ঢাকা , বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘দামের রাজা’ ইলিশ!

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • 4

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাজারে ব্যবসায়ীদের বরফের খাঁচায় শোভা পাচ্ছে মাছের রাজা ইলিশ। কিন্তু বাজারে গিয়ে দাম শুনে হোঁচট খাচ্ছেন ক্রেতারা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ কেনা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ক্রেতাদের। মাছের রাজার সঙ্গে দামেরও রাজা ইলিশ। অথচ প্রতিবছরই বাড়ছে এ ইলিশের উৎপাদন। ক্রেতাদের প্রশ্ন, ইলিশের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে দামও কেন বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশের বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম, ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাহিদা, সময় মতো জালে ইলিশ ধরা না পড়া এবং খুচরা বাজারে কৃত্তিম সঙ্কট তৈরি- এ তিন কারণেই খুচরা বাজারে দামের রাজা হয়ে উঠেছে ইলিশ।

রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে ইলিশ নানা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা।

এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরের নদীকেন্দ্রে ইলিশের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার বলেন, পাইকারি বাজারে আপনি প্রচুর ইলিশ দেখবেন কিন্তু ঢাকাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে কিনতে গেলে মনে হবে ইলিশের সরবরাহ কম। আসলে ইলিশের সরবরাহ কম না, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর দখলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইলিশ মজুতসহ বাজার ব্যবস্থাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে তারা। অক্টোবর মাস আসছে। ওই সময়ে মা ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এ সময় জেলেরা ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই জানেন। ফলে তারা অনৈতিকভাবে ইলিশ মাছ মজুত করে রাখে। পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রির আশায়।

রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সরেজমিনে খুচরা ইলিশ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও তথ্য পাওয়া গেল, বাজারে ইলিশের ঘাটতি নাই, মূলত এক শ্রেণির ব্যবসায়ীই নিয়ন্ত্রণ করছে ইলিশের বাজার।

রাজধানীর উত্তরার জহুরা মার্কেটের এক ইলিশ বিক্রেতা বলেন, সব ব্যবসাতেই একটা সিন্ডিকেট কাজ করে। আর ইলিশ তো সোনার হরিণ। এখানে সিন্ডিকেট থাকাটাই স্বাভাবিক। তারা যখন যে দামে কিনেন তখন সেরকম দামেই বিক্রি করার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যেও দুই একজন আছেন, কৃত্তিম সঙ্কট দেখিয়ে বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করেন।

ইলিশ নিয়ে গবেষণা করা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (নদী কেন্দ্র) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান মনে করেন, ইলিশের ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দাম বাড়ার এটাও অন্যতম কারণ। এখন তরুণ উদ্যোক্তারা অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সারাদেশে ইলিশ বিক্রি করছেন। ফলে চাহিদাও বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া জেলেদের খরচসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুর ব্যয়ও কিন্তু বাড়ছে। সে হিসেবে ইলিশের বাজারে একটু প্রভাব পড়তে পারে। তবে এখন সময় এসেছে ইলিশের বাজার ব্যবস্থা ও উৎপাদন কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দেওয়ার। নদীর নাব্যতা বাড়ানোসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নিলে ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি বাড়ানো সম্ভব।

ইলিশ বিক্রেতারাও জানান , বাজারে বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ক্রেতাদের অন্যতম পছন্দের তালিকায় ইলিশ যোগ হয়েছে। তাছাড়া এ সময়টাতেই ইলিশ মাছ বেশি কেনেন ক্রেতারা। সে অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম। সব মিলিয়ে এরকম দাম হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

‘দামের রাজা’ ইলিশ!

পোস্ট হয়েছে : ০১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাজারে ব্যবসায়ীদের বরফের খাঁচায় শোভা পাচ্ছে মাছের রাজা ইলিশ। কিন্তু বাজারে গিয়ে দাম শুনে হোঁচট খাচ্ছেন ক্রেতারা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ কেনা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে ক্রেতাদের। মাছের রাজার সঙ্গে দামেরও রাজা ইলিশ। অথচ প্রতিবছরই বাড়ছে এ ইলিশের উৎপাদন। ক্রেতাদের প্রশ্ন, ইলিশের উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে দামও কেন বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশের বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম, ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাহিদা, সময় মতো জালে ইলিশ ধরা না পড়া এবং খুচরা বাজারে কৃত্তিম সঙ্কট তৈরি- এ তিন কারণেই খুচরা বাজারে দামের রাজা হয়ে উঠেছে ইলিশ।

রাজধানীর উত্তরাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে ইলিশ নানা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা।

এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরের নদীকেন্দ্রে ইলিশের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার বলেন, পাইকারি বাজারে আপনি প্রচুর ইলিশ দেখবেন কিন্তু ঢাকাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে কিনতে গেলে মনে হবে ইলিশের সরবরাহ কম। আসলে ইলিশের সরবরাহ কম না, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর দখলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইলিশ মজুতসহ বাজার ব্যবস্থাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে তারা। অক্টোবর মাস আসছে। ওই সময়ে মা ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এ সময় জেলেরা ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই জানেন। ফলে তারা অনৈতিকভাবে ইলিশ মাছ মজুত করে রাখে। পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বাজারে বিক্রির আশায়।

রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সরেজমিনে খুচরা ইলিশ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও তথ্য পাওয়া গেল, বাজারে ইলিশের ঘাটতি নাই, মূলত এক শ্রেণির ব্যবসায়ীই নিয়ন্ত্রণ করছে ইলিশের বাজার।

রাজধানীর উত্তরার জহুরা মার্কেটের এক ইলিশ বিক্রেতা বলেন, সব ব্যবসাতেই একটা সিন্ডিকেট কাজ করে। আর ইলিশ তো সোনার হরিণ। এখানে সিন্ডিকেট থাকাটাই স্বাভাবিক। তারা যখন যে দামে কিনেন তখন সেরকম দামেই বিক্রি করার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যেও দুই একজন আছেন, কৃত্তিম সঙ্কট দেখিয়ে বেশি দামে ইলিশ বিক্রি করেন।

ইলিশ নিয়ে গবেষণা করা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (নদী কেন্দ্র) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান মনে করেন, ইলিশের ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। দাম বাড়ার এটাও অন্যতম কারণ। এখন তরুণ উদ্যোক্তারা অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সারাদেশে ইলিশ বিক্রি করছেন। ফলে চাহিদাও বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া জেলেদের খরচসহ আনুষঙ্গিক সবকিছুর ব্যয়ও কিন্তু বাড়ছে। সে হিসেবে ইলিশের বাজারে একটু প্রভাব পড়তে পারে। তবে এখন সময় এসেছে ইলিশের বাজার ব্যবস্থা ও উৎপাদন কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দেওয়ার। নদীর নাব্যতা বাড়ানোসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নিলে ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি বাড়ানো সম্ভব।

ইলিশ বিক্রেতারাও জানান , বাজারে বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ক্রেতাদের অন্যতম পছন্দের তালিকায় ইলিশ যোগ হয়েছে। তাছাড়া এ সময়টাতেই ইলিশ মাছ বেশি কেনেন ক্রেতারা। সে অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম। সব মিলিয়ে এরকম দাম হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: