ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীদের ৮২ কোটি টাকার শেয়ার ফ্রিজ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০
  • 30

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ার ও ইউনিট বেচা-কেনার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ক্রেস্ট হাউজের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শহিদ উল্লাহ আকস্মিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আড়ালে চলে গেছে। তবে এরইমধ্যে এ হাউজটির প্রায় ২১ হাজার বিনিয়োগকারীর ৮২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট ফ্রিজ করা হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীরা লিঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অন্য যেকোন ব্রোকারেজ হাউজে লেনদেন করতে পারবে।

রবিবার (২৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের ৮২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট ফ্রিজ করা হলেও বিনিয়োগকারীদের দেনা-পাওনার বিষয়টি এখনো পরিস্কার না। ৮২ কোটি টাকার বাহিরে ওই হাউজে বিনিয়োগকারীদের কত টাকার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে বা নগদ কতটাকা পাওনা রয়েছে, তা পরিস্কার না। তবে ফ্রিজ করা শেয়ারের বাহিরে যদি পাওনা থাকে, তাহলে ট্রেক বিক্রি করে তা মেটানো হবে।

ডিএসইর এই এমডি বলেন, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ একটি পুরাতন প্রতিষ্ঠান। এ হাউজটির আর্থিক হিসাব খারাপ ছিল না। এমনকি মে মাসেও সমন্বিত আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল না। তারপরেও অনাকাঙ্খিতভাবে একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। যা সমাধানে ডিএসই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। ডিএসই থেকে হাউজটির মালিকরা যেনো বিদেশে যেতে না পারে, সেলক্ষে পল্টন থানায় অভিযোগ করা হয় এবং মালিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করে। এখন তাদের ১০টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।

হাউজটিতে বিনিয়োগকারীদের নিট পাওনার পরিমাণ জানতে ওই হাউজের বিনিয়োগকারীদের সবাইকে তাদের তথ্য ডিএসইকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন ডিএসইর এমডি। এক্ষেত্রে তারা যত দ্রুত জানাবে, তত দ্রুত হাউজটিতে বিনিয়োগকারীদের দায়-দেনা জানা যাবে। তারা ডিএসইকে মেইলে বা সরাসরি উপস্থিত হয়ে তাদের পাওনা সর্ম্পক্যে জানাতে পারবেন।

পাওনা টাকা নিয়ে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হওয়ার অনুরোধ করেছেন কাজী সানাউল হক। তিনি বলেন, ট্রেক ও সম্পদ বিক্রি করে পাওনা সমন্বয় করা হবে। এলক্ষ্যে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ওই হাউজের বিনিয়োগকারীরা যখন চেক ডিজঅনার পাচ্ছিল, তখন জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তাই ভবিষ্যতে যেকোন হাউজের বিনিয়োগকারীদেরকে এ জাতীয় সমস্যার হলে, তা দ্রুত ডিএসইকে জানানোর অনুরোধ করেছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর এমডি বলেন, আমার কাছে আজকে একটি মেইল এসেছে। তবে সেটা ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের কিনা, তা নিশ্চিত না। মেইলে ডিএসইর কাছে আর্থিক এবং আইনগত সহযোগিতা চেয়েছে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষ। একইসঙ্গে পাওনাদাররা বিভিন্ন হূমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ডিএসইর কিছু করার নেই। তাদেরকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করতে হবে।

উল্লেখ্য, শহিদ উল্লাহ বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে গত ২৩ জুন থেকে ব্রোকারেজ হাউজে তালা লাগিয়ে আড়ালে রয়েছেন। তাকে খুঁজে না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই হাউজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা। যা পুরো শেয়ারবাজারে আতঙ্ক তৈরী করেছে।

বন্ধ করার আগে ওই হাউজটি থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। তবে এর বিনিময়ে ডিএসইকে দেওয়া চেক বাউন্স করে। ফলে হাউজটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডিএসই। তাদের কাউকে না পেয়ে কেনা শেয়ারগুলো সাময়িকভাবে ফ্রিজ করে রাখে। পরবর্তীতে ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করে পাওনা পরিশোধ করে ডিএসই।

ডিএসইর খোজ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত হাউজটির কারো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে তারা লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অফিসে এখন তালা ঝুলছে।

বিজনেস আওয়ার/২৮ জুন, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীদের ৮২ কোটি টাকার শেয়ার ফ্রিজ

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুন ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ার ও ইউনিট বেচা-কেনার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ক্রেস্ট হাউজের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শহিদ উল্লাহ আকস্মিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আড়ালে চলে গেছে। তবে এরইমধ্যে এ হাউজটির প্রায় ২১ হাজার বিনিয়োগকারীর ৮২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট ফ্রিজ করা হয়েছে। যা বিনিয়োগকারীরা লিঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অন্য যেকোন ব্রোকারেজ হাউজে লেনদেন করতে পারবে।

রবিবার (২৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের ৮২ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট ফ্রিজ করা হলেও বিনিয়োগকারীদের দেনা-পাওনার বিষয়টি এখনো পরিস্কার না। ৮২ কোটি টাকার বাহিরে ওই হাউজে বিনিয়োগকারীদের কত টাকার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে বা নগদ কতটাকা পাওনা রয়েছে, তা পরিস্কার না। তবে ফ্রিজ করা শেয়ারের বাহিরে যদি পাওনা থাকে, তাহলে ট্রেক বিক্রি করে তা মেটানো হবে।

ডিএসইর এই এমডি বলেন, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ একটি পুরাতন প্রতিষ্ঠান। এ হাউজটির আর্থিক হিসাব খারাপ ছিল না। এমনকি মে মাসেও সমন্বিত আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল না। তারপরেও অনাকাঙ্খিতভাবে একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেছে। যা সমাধানে ডিএসই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। ডিএসই থেকে হাউজটির মালিকরা যেনো বিদেশে যেতে না পারে, সেলক্ষে পল্টন থানায় অভিযোগ করা হয় এবং মালিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ করে। এখন তাদের ১০টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।

হাউজটিতে বিনিয়োগকারীদের নিট পাওনার পরিমাণ জানতে ওই হাউজের বিনিয়োগকারীদের সবাইকে তাদের তথ্য ডিএসইকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন ডিএসইর এমডি। এক্ষেত্রে তারা যত দ্রুত জানাবে, তত দ্রুত হাউজটিতে বিনিয়োগকারীদের দায়-দেনা জানা যাবে। তারা ডিএসইকে মেইলে বা সরাসরি উপস্থিত হয়ে তাদের পাওনা সর্ম্পক্যে জানাতে পারবেন।

পাওনা টাকা নিয়ে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হওয়ার অনুরোধ করেছেন কাজী সানাউল হক। তিনি বলেন, ট্রেক ও সম্পদ বিক্রি করে পাওনা সমন্বয় করা হবে। এলক্ষ্যে দ্রুত কাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ওই হাউজের বিনিয়োগকারীরা যখন চেক ডিজঅনার পাচ্ছিল, তখন জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তাই ভবিষ্যতে যেকোন হাউজের বিনিয়োগকারীদেরকে এ জাতীয় সমস্যার হলে, তা দ্রুত ডিএসইকে জানানোর অনুরোধ করেছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর এমডি বলেন, আমার কাছে আজকে একটি মেইল এসেছে। তবে সেটা ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের কিনা, তা নিশ্চিত না। মেইলে ডিএসইর কাছে আর্থিক এবং আইনগত সহযোগিতা চেয়েছে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষ। একইসঙ্গে পাওনাদাররা বিভিন্ন হূমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ডিএসইর কিছু করার নেই। তাদেরকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করতে হবে।

উল্লেখ্য, শহিদ উল্লাহ বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে গত ২৩ জুন থেকে ব্রোকারেজ হাউজে তালা লাগিয়ে আড়ালে রয়েছেন। তাকে খুঁজে না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই হাউজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা। যা পুরো শেয়ারবাজারে আতঙ্ক তৈরী করেছে।

বন্ধ করার আগে ওই হাউজটি থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। তবে এর বিনিময়ে ডিএসইকে দেওয়া চেক বাউন্স করে। ফলে হাউজটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডিএসই। তাদের কাউকে না পেয়ে কেনা শেয়ারগুলো সাময়িকভাবে ফ্রিজ করে রাখে। পরবর্তীতে ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করে পাওনা পরিশোধ করে ডিএসই।

ডিএসইর খোজ নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত হাউজটির কারো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে তারা লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। অফিসে এখন তালা ঝুলছে।

বিজনেস আওয়ার/২৮ জুন, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: