ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারে লোকসানে এগিয়ে সরকারী কোম্পানি

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৯
  • 62

রেজোয়ান আহমেদ : সরকারী বিভিন্ন কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে পারলেই শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়বে এবং এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে তেমনটি না। বিদ্যমান তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১০ শতাংশ লোকসানে থাকলেও সরকারী কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সে হার ৩৯ শতাংশ। এরমধ্যে আবার ১১ শতাংশ সরকারী কোম্পানির অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এছাড়া ১৭ শতাংশ কোম্পানি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। সার্বিক এমন পারফরমেন্সের পরেও ২-৪টি কোম্পানির কথা বিবেচনা করে সরকারী অন্যসব কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু সরকারী কোম্পানির ব্যবসা এবং লভ্যাংশ প্রদানের হার অনেক ভালো। এসব কোম্পানির মধ্যে পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম উল্লেখযোগ্য। আর এইসব কোম্পানির পারফরমেন্স মাথায় রেখেই অন্যসব সরকারী অতালিকাভুক্ত কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য গত কয়েক বছর ধরে দাবি করা হচ্ছে। আর এই দাবির আলোকে অর্থমন্ত্রণালয় থেকেও নিয়মিত আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। যদিও তা দীর্ঘদিনে বাস্তবায়িত হয়নি।  

এদিকে শেয়ারবাজারে পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মতো ভালো কোম্পানি যেমন আছে, ঠিক একইভাবে সরকারী ঝিলবাংলা সুগার মিলস ও শ্যামপুর সুগার মিলসের মতো দূর্বল কোম্পানিও আছে। যেগুলো লভ্যাংশ দেওয়া তো দূরে থাক, নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু সরকারী বিভিন্ন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার দাবির ক্ষেত্রে এইসব কোম্পানির কথা কখনো ভাবা হচ্ছে না।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর সভাপতি শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বাছাই করে সরকারী বিভিন্ন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। ঢালাওভাবে সরকারী কোম্পানি আনার দাবি করলে হবে না। এছাড়া আনার ক্ষেত্রে ওইসব কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। যাতে শুধুমাত্র আমলা নির্ভর না হয়। অন্যথায় সরকারী কোম্পানি শেয়ারবাজারে এনে উপকার হবে না।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫৬টি কোম্পানির মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত ও অধিকাংশ মালিকানার কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। এরমধ্যে ৭টি বা ৩৯ শতাংশ কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত অর্থবছরে লোকসান হয়েছে। তবে সামগ্রিক শেয়ারবাজারে লোকসানের সংখ্যা ৩৬টি বা ১০ শতাংশ।

সরকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩টি বা ১৭ শতাংশ কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয় না। এছাড়া নিকট ভবিষ্যতে ওই কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

এদিকে ঝিলবাংলা সুগার মিলস ও শ্যামপুর সুগার মিলস নিয়মিতভাবে বড় লোকসান গুণছে। এ কোম্পানি দুটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে সরকারী আর্থিক সহায়তা ছাড়া কোম্পানি দুটি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক।

নিম্নে সরকারী কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ অর্থবছর নিয়ে প্রকাশিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস), লভ্যাংশ ঘোষণা ও ২১ অক্টোবরের শেয়ার দর তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামইপিএসলভ্যাংশবাজার দর
ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস৩৬.২৩১০০% নগদ১১৪০.৬০
পদ্মা অয়েল৩৪.১৮১৩০% নগদ২১০.৬০
মেঘনা পেট্রোলিয়াম৩৩.৩০১৪০% নগদ১৮৪.৫০
যমুনা অয়েল২৫.৪৫১৩০% নগদ১৬০.২০
রেনউইক যজ্ঞেশ্বর৫.৩১১২% নগদ১৪৭৯
পাওয়ার গ্রীড৪.৭৩১৭% নগদ৫৭.৮০
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন৩.৬২১০% নগদ৪৮.৬০
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল৩.৫৫১৬% নগদ১০৬.৮০
তিতাস গ্যাস৩.৪৩২৫% নগদ৩৪.৯০
ডেসকো১.২৭১০% নগদ৩৮.২০
রূপালি ব্যাংক১.০৯১০% বোনাস৩০.৫০
ইস্টার্ন কেবলস(০.১৫)১০% বোনাস২৬৮
এটলাস বাংলাদেশ(১.২৩)১০% বোনাস১৩১.৮০
উসমানিয়া গ্লাস(১.৫০)১০% বোনাস৮৪.৯০
ন্যাশনাল টিউবস(২.০৫)১০% বোনাস১৭৭.৯০
বিডি সার্ভিসেস(৫.৬৭)০০৫.২০
ঝিলবাংলা সুগার মিলস(৮০.৮২)০০৩৩
শ্যামপুর সুগার মিলস(৯৩.৮২)০০২৩

উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে সরকার ও প্রাইভেট সেক্টেরের যৌথভাবে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) গঠিত ৩টি কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল টি ও এমজেএল বাংলাদেশ।

বিজনেস আওয়ার/২৩ অক্টোবর, ২০১৯/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শেয়ারবাজারে লোকসানে এগিয়ে সরকারী কোম্পানি

পোস্ট হয়েছে : ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

রেজোয়ান আহমেদ : সরকারী বিভিন্ন কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে পারলেই শেয়ারবাজারের গভীরতা বাড়বে এবং এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে তেমনটি না। বিদ্যমান তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১০ শতাংশ লোকসানে থাকলেও সরকারী কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সে হার ৩৯ শতাংশ। এরমধ্যে আবার ১১ শতাংশ সরকারী কোম্পানির অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এছাড়া ১৭ শতাংশ কোম্পানি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। সার্বিক এমন পারফরমেন্সের পরেও ২-৪টি কোম্পানির কথা বিবেচনা করে সরকারী অন্যসব কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু সরকারী কোম্পানির ব্যবসা এবং লভ্যাংশ প্রদানের হার অনেক ভালো। এসব কোম্পানির মধ্যে পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম উল্লেখযোগ্য। আর এইসব কোম্পানির পারফরমেন্স মাথায় রেখেই অন্যসব সরকারী অতালিকাভুক্ত কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য গত কয়েক বছর ধরে দাবি করা হচ্ছে। আর এই দাবির আলোকে অর্থমন্ত্রণালয় থেকেও নিয়মিত আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। যদিও তা দীর্ঘদিনে বাস্তবায়িত হয়নি।  

এদিকে শেয়ারবাজারে পদ্মা অয়েল, যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মতো ভালো কোম্পানি যেমন আছে, ঠিক একইভাবে সরকারী ঝিলবাংলা সুগার মিলস ও শ্যামপুর সুগার মিলসের মতো দূর্বল কোম্পানিও আছে। যেগুলো লভ্যাংশ দেওয়া তো দূরে থাক, নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু সরকারী বিভিন্ন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার দাবির ক্ষেত্রে এইসব কোম্পানির কথা কখনো ভাবা হচ্ছে না।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর সভাপতি শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বাছাই করে সরকারী বিভিন্ন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। ঢালাওভাবে সরকারী কোম্পানি আনার দাবি করলে হবে না। এছাড়া আনার ক্ষেত্রে ওইসব কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। যাতে শুধুমাত্র আমলা নির্ভর না হয়। অন্যথায় সরকারী কোম্পানি শেয়ারবাজারে এনে উপকার হবে না।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫৬টি কোম্পানির মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত ও অধিকাংশ মালিকানার কোম্পানির সংখ্যা ১৮টি। এরমধ্যে ৭টি বা ৩৯ শতাংশ কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত অর্থবছরে লোকসান হয়েছে। তবে সামগ্রিক শেয়ারবাজারে লোকসানের সংখ্যা ৩৬টি বা ১০ শতাংশ।

সরকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩টি বা ১৭ শতাংশ কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয় না। এছাড়া নিকট ভবিষ্যতে ওই কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

এদিকে ঝিলবাংলা সুগার মিলস ও শ্যামপুর সুগার মিলস নিয়মিতভাবে বড় লোকসান গুণছে। এ কোম্পানি দুটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে নিরীক্ষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে সরকারী আর্থিক সহায়তা ছাড়া কোম্পানি দুটি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক।

নিম্নে সরকারী কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ অর্থবছর নিয়ে প্রকাশিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস), লভ্যাংশ ঘোষণা ও ২১ অক্টোবরের শেয়ার দর তুলে ধরা হল-

কোম্পানির নামইপিএসলভ্যাংশবাজার দর
ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস৩৬.২৩১০০% নগদ১১৪০.৬০
পদ্মা অয়েল৩৪.১৮১৩০% নগদ২১০.৬০
মেঘনা পেট্রোলিয়াম৩৩.৩০১৪০% নগদ১৮৪.৫০
যমুনা অয়েল২৫.৪৫১৩০% নগদ১৬০.২০
রেনউইক যজ্ঞেশ্বর৫.৩১১২% নগদ১৪৭৯
পাওয়ার গ্রীড৪.৭৩১৭% নগদ৫৭.৮০
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন৩.৬২১০% নগদ৪৮.৬০
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল৩.৫৫১৬% নগদ১০৬.৮০
তিতাস গ্যাস৩.৪৩২৫% নগদ৩৪.৯০
ডেসকো১.২৭১০% নগদ৩৮.২০
রূপালি ব্যাংক১.০৯১০% বোনাস৩০.৫০
ইস্টার্ন কেবলস(০.১৫)১০% বোনাস২৬৮
এটলাস বাংলাদেশ(১.২৩)১০% বোনাস১৩১.৮০
উসমানিয়া গ্লাস(১.৫০)১০% বোনাস৮৪.৯০
ন্যাশনাল টিউবস(২.০৫)১০% বোনাস১৭৭.৯০
বিডি সার্ভিসেস(৫.৬৭)০০৫.২০
ঝিলবাংলা সুগার মিলস(৮০.৮২)০০৩৩
শ্যামপুর সুগার মিলস(৯৩.৮২)০০২৩

উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে সরকার ও প্রাইভেট সেক্টেরের যৌথভাবে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) গঠিত ৩টি কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে- আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল টি ও এমজেএল বাংলাদেশ।

বিজনেস আওয়ার/২৩ অক্টোবর, ২০১৯/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: