বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ঊর্ধ্বমুখী সবজি রফতানির বাজারে লাগাম টেনে ধরেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বছরের ব্যবধানে কমেছে চার হাজার টনের বেশি সবজি রফতানি। টাকার অঙ্কে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৮১ কোটি টাকা (ডলারপ্রতি ৮৪.৬৭ টাকা ধরে)।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রফতানি উইং ও বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য এমন চিত্র উঠে এসেছে।
সবজি রফতানিকারকদের দাবি, পরিবহন সমস্যার সমাধান হলে সবজি রফতানি অন্য সময়ের চেয়ে আরও বেড়ে যেত। করোনার কারণে উড়োজাহাজ ও কার্গোসেবা বন্ধ থাকায় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে সবজি রফতানি কমে গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, দেশে উৎপাদিত ৪৫টিরও বেশি ধরনের সবজি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে। প্রতি বছরই নতুন নতুন সবজি যোগ হচ্ছে রফতানির তালিকায়। অনেক নতুন উদ্যোক্তা এ খাতে বিনিয়োগ করছেন।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬৪ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩৮৮ কোটি টাকা) মূল্যের ফল ও সবজি রফতানি হয়। কিন্তু করোনার আঘাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি কমে ১১৯ মিলিয়ন ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০০৭ কোটি টাকা) গিয়ে ঠেকে। এ হিসাবে প্রায় ৪৫ মিলিয় ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩৮১ কোটি টাকা কম রফতানি হয়েছে
২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট সবজি রফতানি হয় ৫৮ হাজার ৬৭৬ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনার কারণে তা কমে দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৮০০ টনে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় একই পরিমাণ অর্থাৎ ৫৫ হাজার ৮৪৪ টন সবজি রফতানি হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ মুনসুর বলেন, বর্তমানে সবজি রফতানিতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো পরিবহনের ব্যবস্থা। অন্যসব সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। পরিবহন সমস্যার কারণে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছি না। এ কারণে আমাদের রফতানিও কমে গেছে।
তিনি বলেন, অধিকাংশ রফতানিযোগ্য পণ্য উড়োজাহাজের মাধ্যমে পাঠানো হয়। করোনার কারণে অনেক এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোনো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট কমে গেছে। এটিই হলো সবচেয়ে বড় বাধা। আমাদের কিন্তু অর্ডার আছে, কিন্তু পরিবহন সমস্যার কারণে পাঠাতে পারছি না।
রফতানিকারকরা জানান, শুধু পরিবহন সমস্যা নয়, উড়োজাহাজের ভাড়াও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। যেমন- ইংল্যান্ডে প্রতি কেজি সবজি রফতানিতে আগে খরচ হতো ১৫০ টাকা। বর্তমানে সেখানে ৩০০ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। এরপরও ফ্লাইট পাওয়া যায় না।
এছাড়া সিঙ্গাপুর, হংকংসহ একাধিক দেশ অনেক আগে থেকেই আকাশপথে যাতায়াত বন্ধ রেখেছে। ফলে হাতের নাগালে পণ্য ও অর্ডার থাকার পরও রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনার সংকট না কাটলে এমন পরিস্থিতি যাবে না।
মুনসুর জেনারেল ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী এম মুনসুর বলেন, দু-একটি ফ্লাইট এখনও চলছে। কিন্তু সেখানে জায়গার স্বল্পতার কারণে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেকগুলো দেশে সবজির অর্ডার থাকার পরও সরবরাহ করতে পারছি না।
ইকবাল হোসেন জানান, রফতানির অর্ডার আছে কিন্তু পরিবহন সমস্যা এবং অনেক বেশি ভাড়ার কারণে শতভাগ রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে একেবারে যে থেমে আছে বিষয়টি এমন নয়। যেখানে পাঁচ টন রফতানি হতো সেখানে তিন বা চার টন রফতানি হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের (আমদানি ও রফতানিকারক) পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনার কারণে সবজি রফতানিতে বেশ প্রভাব পড়েছে। মূলত পরিবহন সমস্যার কারণে রফতানিকারকরা সামনে এগোতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, আমরা রফতানিকারকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনলাইন কার্যক্রম চালু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
বিজনেস আওয়ার/১৪ আগস্ট, ২০২১/এ