বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শর্ত সাপেক্ষে পাওয়া ‘সাময়িক মুক্তি’র ৯০ দিন পার করলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। গত ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান তিনি। মুক্তির পর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এদিকে শর্তের ব্যাপারে রয়েছেন শতভাগ সচেতন!
মুক্তির আগের দিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা-১-এ খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং এই সময় দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা এবং বিদেশে না যাওয়া’র শর্ত পুরোপুরি মেনেই ‘সাময়িক মুক্তির’ অর্ধেক সময় পার করেছেন খালেদা জিয়া। মুক্তির দেড় মাস পর গত ১১ মে প্রথমবারের মতো দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডেকে পাঠান বেগম খালেদা জিয়া।
এরপর ২৫ মে ইদুল ফিতরের দিন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ‘ফিরোজা’য় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন খালেদা জিয়া। ওই রাতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।
সর্বশেষ গত ১৩ জুন রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফিরোজা’য় ডেকে নেন খালেদা জিয়া। এদিন দেশ এবং দলের সার্বিক পরিস্থতি সম্পর্কে ধারণা নেন তিনি।
মুক্তির আগে আইনমন্ত্রী যে দু’টি প্রধান শর্তের কথা জানিয়েছিলেন, সে দু’টি শর্ত শতভাগ পালনে বদ্ধপরিকর খালেদা জিয়া। সে কারণেই হোম কোয়ারেনটাইন শেষ হলেও ইউনাইটেড হাসপাতালেও যাননি তিনি। অথচ কারাবন্দি থাকা অবস্থায় চিকিৎসার জন্য বার বার এ হাসপাতালটির কথাই বলেছিলেন খালেদা জিয়া এবং তার স্বজনরা।
দ্বিতীয় শর্ত ছিল- ‘বিদেশে না যাওয়া’ বা দেশত্যাগ না করা। সম্প্রতি গুঞ্জন ওঠে- চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। অথচ কারামুক্তির দিনই অ্যাটর্নি জেনারেল পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন ‘শর্ত ভাঙলেই মুক্তি বাতিল। বিদেশ যাওয়ার ‘গুঞ্জনে’ বিব্রত হন খোদ বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির আগে আইনমন্ত্রী যে দু’টি শর্তের কথা বলেছিলেন, তার বাইরেও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে।
ওই শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত হলো— ‘সাময়িক মুক্তি’র সময়কালে কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না; দলের হয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না, সাংগঠনিক কোনো তৎপরতায় যুক্ত হতে পারবেন না, গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না, নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবেন না।
দলীয় সূত্রমতে, এসব শর্ত কেবল মাত্র খালেদা জিয়ার পরিবারকেই লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে এবং খালেদা জিয়াকে তাদের জিম্মায়ই ছাড়া হয়েছে। কোনো শর্ত ভঙ্গ হলে পরিবারের কাছেই কৌফিয়ত তলব করা হবে। তাই শর্তগুলো পালনের ব্যাপারে খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার খুবই সচেতন।
সে কারণেই মিডিয়াতে বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন মহল থেকে অনুরোধ জানানো হলেও সেটাকে আমলে নেননি খালেদা জিয়া। কেবলমাত্র ঈদের দিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে করোনা দুর্যোগে দেশবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান খালেদা।
আর ওইদিন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে যে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেটাকে নিকট প্রতিবেশির সঙ্গে স্রেফ ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ বিনিময় হিসেবেই নিয়েছেন তিনি। থেকেছেন শর্তের ব্যাপারে শতভাগ সচেতন।
শর্তগুলো সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন— আইনমন্ত্রীর মুখ থেকে আমরা এ দুটি শর্তের কথাই শুনেছি। শর্তের লিখিত কপিতে কী আছে, সেটা আমি দেখিনি। সুতরাং ওই বিষয়ে কিছু বলতেও পারব না।
বিজনেস আওয়ার/২৫ জুন, ২০২০/এ