বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শীর্ষ ৪ কর্মকর্তার পেছনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রতি মাসে ব্যয় ৩৩ লাখ টাকা। এ তালিকায় ব্যর্থদের পাশাপাশি সমালোচিত ব্যক্তিরা রয়েছেন। যার ফলে উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের দ্ধারা ডিএসইর কোন উন্নয়ন নেই। এমনকি কোন সমস্যা তৈরী হলে তা সমাধানের দক্ষতা তাদের নেই। ডিএসইও চলছে সেই আগের ধারাবাহিকতায়।
জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হকের পেছনে ডিএসইর মাসে ব্যয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। এছাড়া প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিমের পেছনে ৮ লাখ টাকা করে এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. সাইফুর রহমান মজুমদারের পেছনে ব্যয় ৭ লাখ টাকা। সিওও নতুন নিয়োগ পাওয়ায় সিএফও এবং সিটিওর থেকে পিছিয়ে আছেন। ওই ২ জন পুরাতন হওয়ায় ইনক্রিমেন্টের মাধ্যমে এগিয়ে রয়েছেন।
আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, ডিএসইর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিএসইর ৩৫৯জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেছনে মোট ব্যয় হয়েছে ৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ হিসেবে ডিএসইর শীর্ষ ৪ কর্মকর্তার পেছনেই ব্যয় হয় ১০ শতাংশ।
ডিএসইর এক সদস্য বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ডিএসইতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন দেশের প্রথম সারির। এখানে অধিকাংশই কেরানির কাজ করে উচ্চ বেতন নেয়। কিন্তু তারপরেও তারা ডিএসইর উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। এছাড়া শ্রমিক না হয়েও শ্রমিক ফান্ড গঠন করে টাকা নেয়। এ তালিকায় শীর্ষ বেতনধারীরাও আছে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হককে বেতনতো পরের কথা নিয়োগ দেওয়া নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়। তার দক্ষতা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ এবং ছিলেন সমালোচিত। যার প্রমাণ এখন ডিএসইর সবাই পাচ্ছেন। এমনকি যে পরিচালক তাকে নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, তিনিও এখন হতাশ। সানাউল হক ডিএসইতে থাকলেও তার কার্যকরি কোন ভূমিকা নেই। মূলত সচিবই এখন তার দায়িত্ব পালন করে থাকে।
ডিএসইর এক সদস্য বিজনেস আওয়ারকে বলেন, এক পরিচালক অনেক কায়দাকানুন করে কাজী সানাউল হককে ডিএসইর এমডি নিয়োগ দিয়েছেন। তবে ওই পরিচালক এখন তার উপর নাখোশ। এমনকি তার বেতন কমানোর জন্যও বলছেন। এর আলোকে কাজী সানাউল হক এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্টর মাধ্যমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন জানালেও তা করেননি। এই এমডি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে ভয় পায়। যে কারনে এবারের বাজেট নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করেননি।
আরও পড়ুন……
এখনো এফডিআর নির্ভর করে চলে স্টক এক্সচেঞ্জ
ডিএসইর এক ব্রোকারের থেকেও সিএসইর লেনদেন কম
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি দীর্ঘ ৪ বছর ধরে ডিএসইতে উচ্চ বেতনে কাজ করছেন। শুরুতে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে স্থায়ী করে নেওয়া হয়। তবে চুক্তিভিত্তিকের উচ্চ বেতন স্থায়ীর পরেও রয়ে গেছে। অথচ এই দীর্ঘসময়ে ডিএসইর ব্যবসায় উন্নয়নে তিনি কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি।
ডিএসইতে প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) হিসেবে রয়েছেন মো. জিয়াউল করিম। যার চেয়ে অধীনস্থরা বা জুনিয়ররা বেশি দক্ষ বলে ডিএসইর অভ্যন্তরে আলোচনা হয়। যার নিয়োগের পরে ডিএসইর প্রযুক্তিতে কোন উন্নয়ন হয়নি। আগের তৈরী সেটআপেই ডিএসইর প্রযুক্তি খাত এগিয়ে চলছে। যাতে এখনো দেশের প্রধান এ শেয়ারবাজারটি অনলাইনে পুরোপুরি লেনদেনের যোগ্য হয়নি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ব্যর্থ হলেও প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর নতুন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার (সিওও) পোস্টে নিয়োগ পেয়েছেন মো. সাইফুর রহমান মজুমদার। যিনি এর আগে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে উন্নয়নের কোন ছাপ রাখতে পারেননি। সিএসই চলেছে সেই পুরানো ধারাবাহিকতায়। যে কারনে তাকে সিএসইর পর্ষদ এমডি হিসেবে পূণ:নিয়োগ দেওয়ার যোগ্য মনে করেনি।
ডিএসইর এক কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সিএফও এবং সিটিও ডিএসইর উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। তারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে তা পরবর্তীতে কৌশলে স্থায়ী করে নিয়েছেন। কিন্তু বেতন রয়ে গেছে চুক্তিভিত্তিকের ন্যায়। যে কারনে তাদের সঙ্গে ডিএসইর মহা-ব্যবস্থাপকের পার্থক্য প্রায় ৪ লাখ টাকা। জিএমদের চাকরীর বয়স অনেক হওয়া সত্ত্বেও এই পার্থক্য রয়েছে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। অথচ স্থায়ী নিয়োগে সিএফও, সিটিও এবং সিওওদের কারও ৮ লাখ টাকা পাওয়ার কথা না। যেখানে সিওও ব্যর্থ হয়ে সিএসই থেকে বাদ পড়েও এমন বেতনে ডিএসইতে নিয়োগ পেয়েছেন।
বিজনেস আওয়ার/২৫ জুন, ২০২০/পিএস
4 thoughts on “শীর্ষ ৪ কর্মকর্তার পেছনে ডিএসইর মাসে ব্যয় ৩৩ লাখ টাকা, কিন্তু ফলাফল…”