প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শর্ত ভেঙ্গে শেয়ারবাজারে আসতে চায় ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স। এলক্ষ্যে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটি ইস্যু ম্যানেজার সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছে। যে কোম্পানিটি তারল্য সংকটের শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে এফডিআর করতে চায়।
পাবলিক ইস্যু রুলসের, ৩ এর সি’তে বলা হয়েছে, ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া আইপিও পরবর্তীতে পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা হতে হবে।
তবে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স শেয়ারবাজার থেকে ১৬ কোটি টাকা উত্তোলনের আবেদন করেছে। যাতে কোম্পানিটির বর্তমানের ২৪ কোটি টাকাসহ আইপিও পরবর্তীতে পরিশোধিত মূলধন দাড়াবে ৪০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে পাবলিক ইস্যু রুলসের সর্বনিম্ন অর্থ উত্তোলন ও সর্বনিম্ন পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পরিপালন হচ্ছে না।
আইপিও অযোগ্য ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স তারল্য সংকটের শেয়ারবাজার থেকে অর্থ নিয়ে এফডিআর করতে চায়। অথচ বাংলাদেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন থেকে তারল্য বা নগদ অর্থের সংকটে রয়েছে। যা সমাধানে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি) প্রধামন্ত্রীর দারস্থ পর্যন্ত হতে হয়েছে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর পেশাদারিত্বে (প্রফেশনালিজম) অনেক ঘাটতি রয়েছে। তারা অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। এছাড়া বর্তমানে শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। সেখানে এফডিআর করতে শেয়ারবাজারের চলমান মন্দাবস্থায় বীমা কোম্পানির অর্থ উত্তোলন কতটা সঠিক হবে, তা বোধগম্য নয়। বরং আমি হলে এফডিআর ভেঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার জন্য বলতাম। এখন অনেক কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগ করার মতো অবস্থায় রয়েছে।
শেয়ারবাজারে তারল্য সংকটের কারনে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্নভাবে বিনিয়োগে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে বিএসইসির চেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য সহজ শর্তে ২০০ কোটি টাকা করে দেওয়ার সার্কুলার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরেও ব্যাংকগুলো এখনো উল্লেখ করার মতো এগিয়ে আসেনি। এরমধ্যেই করোনাভাইরাসের কারনে শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে।
চলমান তারল্য সংকটের মধ্যেই অযৌক্তিক কারনে শেয়ারবাজার থেকে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। যে কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে উপকার নেই। বরং তারল্য সংকটের সৃষ্টি করবে। বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই যেখানে বিনিয়োগ করতে পারে, সেখানে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বড় অংশ ব্যাংকে এফডিআর করবে। আর কিছু অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে। যা বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই করতে সক্ষম।
কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করবে ৬ কোটি ৯২ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৮ কোটি টাকা এফডিআর করবে। বাকি ১ কোটি ৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা আইপিওতে ব্যয় হবে।
এসব বিষয়ে জানতে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং ইস্যু ম্যানেজার কোম্পানির অফিসের নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া ঊভয় প্রতিষ্ঠানে মেইল করেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
বিজনেস আওয়ার/২৭ জুন, ২০২০/আরএ