩৭০৭৭৭৮ | ৬৫.২০ |
সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৬.৮২ | ৪০.৮০ | |
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স | ৬% নগদ ও ৪% বোনাস | ২.৪০ | ১৬০০২০৪ | ৪৯.৩০ |
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪ | ৬৭.৮০ | |
ঢাকা ইন্স্যুরেন্স | ২০% নগদ | ৮.০৩ | ১০৭.৬০ | |
ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স | ২০% নগদ | ৮.৬২ | ১২৫.৩০ | |
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স | ৭% নগদ ও ৩% বোনাস | ৫.৭০ | ২৪৪৩১২৪ | ৪১ |
ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স | ৫% নগদ ও ৫% বোনাস | ৩.৩৮ | ৩৩৮২৮৪০ | ৪২.৭০ |
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪.০৬ | ৭০ | |
গ্রীণডেল্টা ইন্স্যুরেন্স | ২৪.৫% নগদ ও ৭.৫% বোনাস | ২২.৮৩ | ৬৯৮৯৮৭৪ | ১৪৪.৬০ |
ইসলামী ইন্স্যুরেন্স | ১০% বোনাস | ৩৭৪২২৯২ | ৬২.৫০ | |
জনতা ইন্স্যুরেন্স | ৬% নগদ ও ৫% বোনাস | ২.৫৪ | ২১১৪১৯১ | ৪১.৮০ |
কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪.৪৯ | ৪৪.৬০ | |
মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪.৩১ | ৫৬.৮০ | |
নিটল ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪.০২ | ৫৮.৭০ | |
নর্দার্ণ ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪.২৭ | ৬৮.১০ | |
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স | ২০% বোনাস | ৬৭৭৭৪৯৪ | ৮২.৫০ | |
পিপলস ইন্স্যুরেন্স | ১১% নগদ | ৫.০৮ | ৪৮.৭০ | |
ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স | ১৫% নগদ | ৬.০৫ | ৭১.৯০ | |
প্রগতি ইন্স্যুরেন্স | ৩০% নগদ | ১৯.৬৮ | ১২৭.৯০ | |
প্রাইম ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪.০৯ | ৬৬.৮০ | |
প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স | ১৭% বোনাস | ৫০৪৯৪২৬ | ২০০.১০ | |
রিল্যায়েন্স ইন্স্যুরেন্স | ২৫% নগদ | ২৬.২৯ | ১২৮ | |
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স | ৭% নগদ ও ৭% বোনাস | ৩.২৫ | ৩২৪৬০৫৬ | ৬৫.২০ |
রূপালি ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৭.৬৭ | ৪৭.৬০ | |
স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স | ১২.৫০% নগদ | ৫.৪১ | ৭৮.৮০ | |
তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স | ১০% নগদ | ৪.২৬ | ৬০.৪০ | |
ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স | ১১% নগদ | ৪.৯০ | ৬৬.৬০ | |
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স | ১৫% নগদ | ৬.০১ | ১১৬.১০ | |
গড় লভ্যাংশ | শেয়ারপ্রতি ১.৩৭ টাকা | ২০৫.২৯ কোটি | ৪০৫৬৫৫১৩টি | গড় দর ৭৮.৬২ |
উল্লেখ্য, লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস শেয়ার দেওয়া হলেও সেটা রেকর্ড ডেটের পরেরদিন সমন্বয় হয়ে যায়। তারপরেও কোম্পানির অ্যাকাউন্টসে সংরক্ষিত আয় থেকে অভিহিত মূল্য বিবেচনায় যেভাবে বোনাস শেয়ার বাদ দেওয়া হয়, একই বিবেচনায় বোনাস শেয়ারকে নিউজে লভ্যাংশ হিসেবে গণনা করা হয়েছে।
বিজনেস আওয়ার/১৬ জুন, ২০২১/আরএ
One thought on “শেয়ারপ্রতি গড় ১.৩৭ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করা বীমার শেয়ার দর ৭৯ টাকা”