করোনা মহামারির মধ্যেও ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা বাড়ছে নিয়মিতভাবে। যার ধারবাহিকতায় আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা বেড়েছে ১৮১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। যাতে ব্যাংকগুলোর ২০২০ সালে ৭ হাজার ২৬৬ কোটি টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের।
ব্যাংকগুলোর ২০২০ সালের সমন্বিত (সাবসিডিয়ারিসহ) আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তালিকাভুক্ত ৩১ ব্যাংকের ২০১৯ সালের শেষে মোট ৩০ হাজার ৮৬৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন ছিল। যা ২০২০ সালের শেষে বেড়ে হয়েছে ৩২ হাজার ৮৮৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে ১ বছরে বা ২০২০ সালে পরিশোধিত মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যা বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে।
এই পরিশোধিত মূলধনের পাশাপাশি করোনার দ্বিতীয় বছরে (২০২০ সাল) ব্যাংকগুলোর ১৮১ কোটি ৬১ লাখ টাকার নিট মুনাফা বেড়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ব্যবসায় বেড়েছিল ১৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা।
ব্যাংকগুলোর ২০১৯ সালের ৭ হাজার ৮৪ কোটি ২২ লাখ টাকার নিট মুনাফা বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৭ হাজার ২৬৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারনে ব্যাংক খাতের মুনাফায় ধস নামবে বলে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাস হলেও ব্যাংকের সুদ গণনা কিন্তু থেমে নেই। আর এটাই ব্যাংকের মুনাফার প্রধান উৎস। তাই মুনাফায় পতন হয়নি। যে কারনে এবারও আগের ন্যায় ভালো মুনাফা হয়েছে।
আরও পড়ুন……
সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের অনৈতিকতায় পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্দ্বন্দ্ব
ব্যাংকগুলোর ২০২০ সালে ৭ হাজার ২৬৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মুনাফা হলেও এরমধ্য থেকে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরন করা হবে ২ হাজার ৪৫২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ হিসেবে মুনাফার ৩৩.৭৬ শতাংশ বিতরন করা হবে। বাকি ৪ হাজার ৮১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বা ৬৬.২৪ শতাংশ ব্যাংকেই থেকে যাবে। যার একটি অংশ বোনাস শেয়ারের জন্য পরিশোধিত মূলধনে ও বাকি অংশ সংরক্ষিত আয়ে (রিটেইন আর্নিংস) যোগ হবে।
দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মুনাফা করে শীর্ষে উঠে এসেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এরপরে ৪৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমেছে ইসলামী ব্যাংক। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের।
২০২০ সালে একমাত্র আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লোকসান করে সবার তলানিতে রয়েছে। ব্যাংকটির ১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এরপরে সবচেয়ে কম মুনাফা হয়েছে রূপালি ব্যাংকের। ওই বছরে ব্যাংকটির ২০ কোটি ২৯ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। আর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৩৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবি ব্যাংকের ও তৃতীয় সর্বনিম্ন ৯৭ কোটি ৪ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের।
নিম্নে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ তুলে ধরা হল-
ব্যাংকের নাম | মুনাফা-২০২০ (কোটি টাকা) | মুনাফা-২০১৯ (কোটি টাকা) | পরিশোধিত মূলধন (কোটি টাকা) |
ডাচ-বাংলা ব্যাংক | ৫৪৯.৮৭ | ৪৩৪.১৪ | ৬৩২.৫০ |
ইসলামী ব্যাংক | ৪৭৯.৫৫ | ৫৪৮.০৬ | ১৬১০ |
ব্র্যাক ব্যাংক | ৪৪১.৩৪ | ৪৫৮.২৬ | ১৩৯২.১৭ |
দি সিটি ব্যাংক | ৪৩৬.৪২ | ২৬৩.৫২ | ১০৬৭.২১ |
ইস্টার্ন ব্যাংক | ৪১৮.০৪ | ৩৯৯.০৪ | ৯৫৩.৮৬ |
পূবালি ব্যাংক | ৩৭০.৬৮ | ২১৬.২৯ | ১০২৮.২৯ |
ন্যাশনাল ব্যাংক | ৩৬১.৮৪ | ৪১২.৩২ | ৩০৬৬.৪২ |
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক | ২৯৪.৬৪ | ২৮৫.৭৮ | ১২১৭.৫২ |
এক্সিম ব্যাংক | ২৮১.৫৩ | ২৩৮.২১ | ১৪১২.২৫ |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক | ২৭৭.৯৯ | ২০৬.৯০ | ৯৪৮.৭৬ |
যমুনা ব্যাংক | ২৬৫.৩৬ | ২৫৩.২৪ | ৭৪৯.২৩ |
আল-আরাফাহ ব্যাংক | ২৫৬.৬৪ | ২৪২.৭৬ | ১০৬৪.৯০ |
এনসিসি ব্যাংক | ২২৩.২৪ | ২১৩.৪৫ | ৯৪৫.৯৩ |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক | ২২২.৮৩ | ২২২.২০ | ১০৩৩.২২ |
সাউথইস্ট ব্যাংক | ২১৫.২০ | ২৫০.৮৬ | ১১৮৮.৯৪ |
উত্তরা ব্যাংক | ২১৪.৬৬ | ১৮৭.৪৬ | ৫৬৪.৬৮ |
প্রিমিয়ার ব্যাংক | ২০৬.৩৬ | ৩৩৩.৮৬ | ১০৪৩.০৭ |
ব্যাংক এশিয়া | ২০২.৪৫ | ১৯৫.৭৮ | ১১৬৫.৯১ |
ঢাকা ব্যাংক | ১৯৮.৮১ | ১৬২.৩৬ | ৯৪৯.৭৩ |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক | ১৯১.৩৪ | ১৬৬.৩৫ | ১০২৯.১০ |
প্রাইম ব্যাংক | ১৮২.৭৯ | ১৬৬.৯৪ | ১১৩২.২৮ |
ট্রাস্ট ব্যাংক | ১৮০.১২ | ২০৩.৬৭ | ৬৪৩.৩০ |
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক | ১৫৬.৬৫ | ১৫২.৫৭ | ৯৩৮.০১ |
ওয়ান ব্যাংক | ১৩৯.৩৬ | ১৬১ | ৯৩৪.০৪ |
এনআরবিসি ব্যাংক | ১৩৮.০৪ | ১১৫.৩০ | ৭৩৭.৬৪ |
আইএফআইসি ব্যাংক | ১১৩.৩০ | ২৮২.৭৭ | ১৭০০.৮৭ |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক | ১০৮.৬৫ | ১৫০.৪৪ | ১০০৫.৯৯ |
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক | ৯৭.০৪ | ১৩৩.৭৮ | ৮১২.৫০ |
এবি ব্যাংক | ৩৯.৪১ | ১২.৩৩ | ৮৩৫.৮৪ |
রূপালি ব্যাংক | ২০.২৯ | ৫৬.৯৬ | ৪১৪.১৭ |
আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক | (১৮.৬১) | (৪২.৩৮) | ৬৬৪.৭০ |
মোট | ৭২৬৫.৮৩ | ৭০৮৪.২২ | ৩২৮৮৩.০৩ |
তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। ব্যাংকটির ৩ হাজার ৬৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। তবে ব্যাংকটি মুনাফার হিসাবে রয়েছে ৭ম স্থানে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংক মুনাফায় ২৬তম স্থানে রয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকার তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ইসলামী ব্যাংক মুনাফায় ২য় অবস্থানে রয়েছে।
অপরদিকে সবচেয়ে কম ৪১৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে রূপালি ব্যাংক মুনাফায়ও সবার তলানিতে রয়েছে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৫৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে মুনাফায় ১৬তম অবস্থানে রয়েছে রূপালি ব্যাংক। এছাড়া তৃতীয় সর্বনিম্ন ৬৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে মুনাফায় ১ম অবস্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
বর্তমানে ১৬টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকার উপরে রয়েছে। ব্যাংকগুলো হল- ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, পূবালি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।
বিজনেস আওয়ার/০৪ জুলাই, ২০২১/আরএ