ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘদিন ধরে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে বিনাসুদে শত শত কোটি টাকার ঋণ প্রদান

  • রেজোয়ান
  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০
  • 0

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ক্রাউন ব্র্যান্ডের এমআই সিমেন্ট থেকে দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের বিভিন্ন কোম্পানিতে শত শত কোটি টাকার ঋণ বিনাসুদে প্রদান করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিতে হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডার বা মালিক থাকলেও তাদের অনুমোদন না নিয়েই এই অর্থ প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে পরিচালকদের ব্যক্তিগত ৬ কোম্পানি। এমন অনিয়মের কারনে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এমআই সিমেন্টের পরিচালকদেরকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, এমআই সিমেন্টে শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা ২৮ হাজার ১৭৬ জন। আর এই কোম্পানি থেকে তাদের অনুমোদন না নিয়েই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ৬ কোম্পানিতে বিনাসুদে টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে দবিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে পরিচালকদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করা হয়েছে। তারপরেও সেই প্রদত্ত অর্থ অনিরাপদ এবং অর্থ ফেরতে নির্দিষ্ট কোন শর্ত নেই বলে আর্থিক হিসাবে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

এমআই সিমেন্ট থেকে অর্থ দেওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ক্রাউন পাওয়ার জেনারেশন, ক্রাউন পলিমার ব্যাগিং, ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টস, ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস, ক্রাউন সিমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি ও ক্রাউন মেরিনার্স।

এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত গঠিত ছিল শুধুমাত্র ক্রাউন পাওয়ার জেনারেশন, ক্রাউন পলিমার ব্যাগিং ও ক্রাউন মেরিনার্স। ২০১০-১১ অর্থবছরে গঠন করা হয় ক্রাউন সিমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি, ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টস ও ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস।

কোম্পানিগুলোতে অর্থ প্রদানের বিভিন্ন উদ্দেশ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে এমআই সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। যেখানে ক্রাউন পাওয়ার জেনারেশন থেকে বাজার দরের থেকে কম দামে এমআই সিমেন্টে পাওয়ার সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ক্রাউন পলিমার ব্যাগিং থেকে কম দামে ব্যাগ সরবরাহ, ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস থেকে এমআই সিমেন্টের পণ্য গ্রাহকদের কাছে কম দামে পৌছানো ও ক্রাউন মেরিনার্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে কাচাঁমাল কারখানায় পৌছানোর কথা বলা হয়েছে। আর ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টস কোম্পানির মাধ্যমে সিমেন্ট মিক্স এর কাজ করা হয়। যা ক্রাউন সিমেন্টের কাজ বিশেষভাবে করে। এছাড়া ক্রাউন সিমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি মাঝেমধ্যে সিমেন্ট ব্যবসা করে।

দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ কোম্পানিগুলোতে এমআই সিমেন্টের প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ দাড়াঁয় ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যার পরিমাণ ২০১৭ সালের ৩০ জুন ছিল ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ওইসময়ের মধ্যে ৮১ কোটি ৬ লাখ টাকা প্রদানের মাধ্যমে এই পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়।

পরিচালকদের ৬ কোম্পানিতে এমআই সিমেন্ট থেকে ২০০৯ সালের ৩০ জুন বিনাসুদে প্রদত্ত ঋণ ছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১০ সালের ৩০ জুন ১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ২০১১ সালের ৩০ জুন ৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ২০১২ সালের ৩০ জুন ৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ২০১৩ সালের ৩০ জুন ৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০১৪ সালের ৩০ জুন ৮৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১৫ সালের ৩০ জুন ৯১ কোটি ৯১ লাখ টাকা ও ২০১৬ সালের ৩০ জুন ৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা হয়। তবে এরপরে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০ জুন ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৮ সালের ৩০ জুন ৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ও ২০১৯ সালের ৩০ জুন কমে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় নেমে আসে। যা ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পরিচালকদের ওই ৬ কোম্পানিতে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ এখনো ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা রয়েছে।

এই অর্থ প্রদানের অনিয়মের কারনে গত ২৩ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭২৯তম সভায় এমআই সিমেন্টের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনিত ব্যতিত) ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ কোম্পানিতে স্বতন্ত্র ব্যতিত ৫ জন পরিচালক রয়েছেন।

বিএসইসি জানিয়েছে, এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি তাদের ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উইথ দ্যা সিস্টার কনসার্ন’ হিসাব শিরোনামে ৭০.৪০ কোটি টাকা দেখিয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে ইস্যুয়ার কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন ঋণ হিসেবে প্রদত্ত হয়েছে এবং উক্ত ঋণ প্রদানের পূর্বে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন নেয়া হয়নি। এছাড়াও কোম্পানির আগের বছরগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও সুদবিহীন ঋণ প্রদানের প্রমাণ পাওয়া গেছে। উক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ইস্যুয়ার কোম্পানির পরিচালকদের শতভাগ মালিকানাধীন। এক্ষেতে কোম্পানি এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড কমিশনের প্রজ্ঞাপন নং এসইসি/সিএমএমআরআরসিডি/২০০৬-১৫৯/অ্যাডমিন/০২-১০ লংঘন করেছে। যে কারনে কোম্পানির পরিচালকদের জরিমানা করা হয়েছে।

আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, পরিচালকদের ব্যক্তিগত ৬ কোম্পানিতে অর্থ প্রদান করে এমআই সিমেন্টের ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা। ৩১ মার্চ ২০২০ সালের প্রকাশিত হিসাবে, ইমপেয়ারম্যান্ট অ্যালাউন্স হিসেবে এই ক্ষতি দেখানো হয়েছে। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গঠন করা হয়েছে।

ইমপেয়ারম্যান্ট অ্যালাউন্সের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন এমআই সিমেন্টের সচিব মজহারুল ইসলাম।

বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ওই ৬ কোম্পানির মধ্যে ৪টিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল এমআই সিমেন্ট থেকে। এ কোম্পানিটি থেকে ক্রাউন পাওয়ারে ২০ লাখ টাকা, ক্রাউন মেরিনার্সে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টসে ৫ লাখ টাকা ও ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশনে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টসে ও ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশনে বিনিয়োগের পুরোটা ২০১০-১১ অর্থবছরে করা হয়। এছাড়া ক্রাউন মেরিনার্সে নতুন করে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। এই ৪ কোম্পানির মধ্যে ক্রাউন পাওয়ারে ৫০ শতাংশ ও অন্য কোম্পানিগুলোতে ২০ শতাংশ করে মালিকানায় বিনিয়োগ করা হয়।

ওই ৪ কোম্পানির বিনিয়োগের মধ্যে লোকসানে ক্রাউন মেরিন ছাড়া বাকি ৩ কোম্পানির বিনিয়োগ শূন্য হয়ে যায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। তবে মেরিন ক্রাউন মুনাফা করে। যাতে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকার বিনিয়োগ ২০১৯ সালের ৩০ জুন বেড়ে দাড়িঁয়েছে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। এছাড়া ক্রাউন পাওয়ার মুনাফায় ফেরায় বিনিয়োগ ৮২ লাখ টাকা হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/২৮ জুন, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

8 thoughts on “দীর্ঘদিন ধরে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে বিনাসুদে শত শত কোটি টাকার ঋণ প্রদান

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দীর্ঘদিন ধরে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে বিনাসুদে শত শত কোটি টাকার ঋণ প্রদান

পোস্ট হয়েছে : ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ক্রাউন ব্র্যান্ডের এমআই সিমেন্ট থেকে দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের বিভিন্ন কোম্পানিতে শত শত কোটি টাকার ঋণ বিনাসুদে প্রদান করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিতে হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডার বা মালিক থাকলেও তাদের অনুমোদন না নিয়েই এই অর্থ প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে পরিচালকদের ব্যক্তিগত ৬ কোম্পানি। এমন অনিয়মের কারনে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এমআই সিমেন্টের পরিচালকদেরকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, এমআই সিমেন্টে শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা ২৮ হাজার ১৭৬ জন। আর এই কোম্পানি থেকে তাদের অনুমোদন না নিয়েই উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ৬ কোম্পানিতে বিনাসুদে টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে দবিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে পরিচালকদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করা হয়েছে। তারপরেও সেই প্রদত্ত অর্থ অনিরাপদ এবং অর্থ ফেরতে নির্দিষ্ট কোন শর্ত নেই বলে আর্থিক হিসাবে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

এমআই সিমেন্ট থেকে অর্থ দেওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ক্রাউন পাওয়ার জেনারেশন, ক্রাউন পলিমার ব্যাগিং, ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টস, ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস, ক্রাউন সিমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি ও ক্রাউন মেরিনার্স।

এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত গঠিত ছিল শুধুমাত্র ক্রাউন পাওয়ার জেনারেশন, ক্রাউন পলিমার ব্যাগিং ও ক্রাউন মেরিনার্স। ২০১০-১১ অর্থবছরে গঠন করা হয় ক্রাউন সিমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি, ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টস ও ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস।

কোম্পানিগুলোতে অর্থ প্রদানের বিভিন্ন উদ্দেশ্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে এমআই সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ। যেখানে ক্রাউন পাওয়ার জেনারেশন থেকে বাজার দরের থেকে কম দামে এমআই সিমেন্টে পাওয়ার সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ক্রাউন পলিমার ব্যাগিং থেকে কম দামে ব্যাগ সরবরাহ, ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস থেকে এমআই সিমেন্টের পণ্য গ্রাহকদের কাছে কম দামে পৌছানো ও ক্রাউন মেরিনার্সের মাধ্যমে চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে কাচাঁমাল কারখানায় পৌছানোর কথা বলা হয়েছে। আর ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টস কোম্পানির মাধ্যমে সিমেন্ট মিক্স এর কাজ করা হয়। যা ক্রাউন সিমেন্টের কাজ বিশেষভাবে করে। এছাড়া ক্রাউন সিমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি মাঝেমধ্যে সিমেন্ট ব্যবসা করে।

দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ কোম্পানিগুলোতে এমআই সিমেন্টের প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ দাড়াঁয় ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যার পরিমাণ ২০১৭ সালের ৩০ জুন ছিল ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ওইসময়ের মধ্যে ৮১ কোটি ৬ লাখ টাকা প্রদানের মাধ্যমে এই পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়।

পরিচালকদের ৬ কোম্পানিতে এমআই সিমেন্ট থেকে ২০০৯ সালের ৩০ জুন বিনাসুদে প্রদত্ত ঋণ ছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১০ সালের ৩০ জুন ১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ২০১১ সালের ৩০ জুন ৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ২০১২ সালের ৩০ জুন ৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ২০১৩ সালের ৩০ জুন ৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০১৪ সালের ৩০ জুন ৮৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১৫ সালের ৩০ জুন ৯১ কোটি ৯১ লাখ টাকা ও ২০১৬ সালের ৩০ জুন ৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা হয়। তবে এরপরে অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ২০১৭ সালের ৩০ জুন ৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৮ সালের ৩০ জুন ৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ও ২০১৯ সালের ৩০ জুন কমে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় নেমে আসে। যা ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পরিচালকদের ওই ৬ কোম্পানিতে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ এখনো ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা রয়েছে।

এই অর্থ প্রদানের অনিয়মের কারনে গত ২৩ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭২৯তম সভায় এমআই সিমেন্টের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনিত ব্যতিত) ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ কোম্পানিতে স্বতন্ত্র ব্যতিত ৫ জন পরিচালক রয়েছেন।

বিএসইসি জানিয়েছে, এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি তাদের ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট উইথ দ্যা সিস্টার কনসার্ন’ হিসাব শিরোনামে ৭০.৪০ কোটি টাকা দেখিয়েছে। যা প্রকৃতপক্ষে ইস্যুয়ার কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদবিহীন ঋণ হিসেবে প্রদত্ত হয়েছে এবং উক্ত ঋণ প্রদানের পূর্বে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন নেয়া হয়নি। এছাড়াও কোম্পানির আগের বছরগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও সুদবিহীন ঋণ প্রদানের প্রমাণ পাওয়া গেছে। উক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো ইস্যুয়ার কোম্পানির পরিচালকদের শতভাগ মালিকানাধীন। এক্ষেতে কোম্পানি এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড কমিশনের প্রজ্ঞাপন নং এসইসি/সিএমএমআরআরসিডি/২০০৬-১৫৯/অ্যাডমিন/০২-১০ লংঘন করেছে। যে কারনে কোম্পানির পরিচালকদের জরিমানা করা হয়েছে।

আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, পরিচালকদের ব্যক্তিগত ৬ কোম্পানিতে অর্থ প্রদান করে এমআই সিমেন্টের ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা। ৩১ মার্চ ২০২০ সালের প্রকাশিত হিসাবে, ইমপেয়ারম্যান্ট অ্যালাউন্স হিসেবে এই ক্ষতি দেখানো হয়েছে। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গঠন করা হয়েছে।

ইমপেয়ারম্যান্ট অ্যালাউন্সের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন এমআই সিমেন্টের সচিব মজহারুল ইসলাম।

বিনাসুদে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ওই ৬ কোম্পানির মধ্যে ৪টিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল এমআই সিমেন্ট থেকে। এ কোম্পানিটি থেকে ক্রাউন পাওয়ারে ২০ লাখ টাকা, ক্রাউন মেরিনার্সে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টসে ৫ লাখ টাকা ও ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশনে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে ক্রাউন সিমেন্ট কনক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্টসে ও ক্রাউন ট্রান্সপোর্টেশনে বিনিয়োগের পুরোটা ২০১০-১১ অর্থবছরে করা হয়। এছাড়া ক্রাউন মেরিনার্সে নতুন করে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। এই ৪ কোম্পানির মধ্যে ক্রাউন পাওয়ারে ৫০ শতাংশ ও অন্য কোম্পানিগুলোতে ২০ শতাংশ করে মালিকানায় বিনিয়োগ করা হয়।

ওই ৪ কোম্পানির বিনিয়োগের মধ্যে লোকসানে ক্রাউন মেরিন ছাড়া বাকি ৩ কোম্পানির বিনিয়োগ শূন্য হয়ে যায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। তবে মেরিন ক্রাউন মুনাফা করে। যাতে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকার বিনিয়োগ ২০১৯ সালের ৩০ জুন বেড়ে দাড়িঁয়েছে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। এছাড়া ক্রাউন পাওয়ার মুনাফায় ফেরায় বিনিয়োগ ৮২ লাখ টাকা হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/২৮ জুন, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: