ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি মানবিক টাঙ্গাইলের পুলিশ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০
  • 102

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (টাঙ্গাইল) : রাজধানী ঢাকা নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ জেলা টাঙ্গাইলে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাব বেশ পড়েছে। উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহসহ ২৩ টি জেলার প্রবেশদ্বার হওয়ায় টাঙ্গাইল করোনার ঝুঁকিতে প্রথম থেকেই। এই করোনাকালীন সময়ে পেশাদারিত্বের পাশাপশি টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে।

পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়ের নির্দেশ ও তত্তাবধায়নে পুলিশ সদস্যরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি কার্যক্রমগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অদ্যবধি পালন করে যাচ্ছেন। পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের মায়া পেছনে ফেলে তারা জীবনবাজী রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যা সকল মহলে প্রশসংশীত হয়েছে।

মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহীনুল ইসলাম ফকির জানান করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধে জনগণকে সচেতন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। সেইসাথে মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এবং স্থানীয় ক্যাবল টিভির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে নিয়মতি ভিডিও প্রচার চালাচ্ছেন।

কয়েক হাজার বিদেশ ফেরতের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাল নিশান টানিয়ে দিয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করেছেন। লকডাউন কার্যকর রাখতে জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং প্রবেশ-বাহির পথে ৫২ টি চেকপোস্ট বসিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। কৃত্তিম সংকট ও দ্রব্যমূল্য রোধ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশ সদস্যরা অনবরত টহল মনিটরিং করছেন।

দোকানের সামনে পুলিশরা একে দিয়েছেন গোলাকার চিহৃ। জেলা থেকে ১১৩০ জন শ্রমিককে অন্য জেলায় ধান কাটার জন্য পাঠানো হয়। করোনা আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউনের ব্যবস্থা করছেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩৬৪০ টি কর্মহীন ও অসহায় পরিবারকে এবং ঈদের আগে ৭০০ জন পরিবহন শ্রমিকের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়।

এদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে সর্বপ্রথম টাঙ্গাইল সদরের ওসি মীর মোশারফ হোসেন থানায় জনসাধারনের জন্য জীবাণুনাশক ছিটানোর ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কালিহাতীর থানার ওসি হাসান আল মামুন শতাধিক হিজড়াকে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন।

গোপালপুর থানার ওসি মুস্তাফিজুর করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে নিজেই খাবার সামগ্রী নিয়ে হাজির হতেন। পরে তিনিও করোনা আক্রান্ত হন। বর্তমানে সুস্থ্য হয়ে কাজে যোগদান করেছেন। টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশের ওসি শ্যামল কুমার দত্ত এবং মির্জাপুর থানার ওসি সায়েদুর রহমান মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি করোনা আক্রান্ত জাহাঙ্গীর হোসেনের মনোবল চাঙ্গা রাখতে উপহার সামগ্রী পাঠান। এসব বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এবিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য করোনার মধ্যে সবোর্চ্চ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। ১০ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু করোনাকালে নয় দেশ ও জনগনের জান মালের নিরাপত্তায় আমরা সর্দা সচেষ্ট আছি। করোনা সেবার পাশাপাশি আইনশৃংখলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রাখতে আমাদের তৎপরতা আগের মতোই চলছে।

জনগণকে লকডাউন মানাতে এবং সচেতন করতে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেছেন টাঙ্গাইলের বিশিষ্টজনের। পুলিশ সুপারও তাদের সাথে একমত পোষণ করেছেন।

উল্লেখ্য ২৪ জুন বুধবার পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৪৬ জন। ঢাকায় ফলাফল আটকে আছে ১০৬০টি নমুনার। মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৭,৮৩১টি। সুস্থ হয়েছেন ১৫৫ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন। চিকিৎসাধীন ২৮০ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৯১৪ জন। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুন, ২০২০/টিএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

করোনাকালে পেশাদারিত্বের পাশাপাশি মানবিক টাঙ্গাইলের পুলিশ

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (টাঙ্গাইল) : রাজধানী ঢাকা নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ জেলা টাঙ্গাইলে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রভাব বেশ পড়েছে। উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহসহ ২৩ টি জেলার প্রবেশদ্বার হওয়ায় টাঙ্গাইল করোনার ঝুঁকিতে প্রথম থেকেই। এই করোনাকালীন সময়ে পেশাদারিত্বের পাশাপশি টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে।

পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়ের নির্দেশ ও তত্তাবধায়নে পুলিশ সদস্যরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি কার্যক্রমগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অদ্যবধি পালন করে যাচ্ছেন। পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের মায়া পেছনে ফেলে তারা জীবনবাজী রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যা সকল মহলে প্রশসংশীত হয়েছে।

মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহীনুল ইসলাম ফকির জানান করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধে জনগণকে সচেতন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। সেইসাথে মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এবং স্থানীয় ক্যাবল টিভির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে নিয়মতি ভিডিও প্রচার চালাচ্ছেন।

কয়েক হাজার বিদেশ ফেরতের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাল নিশান টানিয়ে দিয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করেছেন। লকডাউন কার্যকর রাখতে জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং প্রবেশ-বাহির পথে ৫২ টি চেকপোস্ট বসিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। কৃত্তিম সংকট ও দ্রব্যমূল্য রোধ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পুলিশ সদস্যরা অনবরত টহল মনিটরিং করছেন।

দোকানের সামনে পুলিশরা একে দিয়েছেন গোলাকার চিহৃ। জেলা থেকে ১১৩০ জন শ্রমিককে অন্য জেলায় ধান কাটার জন্য পাঠানো হয়। করোনা আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউনের ব্যবস্থা করছেন। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩৬৪০ টি কর্মহীন ও অসহায় পরিবারকে এবং ঈদের আগে ৭০০ জন পরিবহন শ্রমিকের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়।

এদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে সর্বপ্রথম টাঙ্গাইল সদরের ওসি মীর মোশারফ হোসেন থানায় জনসাধারনের জন্য জীবাণুনাশক ছিটানোর ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কালিহাতীর থানার ওসি হাসান আল মামুন শতাধিক হিজড়াকে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন।

গোপালপুর থানার ওসি মুস্তাফিজুর করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে নিজেই খাবার সামগ্রী নিয়ে হাজির হতেন। পরে তিনিও করোনা আক্রান্ত হন। বর্তমানে সুস্থ্য হয়ে কাজে যোগদান করেছেন। টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশের ওসি শ্যামল কুমার দত্ত এবং মির্জাপুর থানার ওসি সায়েদুর রহমান মির্জাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি করোনা আক্রান্ত জাহাঙ্গীর হোসেনের মনোবল চাঙ্গা রাখতে উপহার সামগ্রী পাঠান। এসব বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এবিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য করোনার মধ্যে সবোর্চ্চ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। ১০ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু করোনাকালে নয় দেশ ও জনগনের জান মালের নিরাপত্তায় আমরা সর্দা সচেষ্ট আছি। করোনা সেবার পাশাপাশি আইনশৃংখলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রাখতে আমাদের তৎপরতা আগের মতোই চলছে।

জনগণকে লকডাউন মানাতে এবং সচেতন করতে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেছেন টাঙ্গাইলের বিশিষ্টজনের। পুলিশ সুপারও তাদের সাথে একমত পোষণ করেছেন।

উল্লেখ্য ২৪ জুন বুধবার পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪৪৬ জন। ঢাকায় ফলাফল আটকে আছে ১০৬০টি নমুনার। মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৭,৮৩১টি। সুস্থ হয়েছেন ১৫৫ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন। চিকিৎসাধীন ২৮০ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৯১৪ জন। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুন, ২০২০/টিএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: