ঢাকা , বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেকর্ড ধান উৎপাদনের পরও বেসামাল চালের বাজার!

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১
  • 58

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : চলতি বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হওয়ার পরও বেসামাল চালের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ২-৪ টাকা বেড়েছে। সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বাজার স্থিতিশীল রাখতে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে টিসিবি।

গত সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়া মোটা পাইজাম ও স্বর্ণা চাল এ সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। চলতি সপ্তাহে ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬৫ টাকা কেজিতে। যা ছিলো ৫০-৫২ টাকা। ভালোমানের ২৮ ও নিম্নমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা কেজিতে।

একইভাবে মাঝারি ধরনের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা কেজি। আর ভালোমানের চিকন নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিতে। এছাড়াও পাইজাম আতপ ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি দামে।

এছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদার ও মিলারদের কাছে থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মিলাররা বলছেন, ধানের দাম হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।

তবে কৃষিবিদদের দাবি, এবার বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কেনার পরও এখন মিলাররা দাম বাড়িয়েছে। আর এই অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ ধান রয়েছে মিলারদের কাছে। মিলাররাই যোগসাজশে চালের দাম বাড়াচ্ছে।

রামপুরা বাজারে চাল কিনতে আসা মুবিনুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে এখন সবাই বাড়িতে থাকেন। তাই চাল আগের চেয়ে অনেক বেশি লাগে। তার ওপর দাম বাড়ছে। আল্লাহই জানেন এই অবস্থায় কতদিন চলবো।

কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী রাইসুল আমান বলেন, মোটা চালের দামও এবার বাড়ছে। গত সপ্তাহে মোটা পাইজাম চাল বিক্রি করেছি ৪৬-৪৮ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫২ টাকা। একই দামে বিক্রি করছি গুটি স্বর্ণা চাল। দাম বাড়ছে, তাই পরিমাণেও কম কিনছে মানুষ।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী মিলন হাওলাদার বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়তি। কারণ কী প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিল মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। মিল মালিকরা কয়দিন পরপরই চালের দাম বাড়াচ্ছে। আর আমাদের হচ্ছে জ্বালা।

এ বিষয়ে বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে এবার বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই চালের দাম বাড়ছে।

তবে মিলারা দাবি করছেন, কৃষকের ধান এখনো তাদের হাতে আসেনি। ধান রয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাতে। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা উচ্চ দামে ধান বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে এক হাজার কিংবা ১০৫০ টাকা মণ ধান কিনতে হচ্ছে মিলারদের। তাই চালও বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সম্প্রতি বলেন, অবৈধভাবে কেউ চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে কি না তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। মাঝারি ও সরু চালেরও দাম বাড়ছে। এটা কিন্তু আমাদের ওএমএসের কার্যক্রম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।

তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি, বেসরকারিভাবে কিছু আমদানি হোক। সেটার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা হবে। আমরা চাই কৃষক এবং ভোক্তা কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই যতটুকু দরকার ততটুকুই আমদানি করা হবে। আপাতত ১০ লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা করছি।

বিজনেস আওয়ার/০৭ আগস্ট, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

রেকর্ড ধান উৎপাদনের পরও বেসামাল চালের বাজার!

পোস্ট হয়েছে : ০১:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : চলতি বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হওয়ার পরও বেসামাল চালের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম ২-৪ টাকা বেড়েছে। সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বাজার স্থিতিশীল রাখতে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে টিসিবি।

গত সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হওয়া মোটা পাইজাম ও স্বর্ণা চাল এ সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। চলতি সপ্তাহে ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৬৫ টাকা কেজিতে। যা ছিলো ৫০-৫২ টাকা। ভালোমানের ২৮ ও নিম্নমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা কেজিতে।

একইভাবে মাঝারি ধরনের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাকা কেজি। আর ভালোমানের চিকন নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিতে। এছাড়াও পাইজাম আতপ ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে বেড়েছে দুই টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি দামে।

এছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। আর চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদার ও মিলারদের কাছে থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে মিলাররা বলছেন, ধানের দাম হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।

তবে কৃষিবিদদের দাবি, এবার বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কেনার পরও এখন মিলাররা দাম বাড়িয়েছে। আর এই অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ ধান রয়েছে মিলারদের কাছে। মিলাররাই যোগসাজশে চালের দাম বাড়াচ্ছে।

রামপুরা বাজারে চাল কিনতে আসা মুবিনুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে এখন সবাই বাড়িতে থাকেন। তাই চাল আগের চেয়ে অনেক বেশি লাগে। তার ওপর দাম বাড়ছে। আল্লাহই জানেন এই অবস্থায় কতদিন চলবো।

কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী রাইসুল আমান বলেন, মোটা চালের দামও এবার বাড়ছে। গত সপ্তাহে মোটা পাইজাম চাল বিক্রি করেছি ৪৬-৪৮ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৫২ টাকা। একই দামে বিক্রি করছি গুটি স্বর্ণা চাল। দাম বাড়ছে, তাই পরিমাণেও কম কিনছে মানুষ।

রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী মিলন হাওলাদার বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়তি। কারণ কী প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিল মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। মিল মালিকরা কয়দিন পরপরই চালের দাম বাড়াচ্ছে। আর আমাদের হচ্ছে জ্বালা।

এ বিষয়ে বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে এবার বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই চালের দাম বাড়ছে।

তবে মিলারা দাবি করছেন, কৃষকের ধান এখনো তাদের হাতে আসেনি। ধান রয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাতে। আর মৌসুমি ব্যবসায়ীরা উচ্চ দামে ধান বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে এক হাজার কিংবা ১০৫০ টাকা মণ ধান কিনতে হচ্ছে মিলারদের। তাই চালও বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সম্প্রতি বলেন, অবৈধভাবে কেউ চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে কি না তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। মাঝারি ও সরু চালেরও দাম বাড়ছে। এটা কিন্তু আমাদের ওএমএসের কার্যক্রম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।

তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি, বেসরকারিভাবে কিছু আমদানি হোক। সেটার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি। চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা হবে। আমরা চাই কৃষক এবং ভোক্তা কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই যতটুকু দরকার ততটুকুই আমদানি করা হবে। আপাতত ১০ লাখ টন চাল আমদানির চিন্তা করছি।

বিজনেস আওয়ার/০৭ আগস্ট, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: