ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গেলো অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে!

  • পোস্ট হয়েছে : ০২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুলাই ২০২১
  • 69

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : গেলো অর্থবছরে ১২ হাজার করদাতা প্রায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এক বছরের এত কালো টাকা আগে কখনও সাদা করা হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই খাতে রাজস্ব পেয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

বুধবার (৭ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ দফতর সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কালো টাকা সাদা করার তালিকায় আছেন ডাক্তার, সরকারি চাকরিজীবী, তৈরি পোশাক রফতানিকারক, ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টর, সোনা ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থের ঘোষণা দিয়েছেন।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা কিংবা জমি-ফ্ল্যাট কিনে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৮৫৯ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। যারা প্রায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছেন।

কালো টাকা সাদা করার তালিকায় আছেন ডাক্তার, সরকারি চাকরিজীবী, তৈরি পোশাক রফতানিকারক, ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টর, সোনা ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই এক হাজার ৪৫৫ জন ব্যক্তি ৬১৯ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন।

কালো টাকা বিনিয়োগকারীর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করেছেন। তারা এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার কর সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আইনগতভাবে বৈধ করেছেন।

তবে দেশের পুঁজিবাজারে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসেনি কালো টাকা থেকে। বছর শেষে এই খাতে মাত্র ২৪৬ জন বিনিয়োগকারী ৪০০ কোটি টাকা অর্থ বৈধ বা সাদা করেছেন। অন্যদিকে ৪ হাজার ৫১৮ ব্যক্তি জমি-ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা ভিন্ন ভিন্ন সম্পদের বৈধতা নিচ্ছেন। অনেক করদাতা তাদের আয়কর রিটার্নে এসব সম্পদের ঘোষণা দেবেন। তাই অনেকে আগে-ভাগেই সুযোগ গ্রহণ করেছেন। আমাদের কর কর্মকর্তারা রিটার্নে তথ্য যাচাই-বাছাই করবেন।

চলতি বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য না থাকলেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ঘোষিত সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ওই বছরের বাজেট ঘোষণায় বলা হয়েছিল, প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না।

একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না। এছাড়া দেশীয় বিনিয়োগ চাঙা করতে এর আগের অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে একই হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার।

বিজনেস আওয়ার/০৭ জুলাই, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

গেলো অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে!

পোস্ট হয়েছে : ০২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুলাই ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : গেলো অর্থবছরে ১২ হাজার করদাতা প্রায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এক বছরের এত কালো টাকা আগে কখনও সাদা করা হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই খাতে রাজস্ব পেয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

বুধবার (৭ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জনসংযোগ দফতর সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কালো টাকা সাদা করার তালিকায় আছেন ডাক্তার, সরকারি চাকরিজীবী, তৈরি পোশাক রফতানিকারক, ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টর, সোনা ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থের ঘোষণা দিয়েছেন।

২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেয়ারবাজার, নগদ টাকা কিংবা জমি-ফ্ল্যাট কিনে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৮৫৯ জন কালো টাকা সাদা করেছেন। যারা প্রায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করেছেন।

কালো টাকা সাদা করার তালিকায় আছেন ডাক্তার, সরকারি চাকরিজীবী, তৈরি পোশাক রফতানিকারক, ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টর, সোনা ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে। এর মধ্যে শুধু জুন মাসেই এক হাজার ৪৫৫ জন ব্যক্তি ৬১৯ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন।

কালো টাকা বিনিয়োগকারীর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যাংকে রাখা বিভিন্ন আমানত, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র বা নগদ টাকার ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করেছেন। তারা এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার কর সরকারের কোষাগারে জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আইনগতভাবে বৈধ করেছেন।

তবে দেশের পুঁজিবাজারে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসেনি কালো টাকা থেকে। বছর শেষে এই খাতে মাত্র ২৪৬ জন বিনিয়োগকারী ৪০০ কোটি টাকা অর্থ বৈধ বা সাদা করেছেন। অন্যদিকে ৪ হাজার ৫১৮ ব্যক্তি জমি-ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা ভিন্ন ভিন্ন সম্পদের বৈধতা নিচ্ছেন। অনেক করদাতা তাদের আয়কর রিটার্নে এসব সম্পদের ঘোষণা দেবেন। তাই অনেকে আগে-ভাগেই সুযোগ গ্রহণ করেছেন। আমাদের কর কর্মকর্তারা রিটার্নে তথ্য যাচাই-বাছাই করবেন।

চলতি বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য না থাকলেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ঘোষিত সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ওই বছরের বাজেট ঘোষণায় বলা হয়েছিল, প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না।

একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না। এছাড়া দেশীয় বিনিয়োগ চাঙা করতে এর আগের অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে একই হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার।

বিজনেস আওয়ার/০৭ জুলাই, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: