ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফারইস্ট লাইফের পর্ষদের কোটি কোটি টাকার প্রতারণা

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
  • 79

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : জমির দাম সাড়ে ১৪ কোটি টাকা হলেও সেই জমিতে ১৪২ কোটি টাকার বালু ফেলার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ। টাকা হাতিয়ে নিতে বোর্ড সভার বিবরণী জালিয়াতিও করেছে কোম্পানিটি।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে মিরপুরের গোয়ানচাট বাড়িতে জমি কেনা হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভের নামে। দুই কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে সম্পর্ক থাকায় যৌথভাবে জমি কেনে তারা। দলিল অনুযায়ী ৭৬৩ শতাংশ জমির দাম দেখানো হয় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। আর সেই জমিতে বালু ফেলাসহ উন্নয়ন কাজ দেখানো হয়েছে জমির দামের ১০ গুণ বেশি অর্থাৎ ১৪২ কোটি টাকা।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, জমি কেনার পর কোনো উন্নয়ন কাজই করেনি কোম্পানিটি।

এই সেই জমি

২০১৩ সালের ১ জুলাই বীমা কোম্পানিটির ১৬৯তম বোর্ড সভায় ফারইস্ট এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভ গঠন করা হয়। সেই কো-অপারেটিভের নামে জমি কিনতে ৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। সেখানে গোড়ান চাঁদবাড়ির জমি কেনার কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও পরবর্তীতে জালিয়াতি করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নামে সই করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেমায়েত উল্লাহ। পরবর্তিতে ২১১তম বোর্ড সভায় আবারো জালিয়াতি করে প্রাইম এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভকে ৭১ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

জমির উন্নয়নে রেজিস্ট্রেশন খরচ ২ কোটি টাকা হলেও এখাতে বিবিধসহ মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। এখানেও কোম্পানির কাছ থেকে বাড়তি ৭৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ।

জমির বাড়তি দাম দেখাতে গিয়ে আর্থিক প্রতিবেদনেও জালিয়াতি করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে জমি ও ভবন উন্নয়ন খরচ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। অথচ ২০১৭ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে আগের বছরের খরচ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়ানো হয়েছে ৫৭৯ কোটি টাকা।

এই সেই জমি

জমির দামের মতো দফায় দফায় পরিবর্তন করেছে জমির পরিমাণেও। দলিল অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৭৫৩ শতাংশ হলেও একই জমি একবার বলেছে ৬২৮ শতাংশ আবার বলা হয়েছে ৭৫০ শতাংশ।

বীমা আইন অনুযায়ী নগদ টাকা লেনদেন করার সুযো্গ নেই। অথচ জমির দামসহ ১৫৬ কোটি টাকা নগদ দিয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এমনকি আইডিআরএ’র অনুমতির একমাস আগেই জমি কিনেছে কোম্পানিটি। আর প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভের কাছ থেকে ৭১ কোটি টাকার জমি কিনলেও আইডিআরএ’র অনুমতি নেওয়ার তোয়াক্তাও করেনি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ।

এ বিষয়ে জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ফোনে ম্যাসেজ দিলেও প্রতিউত্তর করেননি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুন, ২০২০/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ফারইস্ট লাইফের পর্ষদের কোটি কোটি টাকার প্রতারণা

পোস্ট হয়েছে : ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : জমির দাম সাড়ে ১৪ কোটি টাকা হলেও সেই জমিতে ১৪২ কোটি টাকার বালু ফেলার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ। টাকা হাতিয়ে নিতে বোর্ড সভার বিবরণী জালিয়াতিও করেছে কোম্পানিটি।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে মিরপুরের গোয়ানচাট বাড়িতে জমি কেনা হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভের নামে। দুই কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে সম্পর্ক থাকায় যৌথভাবে জমি কেনে তারা। দলিল অনুযায়ী ৭৬৩ শতাংশ জমির দাম দেখানো হয় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। আর সেই জমিতে বালু ফেলাসহ উন্নয়ন কাজ দেখানো হয়েছে জমির দামের ১০ গুণ বেশি অর্থাৎ ১৪২ কোটি টাকা।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, জমি কেনার পর কোনো উন্নয়ন কাজই করেনি কোম্পানিটি।

এই সেই জমি

২০১৩ সালের ১ জুলাই বীমা কোম্পানিটির ১৬৯তম বোর্ড সভায় ফারইস্ট এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভ গঠন করা হয়। সেই কো-অপারেটিভের নামে জমি কিনতে ৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়। সেখানে গোড়ান চাঁদবাড়ির জমি কেনার কোনো সিদ্ধান্ত না থাকলেও পরবর্তীতে জালিয়াতি করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নামে সই করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হেমায়েত উল্লাহ। পরবর্তিতে ২১১তম বোর্ড সভায় আবারো জালিয়াতি করে প্রাইম এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভকে ৭১ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

জমির উন্নয়নে রেজিস্ট্রেশন খরচ ২ কোটি টাকা হলেও এখাতে বিবিধসহ মোট খরচ দেখানো হয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। এখানেও কোম্পানির কাছ থেকে বাড়তি ৭৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ।

জমির বাড়তি দাম দেখাতে গিয়ে আর্থিক প্রতিবেদনেও জালিয়াতি করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে জমি ও ভবন উন্নয়ন খরচ ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। অথচ ২০১৭ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে আগের বছরের খরচ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়ানো হয়েছে ৫৭৯ কোটি টাকা।

এই সেই জমি

জমির দামের মতো দফায় দফায় পরিবর্তন করেছে জমির পরিমাণেও। দলিল অনুযায়ী জমির পরিমাণ ৭৫৩ শতাংশ হলেও একই জমি একবার বলেছে ৬২৮ শতাংশ আবার বলা হয়েছে ৭৫০ শতাংশ।

বীমা আইন অনুযায়ী নগদ টাকা লেনদেন করার সুযো্গ নেই। অথচ জমির দামসহ ১৫৬ কোটি টাকা নগদ দিয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এমনকি আইডিআরএ’র অনুমতির একমাস আগেই জমি কিনেছে কোম্পানিটি। আর প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের এমপ্লয়েজ কো-অপারেটিভের কাছ থেকে ৭১ কোটি টাকার জমি কিনলেও আইডিআরএ’র অনুমতি নেওয়ার তোয়াক্তাও করেনি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ।

এ বিষয়ে জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ফোনে ম্যাসেজ দিলেও প্রতিউত্তর করেননি।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুন, ২০২০/পিএস

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: