বিনোদন ডেস্ক : করোনাকালে নাজুক অবস্থায় রয়েছে দেশের সংগীতাঙ্গন। একদিকে যেমন নেই স্টেজ শো অন্যদিকে নতুন গানও প্রকাশ হচ্ছে না তেমন। ঠিক এমন অবস্থায় সম্প্রতি প্রায় শতাধিক শিল্পী ঘোষণা দিয়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে লাইভে গান করবেন না তারা।
যদিও বিনা পারিশ্রমিকে তারা কি এতদিন লাইভ করেছেন? এমন প্রশ্নও উঠেছে। অন্যদিকে দেশের জনপ্রিয় গীতিকাররাও নিজেদের ন্যায্য অধিকারের কথা শিল্পী তথা সংগীত সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরেছেন। সব মিলিয়ে রয়্যালিটি আদায় নিয়েও সোচ্চার হয়েছেন অনেক শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক।
সম্প্রতি নিজের এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সংগীত যোদ্ধাদের চলতি অবস্থা থেকে উত্তরণের এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১১ টি উপায়ের কথা তুলে ধরেছেন বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই একতাবদ্ধ হয়ে চলার প্রতি আমার ব্যাপক আসক্তি। বাংলাদেশে সবচেয়ে অসম্ভব কাজ হচ্ছে একতাবদ্ধ থাকা। দেশকে ভালোবাসার ক্ষেত্রেও আমরা বিভক্ত। সংগীতে আসার পরপরই চেষ্টা করেছি ঐক্য গড়ে তুলতে। একশ্রেণির তারকাদের মধ্যরাতের গোপন সংলাপের জন্য হয়ে ওঠেনি।
এমনকি ঐ শিল্পীদের লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে যন্ত্রশিল্পীরাও একতাবদ্ধ হতে পারে নি। এই জেদ থেকে ছোটদের নিয়ে সংগঠন করতে চাইলাম। ঐ সংগঠনের লিডারশিপ তাদের হাতেই ছিলো। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, মাঝখান থেকে সময় নষ্ট হলো। কখনো আর সংগঠন নিয়ে মাথা ঘামাবো না।
প্রান্তিক মিউজিশিয়ানদের ঘরে ঘরে এখন হাহাকার। করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে অনৈক্যের ফলাফল কী হয়, এখন জোরে কান্না করার ক্ষমতাও নাই। পেশা বদলানোর চিন্তাও ঢুকে গেছে মিউজিশিয়ানদের মাথায়। মাত্র তিনমাসের ধাক্কাই নিতে পারেনি ইন্ডাস্ট্রি, সামনে তো কঠিনতর সমস্যা আসছেই। তারপরও উপযাচক হয়ে শেষবারের মতো কিছু পরামর্শ দিচ্ছি।
১. অবিলম্বে গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের সমন্বয়ে কপিরাইট সোসাইটি গঠন করতে হবে।
২. এই সোসাইটি শুরু থেকেই রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি মুক্ত রাখতে হবে।
৩. সময় দিতে পারবে এমন গ্রহণযোগ্য সংগীত ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা মেনিফেস্টো তৈরি করতে হবে। ৪. যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্বার্থ সংরক্ষণ প্ল্যান করতে হবে।
৫. কপিরাইট অফিস কর্তৃক গীতিকার, সুরকার, শিল্পী এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের রেভিনিউ শেয়ারিং নির্ধারণ করতে হবে।
৬. কপিরাইট আইন সংশোধন করে চলচ্চিত্রের গানের ওপর থেকে প্রযোজকের একচ্ছত্র অধিকার খর্ব করতে হবে।
৭. সরকারি-বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলে যে কোনো পন্থায় প্রচারিত গানের রয়্যালিটি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. সিনিয়রিটি ও দক্ষতা বিবেচনায় গ্রেডেশন সিস্টেম এবং আইডি কার্ড চালু করতে হবে।
৯. প্রত্যেকটি পেশাদার শো থেকে কপিরাইট সোসাইটির জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পার্সেন্টেজ কাটতে হবে যেন গীতিকার ও সুরকাররা সেখান থেকে তাদের সৃষ্টির ন্যায্য হিস্যা পায়।
১০. মিউজিকের প্রত্যেক অংশের হিস্যাদারকে অবশ্যই আয়কর ফাইল খুলতে হবে।
১১. কারো জন্য সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাকে কপিরাইট সোসাইটির নিবন্ধিত হতে হবে।
অবিলম্বে এই এগারোটা পয়েন্টে কাজ করতে না পারলে অভাবের সঙ্গে সংসার ভাঙা শুরু হবে পাইকারি হারে। নীরব দুর্ভিক্ষে আছে সংগীতাঙ্গন, অতীতে তৈলপ্রাপ্ত সচ্ছলরা আপনাদের ফোন ধরবে না, তারা করাপ্টেড পলিটিশিয়ানদের মতো বিদেশে সেকেন্ড হোম তৈরি করে রেখেছে।
সাহায্যের চিন্তা না করে অধিকার আদায়ে এখন সচেষ্ট হতে হবে। ভিখারি নয়, যোদ্ধা হোন, নিজের অধিকার ছিনিয়ে আনুন। অন্যথায় এ খাত থেকে খাওয়ার জন্য ভবিষ্যতে আর কেউ মুড়িও অফার করবে না।
বিজনেস আওয়ার/২৮ জুন, ২০২০/এ