ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ন্যাশনাল ফিড থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অর্থ পাঁচার

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ৫ বছরের মধ্যে শেষ ৩ বছর ধরে ব্যবসায় ধুকছে ন্যাশনাল ফিড মিল। আর এই কোম্পানিটি থেকেই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অবৈধভাবে টাকা সড়ানো হয়েছে। এতে লাভবান হচ্ছে উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা। আর প্রতারিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ন্যাশনাল ফিড মিল ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ১৮ কোটি টাকা সংগ্রহের পরে ২ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ১ টাকার উপরে থাকে। এরপরে শুরু হয় পতন। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ০.৫৬ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ০.১৫ টাকা ও সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ০.১৭ টাকা ইপিএস হয়েছে। ব্যবসায় এমন দূর্বল কোম্পানিটি থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত ৩ কোম্পানিতে প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

তবে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ব্যবসায় উন্নতি হয়েছে। এরইমধ্যে ৯ মাসে (জুলাই ২০-মার্চ ২১) ইপিএস হয়েছে ১.২৫ টাকা। কিন্তু শেয়ারটিতে গেম্বলিং করার জন্য এই উন্নতি কৃত্রিমভাবে দেখানো হচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির কারখানা প্রাণ গ্রুপ ভাড়া নিয়ে উৎপাদন করে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, ন্যাশনাল ফিডের কারখানা ভাড়া নিয়ে ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে নেয় প্রাণ।

এরইমধ্যে গত ১১ এপ্রিলের ন্যাশনাল ফিডের ১৪.৬০ টাকার শেয়ারটি বর্তমানে ৩৬ টাকায় অবস্থান করছে। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২১.৪০ টাকা বা ১৪৭ শতাংশ।

এ কারনে সরেজমিনে প্রকৃত ঘটনা জানতে ন্যাশনাল ফিডের কারখানায় যেতে চাইলেও তাতে সম্মতি দেয়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ মে কোম্পানি সচিব আরিফুর রহমানের সঙ্গে কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বললে, তিনি বলেন বাহিরে থেকে সুযোগ নেই। তারপরেও আমি ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানাবো। তবে আর জানাননি।

কারখানা ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আরিফুর রহমান বলেন, নিজস্বভাবে উৎপাদন চলছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আর্থিক হিসাবের নোট-৭এ অ্যাডভান্স, ডিপোজিট ও প্রিপেমেন্টস হিসাবে ৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এরমধ্যে কোন স্বার্থ ছাড়াই নিজেদের অন্য কোম্পানি ন্যাশনাল ইলেকট্রোড অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে ২২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা প্রদান করেছে। এছাড়া কর্ণপুর অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে বিক্রিবাবদ ৬৮ লাখ ৯ হাজার টাকা পাওনা ও ৬৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বিনা স্বার্থে প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া ন্যাশনাল হ্যাচারি লিমিটেডের কাছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে ৬৯ লাখ টাকা বিক্রিবাবদ পাওনা ও বাকি ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বিনা স্বার্থে।

উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্পর্কিত এসব কোম্পানিত বিনা স্বার্থে অর্থ প্রদান করা হলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এরফলে বিএসইসি নোটিফিকেশন নং বিএসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৩২/২/এডমিন লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ন্যাশনাল ফিড মিলের ২০১৯ সালের ৩০ জুন বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রির কারনে পাওনা টাকা ছিল ৭২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যা ২০২০ সালের ৩০ জুন বেড়ে হয়েছে ৭৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এভাবে নিয়মিত গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকার পরিমাণ বাড়লেও বছরভিত্তিক গ্রাহকদের কাছ থেকে সন্তোষজনক আদায় হচ্ছে না। আদায়ে ঝুকিঁ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকা আদায়ে প্রত্যাশিত ক্ষতির জন্য কোন সঞ্চিতিও (প্রভিশন) গঠন করেনি। এর মাধ্যমে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখাচ্ছে ন্যাশনাল ফিড কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ি, মুনাফার ৫ শতাংশ দিয়ে ওয়ার্কার্স প্রফিট অ্যান্ড পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করতে হয়। তবে ন্যাশনাল ফিডে এর বাহিরে গিয়ে ম্যানেজমেন্ট তাদের মতো করে এই ফান্ডের পরিমাণ নির্ধারন করেছে এবং সঞ্চিতি গঠন করেছে। তবে কোন প্রদান করেনি।

বিজনেস আওয়ার/১১ জুলাই, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

3 thoughts on “ন্যাশনাল ফিড থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অর্থ পাঁচার

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ন্যাশনাল ফিড থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অর্থ পাঁচার

পোস্ট হয়েছে : ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ৫ বছরের মধ্যে শেষ ৩ বছর ধরে ব্যবসায় ধুকছে ন্যাশনাল ফিড মিল। আর এই কোম্পানিটি থেকেই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অবৈধভাবে টাকা সড়ানো হয়েছে। এতে লাভবান হচ্ছে উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা। আর প্রতারিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ন্যাশনাল ফিড মিল ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এ কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে ১৮ কোটি টাকা সংগ্রহের পরে ২ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ১ টাকার উপরে থাকে। এরপরে শুরু হয় পতন। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ০.৫৬ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ০.১৫ টাকা ও সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ০.১৭ টাকা ইপিএস হয়েছে। ব্যবসায় এমন দূর্বল কোম্পানিটি থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত ৩ কোম্পানিতে প্রায় ৭ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

তবে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ব্যবসায় উন্নতি হয়েছে। এরইমধ্যে ৯ মাসে (জুলাই ২০-মার্চ ২১) ইপিএস হয়েছে ১.২৫ টাকা। কিন্তু শেয়ারটিতে গেম্বলিং করার জন্য এই উন্নতি কৃত্রিমভাবে দেখানো হচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির কারখানা প্রাণ গ্রুপ ভাড়া নিয়ে উৎপাদন করে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, ন্যাশনাল ফিডের কারখানা ভাড়া নিয়ে ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে নেয় প্রাণ।

এরইমধ্যে গত ১১ এপ্রিলের ন্যাশনাল ফিডের ১৪.৬০ টাকার শেয়ারটি বর্তমানে ৩৬ টাকায় অবস্থান করছে। অর্থাৎ ৩ মাসের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২১.৪০ টাকা বা ১৪৭ শতাংশ।

এ কারনে সরেজমিনে প্রকৃত ঘটনা জানতে ন্যাশনাল ফিডের কারখানায় যেতে চাইলেও তাতে সম্মতি দেয়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ মে কোম্পানি সচিব আরিফুর রহমানের সঙ্গে কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বললে, তিনি বলেন বাহিরে থেকে সুযোগ নেই। তারপরেও আমি ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানাবো। তবে আর জানাননি।

কারখানা ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আরিফুর রহমান বলেন, নিজস্বভাবে উৎপাদন চলছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, আর্থিক হিসাবের নোট-৭এ অ্যাডভান্স, ডিপোজিট ও প্রিপেমেন্টস হিসাবে ৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এরমধ্যে কোন স্বার্থ ছাড়াই নিজেদের অন্য কোম্পানি ন্যাশনাল ইলেকট্রোড অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে ২২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা প্রদান করেছে। এছাড়া কর্ণপুর অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে বিক্রিবাবদ ৬৮ লাখ ৯ হাজার টাকা পাওনা ও ৬৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বিনা স্বার্থে প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া ন্যাশনাল হ্যাচারি লিমিটেডের কাছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে ৬৯ লাখ টাকা বিক্রিবাবদ পাওনা ও বাকি ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বিনা স্বার্থে।

উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্পর্কিত এসব কোম্পানিত বিনা স্বার্থে অর্থ প্রদান করা হলেও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এরফলে বিএসইসি নোটিফিকেশন নং বিএসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০৯-১৩২/২/এডমিন লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ন্যাশনাল ফিড মিলের ২০১৯ সালের ৩০ জুন বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বাকিতে বিক্রির কারনে পাওনা টাকা ছিল ৭২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যা ২০২০ সালের ৩০ জুন বেড়ে হয়েছে ৭৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এভাবে নিয়মিত গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকার পরিমাণ বাড়লেও বছরভিত্তিক গ্রাহকদের কাছ থেকে সন্তোষজনক আদায় হচ্ছে না। আদায়ে ঝুকিঁ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে পাওনা টাকা আদায়ে প্রত্যাশিত ক্ষতির জন্য কোন সঞ্চিতিও (প্রভিশন) গঠন করেনি। এর মাধ্যমে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখাচ্ছে ন্যাশনাল ফিড কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ি, মুনাফার ৫ শতাংশ দিয়ে ওয়ার্কার্স প্রফিট অ্যান্ড পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করতে হয়। তবে ন্যাশনাল ফিডে এর বাহিরে গিয়ে ম্যানেজমেন্ট তাদের মতো করে এই ফান্ডের পরিমাণ নির্ধারন করেছে এবং সঞ্চিতি গঠন করেছে। তবে কোন প্রদান করেনি।

বিজনেস আওয়ার/১১ জুলাই, ২০২১/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: