ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনিয়োগকারীদেরকে লকডাউনের অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর আহবান

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১
  • 45

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আগামি বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) থেকে লকডাউনে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে ব্যাংক এই আওতার বাহিরে থাকবে কিনা, তা এখনো পরিস্কার করা হয়নি। যা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে করা হবে। কিন্তু এরইমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। এই আতঙ্কে বিক্রির ক্ষেত্রে লোকসানের সম্ভাবনা বেশি। যা অতীতের লকডাউনের ক্ষেত্রেও হয়েছে। তবে সেই আতঙ্ক কাটিয়ে বাজার ঘুরেও দাঁড়ায়। মাঝে লোকসান করে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার খবরে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হবে। তারা শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইবে। তাদের এই দূর্বলতার সুযোগ আরেক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা নেবে। কারন লকডাউনের পরে বাজার ইতিবাচক হওয়াটা যে স্বাভাবিক, সেটা তারা জানে। এছাড়া গত বছরের লকডাউনে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও এ বছরের এপ্রিলে শুরু হওয়া লকডাউনে সেটা দেখা যায়নি। তাই আতঙ্কিত হয়ে হুমড়ি খেয়ে বিক্রি করা ঠিক হবে না।

শেয়ারবাজার খোলা থাকা, না থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বক্তব্যে ব্যাংক খোলা থাকার আভাস পাওয়া গেছে। যদি তাই হয়, তাহলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, অর্থবছর শেষ হচ্ছে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনবিআর রিলেটেড অফিসগুলো সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এ হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক যদি খোলা থাকে, তাহলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে। যার নিশ্চয়তা অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন শুরু থেকেই দিয়ে আসছে।

লকডাউন নিয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীরা যতটা আতঙ্কে, ততটা দূর্বল অবস্থানে নেই বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সাধারনরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইলেও বড়রা বিবেচনায় নেবে লকডাউনের পরে কি হবে। কারন লনডাউনের পরে শেয়ারবাজার উর্ধ্বমূখী থাকা স্বাভাবিক। যার প্রমাণ গত বছর দেশে করোনার কারনে বন্ধ থাকা শেয়ারবাজার খুলতেই টানা উত্থান হয়েছিল।

দেখা গেছে, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বড় পতন হয়। এই বাজার ওই বছরের ২৬ মার্চ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে। যা মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারকেও পানির দরে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই পানির দরে যারা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারাই শেয়ারবাজার খোলার পরে মুনাফা করতে পেরেছিলেন। এক্ষেত্রে আফসোস করতে হয়েছে বন্ধের আগে বিক্রি করা বিনিয়োগকারীদেরকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, গত বছরের শুরুর লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা অনেক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। যাতে সবাই শুধু বিক্রির চেষ্টাই করে গেছেন। কিন্তু বাজার সেখান থেকে ঠিকই ঘুরে দাড়িঁয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের লকডাউনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক ছিল। সেটা লেনদেনের সময় কমে আসার ক্ষেত্রেও। তাই ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে, এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করা ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন।

বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজার বন্ধ হয়ে গেলে কিছু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হবে। তবে সেটা বিচক্ষন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে না। এছাড়া এমন না যে আগামিকাল বিক্রি করলে মার্জিণ ঋণ শোধ করা যাবে। যাতে করে এখন বিক্রি করে সুদ থেকেও মাফ পাওয়া যাবে না। এছাড়া ব্যাংক বন্ধ রাখার ঘোষণা সরকার এখনো করেনি। তাই শেয়ারবাজারও বন্ধ হয়ে যাওয়া নিশ্চিত না।

তারপরেও আতঙ্কিত হয়ে লেনদেনের শুরুতে কেউ কেউ বিক্রির চাপ বাড়াবে বলে মনে করেন বিএসইসির এই নির্বাহি পরিচালক। তবে বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সে পথে যাবে বলে মনে করেন না তিনি। তারা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কম দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করবে। এমনকি যাদের পোর্টফোলিওতে নগদ অর্থ পড়ে রয়েছে, সেখান থেকে একটা অংশ বিনিয়োগে যাবে। যে কারনে লেনদেনের শুরুতে কিছুটা বিক্রির চাপ পড়লেও তা কেটে যাবে।

বিজনেস আওয়ার/২৬ জুন, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বিনিয়োগকারীদেরকে লকডাউনের অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর আহবান

পোস্ট হয়েছে : ১০:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : আগামি বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) থেকে লকডাউনে সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে ব্যাংক এই আওতার বাহিরে থাকবে কিনা, তা এখনো পরিস্কার করা হয়নি। যা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে করা হবে। কিন্তু এরইমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। এই আতঙ্কে বিক্রির ক্ষেত্রে লোকসানের সম্ভাবনা বেশি। যা অতীতের লকডাউনের ক্ষেত্রেও হয়েছে। তবে সেই আতঙ্ক কাটিয়ে বাজার ঘুরেও দাঁড়ায়। মাঝে লোকসান করে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার খবরে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হবে। তারা শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইবে। তাদের এই দূর্বলতার সুযোগ আরেক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা নেবে। কারন লকডাউনের পরে বাজার ইতিবাচক হওয়াটা যে স্বাভাবিক, সেটা তারা জানে। এছাড়া গত বছরের লকডাউনে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও এ বছরের এপ্রিলে শুরু হওয়া লকডাউনে সেটা দেখা যায়নি। তাই আতঙ্কিত হয়ে হুমড়ি খেয়ে বিক্রি করা ঠিক হবে না।

শেয়ারবাজার খোলা থাকা, না থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বক্তব্যে ব্যাংক খোলা থাকার আভাস পাওয়া গেছে। যদি তাই হয়, তাহলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, অর্থবছর শেষ হচ্ছে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনবিআর রিলেটেড অফিসগুলো সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এ হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক যদি খোলা থাকে, তাহলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে। যার নিশ্চয়তা অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন শুরু থেকেই দিয়ে আসছে।

লকডাউন নিয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীরা যতটা আতঙ্কে, ততটা দূর্বল অবস্থানে নেই বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সাধারনরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইলেও বড়রা বিবেচনায় নেবে লকডাউনের পরে কি হবে। কারন লনডাউনের পরে শেয়ারবাজার উর্ধ্বমূখী থাকা স্বাভাবিক। যার প্রমাণ গত বছর দেশে করোনার কারনে বন্ধ থাকা শেয়ারবাজার খুলতেই টানা উত্থান হয়েছিল।

দেখা গেছে, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বড় পতন হয়। এই বাজার ওই বছরের ২৬ মার্চ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে। যা মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারকেও পানির দরে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই পানির দরে যারা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারাই শেয়ারবাজার খোলার পরে মুনাফা করতে পেরেছিলেন। এক্ষেত্রে আফসোস করতে হয়েছে বন্ধের আগে বিক্রি করা বিনিয়োগকারীদেরকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, গত বছরের শুরুর লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা অনেক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। যাতে সবাই শুধু বিক্রির চেষ্টাই করে গেছেন। কিন্তু বাজার সেখান থেকে ঠিকই ঘুরে দাড়িঁয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের লকডাউনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক ছিল। সেটা লেনদেনের সময় কমে আসার ক্ষেত্রেও। তাই ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারও খোলা থাকবে, এ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করা ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন।

বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজার বন্ধ হয়ে গেলে কিছু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হবে। তবে সেটা বিচক্ষন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে না। এছাড়া এমন না যে আগামিকাল বিক্রি করলে মার্জিণ ঋণ শোধ করা যাবে। যাতে করে এখন বিক্রি করে সুদ থেকেও মাফ পাওয়া যাবে না। এছাড়া ব্যাংক বন্ধ রাখার ঘোষণা সরকার এখনো করেনি। তাই শেয়ারবাজারও বন্ধ হয়ে যাওয়া নিশ্চিত না।

তারপরেও আতঙ্কিত হয়ে লেনদেনের শুরুতে কেউ কেউ বিক্রির চাপ বাড়াবে বলে মনে করেন বিএসইসির এই নির্বাহি পরিচালক। তবে বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সে পথে যাবে বলে মনে করেন না তিনি। তারা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে কম দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করবে। এমনকি যাদের পোর্টফোলিওতে নগদ অর্থ পড়ে রয়েছে, সেখান থেকে একটা অংশ বিনিয়োগে যাবে। যে কারনে লেনদেনের শুরুতে কিছুটা বিক্রির চাপ পড়লেও তা কেটে যাবে।

বিজনেস আওয়ার/২৬ জুন, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: