বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের বাজারে ফের কেজিতে এক টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। জরুরি এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলেন, চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে। এ অস্থিরতা রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের ওপর নজরদারিতে গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।
সোমবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকায়, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, পাইজাম ৪৬ থেকে ৪৮ ও লতা ৫৫-৫৬ টাকা। এছাড়া বিরি-২৮ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং স্বর্ণা ৪১ থেকে ৪৩ টাকায়। এসব চাল একদিন আগেও এক টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। আর ১৫ আগে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল।
পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট মানভেদে ৫৩, ৫৬,৫৯ টাকা। যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫২,৫৫,৫৮ টাকা। আর গত ১৫ দিন আগেছিলো ৫৫, ৫৮, ৬১ টাকা। নাজিরশাইল ৫৭, ৬০ ও ৬২ টাকা। একদিন আগে এক টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।
২৮ চাল প্রতিকেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, হাস্কী নাজির ৪৬, ৪৭, ৫০ টাকা। কাজল লতা ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। পাইজাম ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা। যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে এক টাকা কমে। ১৫ দিন আগে ছিলে এর থেকেও কেজিতে ৩ টাকা বেশি।
জানা গেছে, বোরো মৌসুমে আনুমানিক প্রায় দুই কোটি টনেরও বেশি ধান কাটা হয়েছে। তবুও চালের দাম কমেনি। বোরো মৌসুমের আগে সরকারের মজুত সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছানোর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়ে ৫২ টাকা হয়ে যায়।
সরকার স্থানীয় বাজার থেকে নয় দশমিক ৩২ টন বোরো ও তিন দশমিক ৫০ লাখ টন অন্যান্য জাতের চাল সংগ্রহ করে মজুত বাড়ালেও বাজারে দাম আর কমেনি। গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের হাতে সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৭ দশমিক ২৫ লাখ টন।
এর মধ্যে ১৪ দশমিক নয় লাখ টন চাল এবং বাকিটা ধান, গম ও আটা। গত বছর আগস্টের শেষ নাগাদ সর্বমোট খাদ্য মজুত ছিল ১৩ দশমিক ১৪ লাখ টন, এর মধ্যে নয় দশমিক ৮৫ লাখ টন চাল ছিল।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, আমরা আশাবাদী যে, দাম আরও কমে আসবে। আমরা আমন মৌসুমে ধান কাটার আগেই আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেব, যাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৭ দফায় মোট সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাল আমদানি করে তা বাজারে বিক্রি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম স্থানীয় বাজারের চেয়ে কম। চাল আমদানি করা হলে তা ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এতে কৃষকের কোনো উপকার হবে না। সরকারকে এই বিষয়টির ওপর নজর দিতে হবে।
আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে দেশে চাল উৎপাদনের খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এ কারণে সরকারের উচিত কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া। এ ধরনের উদ্যোগ না নেওয়া হলে স্থানীয় কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা হবে না।
এ বিষয়ে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, আমদানির খবরে চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। তবে আমদানির আবেদনের তারিখ শেষ হয়েছে ২৫ আগস্ট। এরপর আর কোন আবেদন দেওয়া হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা ভেবেছে আর চাল আমদানি করা হবে না। এছাড়া আমদানিকৃত চাল একটু ধীরগতিতে বাজারে প্রবেশ করেছে। এই আমদানি করা চাল যখন পুরোপুরি বাজারে চলে আসবে তখন দাম আরও কমে যাবে।
ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদ বলেন, মূলত অসাধু ব্যবসায়ী ও মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়েছে। তারা ধান কিনে মজুদ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার যখন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে তখন চালের দাম প্রকার ভেদে বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমিয়ে দেয়। এখন এলসি করার তারিখ শেষ হওয়ায় আজ (৩০ আগস্ট) আবার চালের দাম বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে চালের দাম আবার বেড়েছে।
রায়সাহেব বাজারে এক খুচরা চালের ব্যবসায়ী বলেন, গত এক সপ্তাহে দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছিল। কিন্তু সোমবার থেকে আবার কেজিতে ১ টাকা করে বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে সূত্রাপুর বাজারের দুই চাল বিক্রেতা জানান, চাল আমদানির ফলে গত দুই সপ্তাহে দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। কিন্তু সোমবার থেকে আবার এক টাকা করে বেড়েছে চালের দাম। মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় পাইকারিতে দাম বাড়ছে। আর এ কারণেই খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দাম দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে এবং বিক্রি করতে হচ্ছে।
বিজনেস আওয়ার/৩০ আগস্ট, ২০২১/এ