বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ার ও ইউনিট কেনা-বেচা করার জন্য ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) বিক্রি করতে চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
বৃহস্পতিবার (০২ জুলাই) ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার আলোকে আগামি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রস্তাব আকারে পাঠাবে ডিএসই।
ডিএসইর এক পরিচালক বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আজকের সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নতুন ট্রেক ইস্যু করার ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা আবেদন ফি ও ২ কোটি টাকা নিবন্ধন ফি ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া ট্রেক নেওয়ার জন্য কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জে ৩ কোটি টাকা জামানত দিতে হবে। এ বিষয়গুলো ট্রেক বিধিমালা প্রণয়নে কমিশনে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হবে।
এর আগে গত ২৫ মার্চ ডিএসইর সম্মতি নিয়ে ট্রেক সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছিল বিএসইসি। এতে ট্রেক পেতে ৫ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি ও ১ লাখ টাকা আবেদন ফি নির্ধারন করা হয়েছিল। এছাড়া কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন ও ২ কোটি টাকা জামানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
ডিএসইর মতামত নিয়ে ওই খসড়া প্রকাশ করা হলেও পরবর্তীতে স্টক এক্সচেঞ্জটির শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের ৩জন এর বিরোধীতা করেন। এছাড়া ডিএসইর সম্মতির কারনে স্টক এক্সচেঞ্জটিকে লিগ্যাল নোটিশ দেয় ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।
ওইসময় ট্রেক ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তোলা হয় ফি নির্ধারন নিয়ে। প্রকাশিত খসড়ার ১ লাখ টাকার আবেদন ফি ও ৫ লাখ টাকা নিবন্ধন ফির পরিমাণ অনেক কম হয়েছিল বলে প্রশ্ন তোলা হয়। তাদের মতে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে ডিএসইর একটি মেম্বারশীপ বিক্রি করা হয়েছে ৩২ কোটি টাকার উপরে। এছাড়া স্ট্যাটেজিক ইনভেস্টরদের কাছে ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির দর হিসাবে একটি ব্রোকারেজ হাউজের দাম হয় ১৫ কোটি। সেখানে ৬ লাখ টাকায় ট্রেক ইস্যু করা হবে। এটা কিভাবে সম্ভব? তাহলে বর্তমান মেম্বারশীপের ভ্যালু কোথায় নেমে আসবে।
এ নিয়ে ডিএসইর পরিচালকসহ কেউ কেউ বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে আলাপ করেন এবং ওই মুহূর্তে বিধিমালাটি প্রণয়ন না করার দাবি করেন। ওই দাবির আলোকে এবং সরকার ঘোষিত ছুটির কারনে ট্রেক বিধিমালা খসড়ার গেজেটে প্রকাশ করতে না পারা ও জনমত জরীপের সময় পার হয়ে যাওয়ায় গত ২৯ এপ্রিল ৭২৫তম নিয়মিত কমিশন সভায় জনমত যাছাইয়ে নতুন করে সময়সীমা নির্ধারন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিগত কমিশন। এ সিদ্ধান্তের জন্য খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে ডিবিএ ধন্যবাদ জানায়। এছাড়া ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, শাকিল রিজভী ও মোহাম্মদ শাহজাহান ধন্যবাদ জানান।
ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনের ১৬ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের তারিখ হইতে ৫ বছর অতিক্রান্ত হবার পরে স্টক এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদনকারীর অনুকূলে ট্রেক ইস্যু করা যাইবে। কিন্তু ডিএসই ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হওয়ার পরে প্রায় সাড়ে ৬ বছর পার হয়ে গেলেও স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে ট্রেক ইস্যু করার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিএসইসি ডিএসইর পর্ষদের সম্মতি নিয়ে ট্রেক ইস্যুর লক্ষ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছিল। এতে ডিএসইর পর্ষদের ৩ জনের আপত্তি থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সম্মতি ছিল।
উল্লেখ্য, কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশনের অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক কিনতে পারবেন। গ্রাহকদের পক্ষে শেয়ার বেচা-কেনা করে দেওয়ার ব্যবসা করতে এই ট্রেক পাওয়া যাবে। তবে এই ট্রেকের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার হবেন না। শুধুমাত্র শেয়ার ও ইউনিট বেচা-কেনা করার সুযোগ পাবেন। কোন প্রতিষ্ঠান ট্রেক পেলে তা হস্তান্তর করা যাবে না। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ অনুযায়ী স্টক-ডিলার বা স্টক-ব্রোকার’র সনদ নিতে হবে। এই সনদ নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে ব্যবসা শুরু করতে না পারলে ট্রেক বাতিল হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন…..
ট্রেক বিধিমালা কার্যক্রম স্থগিত করায় খায়রুল কমিশনকে ডিবিএ’র ধন্যবাদ
ট্রেক বিধিমালা প্রণয়নে নতুন সময়সীমা নির্ধারন করা হবে
এবার ট্রেক বিধিমালা নিয়ে ডিএসইতে বিভক্তি
ট্রেক বিধিমালা নিয়ে ডিএসইকে ডিবিএ’র লিগ্যাল নোটিশ
ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট খসড়া বিধিমালা জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রকাশ
বিজনেস আওয়ার/০২ জুলাই, ২০২০/আরএ
2 thoughts on “দুই কোটি ১০ লাখ টাকায় ট্রেক বিক্রি করতে চায় ডিএসই”