ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার আইসিবি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রয় করল আইসিবির ৫ প্রতিষ্ঠান

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • 67

রেজোয়ান আহমেদ : গত বছরের ৩য় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৭) আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের পরে চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ১৭) বেশি দামে বিক্রয় করেছে ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগি ৫ প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করলেও সাধারন বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুণেছে। তবে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মতো ‘জেড’ ক্যাটাগরি ও দীর্ঘদিনের লোকসানি কোম্পানির শেয়ারে এভাবে আইসিবির সহযোগি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়-বিক্রয় করা ঠিক না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে। একইসঙ্গে সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় উন্নতিরও কোন লক্ষণ নেই। এই অবস্থায় ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করে আইসিবির ৫ প্রতিষ্ঠান। যাতে শেয়ারটিতে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি হয়। এরপরে শেয়ারটির দর বৃদ্বি পায়। এবং ওই সময় আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার বিক্রয় করে দেয়। এরপরে শেয়ার দর কমে আবার আগের স্থানে চলে আসে। এমতাবস্থায় আইসিবি লাভবান হলেও কাউকে না কাউকে লোকসান গুণতে হয়েছে। আইসিবির এমন আচরনে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এমতাবস্থায় আইসিবির এ জাতীয় শেয়ারে বিনিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

পোর্টফোলিও অনুযায়ি, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে ও সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) বিনিয়োগ বাড়ায় আইসিবির সহযোগি ৫ প্রতিষ্ঠান। তবে এরপরের ৩ মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৭) শেয়ারটি বিক্রয় করেছে।

আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ড, বাংলাদেশ ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল পেনশন হোল্ডারস ইউনিট ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি ফান্ড ও আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় ফান্ড।

নিম্নে আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে আইসিবির ৫ প্রতিষ্ঠানের ২০১৭ সালের শেষ ৩টি প্রান্তিকের ক্রয় মূল্যে বিনিয়োগের পরিমাণ তুলে ধরা হল-

নাম৩০ জুন ১৭৩০ সেপ্টেম্বর ১৭৩১ ডিসেম্বর ১৭
আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ড১.৫৬ কোটি৩.৯৮ কোটি১.১৭ কোটি
বাংলাদেশ ফান্ড০.৮৪ কোটি১.২০ কোটি০.০৬ কোটি
আইসিবি এএমসিএল পেনশন হোল্ডারস০.০৭ কোটি০.১৯ কোটি০.০৬ কোটি
আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি০.২২ কোটি০.৪৫ কোটি০.০০
আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় ফান্ড০.১৩ কোটি০.২০ কোটি০.০৭ কোটি

দেখা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর থেকে দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় অবস্থান করে লোকসানি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির ১৫ নভেম্বরের ৫.২০ টাকার শেয়ার ২৭ নভেম্বর লেনদেন শেষে দাড়াঁয় ৮.১০ টাকায়। এ হিসাবে ৮ কার্যদিবসে শেয়ার দর বাড়ে ২.৯০ টাকা বা ৫৬ শতাংশ। তবে এই দর বাড়ার পেছনে কোন কারণ খুজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। যাতে ব্যাংকটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে ২০ ও ২৩ নভেম্বর দুই দফায় ডিএসইর ওয়েবসাইটে সচেতনতামূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে ব্যাংকটির শেয়ার চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ৬ টাকায় দাড়িঁয়েছে।

এদিকে ব্যাংকটি আগের বছরগুলোর ন্যায় ২০১৭ সালও ব্যবসায় লোকসান গুণছে। এ বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির লোকসান হয়েছে ২৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৪২ টাকা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারে সহযোগিতা করার পাশাপাশি আইসিবির মুনাফাও করতে হয়। তারপরেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইসিবি ও এর ফান্ডগুলোর সতর্ক হওয়া উচিত। একইসঙ্গে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারে এভাবে  কেনা-বেচা করা ঠিক না বলে মনে করেন তিনি।

এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব এইচ মজুমদার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আইসিবির ফান্ডগুলো আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের মতো জাঙ্ক শেয়ারে ক্রয়-বিক্রয় করে দাম উঠা-নামার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে না। এতে আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করতে পারলেও কাউকে না কাউকে লোকসান গুণতে হয়। এক্ষেত্রে সাধারনত সাধারন বিনিয়োগকারীরাই এই উঠা-নামার ফাঁদে পড়ে। তাই আইসিবিসহ তার ফান্ডগুলোর উচিত ভালো শেয়ারে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে উৎসাহিত করা। কিন্তু নিজেরাই যদি জাঙ্ক শেয়ারে জড়িয়ে পরে, সেটা শেয়ারবাজারের জন্য দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত করা উচিত।

আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্টের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) গোলাম রাব্বানি বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ২০১০-১১ সালে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের অনেক শেয়ার কেনা হয়েছিল। ওই সময় শেয়ারবাজারের ধস ঠেকাতে এক প্রকার যেকোন কোম্পানির শেয়ার কেনার অবস্থাও হয়েছিল। যাতে পরে দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হয়। সেই লোকসান কমাতে ২০১৭ সালে কম দামে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনে সমন্বয় করা হয়। পরবর্তীতে দাম বাড়লে তা বিক্রয় করা হয়।

সমন্বয়ের জন্য ভবিষ্যত নাই এমন শেয়ারে কেনা কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নে বলেন, আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও নিজস্ব অর্থায়নে চলি। তারপরেও শেয়ার কেনা-বেচা নিয়ে অর্থমন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চাঁপ থাকে। এছাড়া শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার কথাও বিবেচনা করতে হয়।

আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ড : গত বছরের ৩০ জুন আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ডের বিনিয়োগ ছিল ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যা ৩ মাসের ব্যবধানে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাড়ানোর মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকায়। তবে এই বিনিয়োগ আবারও ২ কোটি ৮১ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়েছে। যাতে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকটিতে ফান্ডটির বিনিয়োগ দাড়িঁয়েছে ১.১৭ কোটি টাকায়।

ফান্ডটি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের শেয়ারে গড় ক্রয়মূল্য ছিল ৬.৩৪ টাকা।

বাংলাদেশ ফান্ড : এ ফান্ডটির ৩০ সেপ্টেম্বর আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে বিনিয়োগ দাড়িঁয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা প্রতিটি ৬.০৭ টাকা গড়ে ১৯ লাখ ৮৩ হাজার শেয়ার কেনা হয়েছে। আর ৩০ জুনে ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ ছিল ৮৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তবে ৩১ ডিসেম্বর এই বিনিয়োগ নেমে এসেছে ৬ লাখ টাকায়। এক্ষেত্রে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিনিয়োগ কমানো হয়েছে।

আইসিবি এএমসিএল পেনশন হোল্ডারস ইউনিট ফান্ড : আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ফান্ডটির ৩০ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগ দাড়াঁয় ১৯ লাখ টাকায়। যার পরিমাণ ৩০ জুনে ছিল ৭ লাখ টাকা। তবে ৩১ ডিসেম্বর কমিয়ে আনা হয়েছে ৬ লাখ টাকায়। ফান্ডটি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ার ৬.২৮ টাকা করে কিনেছে।

আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি ফান্ড : আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ৩০ জুনের ২২ লাখ ১১ হাজার টাকার বিনিয়োগ ৩০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাড়াঁয় ৪৫ লাখ ৮ হাজার টাকা। তবে ৩১ ডিসেম্বর এই বিনিয়োগ শূণ্যে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বিনিয়োগের সবটুকুই বিক্রয় করে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি শেয়ার ৬.৪৪ টাকা দরে শেয়ার কেনা হয়েছিল।

আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় ফান্ড :  ফান্ডটির ৩০ জুনের ১৩ লাখ ২৬ হাজার টাকার বিনিয়োগ ৩০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাড়াঁয় ১৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। আর এই বিনিয়োগ ৩১ ডিসেম্বর ৭ লাখ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে।

 ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ার ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে ৬.৫৫ টাকা। 

বিজনেস আওয়ার/২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এবার আইসিবি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রয় করল আইসিবির ৫ প্রতিষ্ঠান

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

রেজোয়ান আহমেদ : গত বছরের ৩য় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৭) আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ের পরে চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ১৭) বেশি দামে বিক্রয় করেছে ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগি ৫ প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করলেও সাধারন বিনিয়োগকারীরা লোকসান গুণেছে। তবে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মতো ‘জেড’ ক্যাটাগরি ও দীর্ঘদিনের লোকসানি কোম্পানির শেয়ারে এভাবে আইসিবির সহযোগি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়-বিক্রয় করা ঠিক না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে রয়েছে। একইসঙ্গে সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় উন্নতিরও কোন লক্ষণ নেই। এই অবস্থায় ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করে আইসিবির ৫ প্রতিষ্ঠান। যাতে শেয়ারটিতে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি হয়। এরপরে শেয়ারটির দর বৃদ্বি পায়। এবং ওই সময় আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার বিক্রয় করে দেয়। এরপরে শেয়ার দর কমে আবার আগের স্থানে চলে আসে। এমতাবস্থায় আইসিবি লাভবান হলেও কাউকে না কাউকে লোকসান গুণতে হয়েছে। আইসিবির এমন আচরনে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এমতাবস্থায় আইসিবির এ জাতীয় শেয়ারে বিনিয়োগের বিষয়ে তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

পোর্টফোলিও অনুযায়ি, দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে ও সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) বিনিয়োগ বাড়ায় আইসিবির সহযোগি ৫ প্রতিষ্ঠান। তবে এরপরের ৩ মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৭) শেয়ারটি বিক্রয় করেছে।

আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ড, বাংলাদেশ ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল পেনশন হোল্ডারস ইউনিট ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি ফান্ড ও আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় ফান্ড।

নিম্নে আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে আইসিবির ৫ প্রতিষ্ঠানের ২০১৭ সালের শেষ ৩টি প্রান্তিকের ক্রয় মূল্যে বিনিয়োগের পরিমাণ তুলে ধরা হল-

নাম৩০ জুন ১৭৩০ সেপ্টেম্বর ১৭৩১ ডিসেম্বর ১৭
আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ড১.৫৬ কোটি৩.৯৮ কোটি১.১৭ কোটি
বাংলাদেশ ফান্ড০.৮৪ কোটি১.২০ কোটি০.০৬ কোটি
আইসিবি এএমসিএল পেনশন হোল্ডারস০.০৭ কোটি০.১৯ কোটি০.০৬ কোটি
আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি০.২২ কোটি০.৪৫ কোটি০.০০
আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় ফান্ড০.১৩ কোটি০.২০ কোটি০.০৭ কোটি

দেখা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর থেকে দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় অবস্থান করে লোকসানি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংক। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির ১৫ নভেম্বরের ৫.২০ টাকার শেয়ার ২৭ নভেম্বর লেনদেন শেষে দাড়াঁয় ৮.১০ টাকায়। এ হিসাবে ৮ কার্যদিবসে শেয়ার দর বাড়ে ২.৯০ টাকা বা ৫৬ শতাংশ। তবে এই দর বাড়ার পেছনে কোন কারণ খুজে পায়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। যাতে ব্যাংকটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে ২০ ও ২৩ নভেম্বর দুই দফায় ডিএসইর ওয়েবসাইটে সচেতনতামূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়। তবে ব্যাংকটির শেয়ার চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ৬ টাকায় দাড়িঁয়েছে।

এদিকে ব্যাংকটি আগের বছরগুলোর ন্যায় ২০১৭ সালও ব্যবসায় লোকসান গুণছে। এ বছরের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির লোকসান হয়েছে ২৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৪২ টাকা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারে সহযোগিতা করার পাশাপাশি আইসিবির মুনাফাও করতে হয়। তারপরেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইসিবি ও এর ফান্ডগুলোর সতর্ক হওয়া উচিত। একইসঙ্গে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারে এভাবে  কেনা-বেচা করা ঠিক না বলে মনে করেন তিনি।

এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব এইচ মজুমদার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আইসিবির ফান্ডগুলো আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের মতো জাঙ্ক শেয়ারে ক্রয়-বিক্রয় করে দাম উঠা-নামার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে না। এতে আইসিবির প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করতে পারলেও কাউকে না কাউকে লোকসান গুণতে হয়। এক্ষেত্রে সাধারনত সাধারন বিনিয়োগকারীরাই এই উঠা-নামার ফাঁদে পড়ে। তাই আইসিবিসহ তার ফান্ডগুলোর উচিত ভালো শেয়ারে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে উৎসাহিত করা। কিন্তু নিজেরাই যদি জাঙ্ক শেয়ারে জড়িয়ে পরে, সেটা শেয়ারবাজারের জন্য দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত করা উচিত।

আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্টের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) গোলাম রাব্বানি বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ২০১০-১১ সালে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের অনেক শেয়ার কেনা হয়েছিল। ওই সময় শেয়ারবাজারের ধস ঠেকাতে এক প্রকার যেকোন কোম্পানির শেয়ার কেনার অবস্থাও হয়েছিল। যাতে পরে দাম কমে যাওয়ায় লোকসান হয়। সেই লোকসান কমাতে ২০১৭ সালে কম দামে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনে সমন্বয় করা হয়। পরবর্তীতে দাম বাড়লে তা বিক্রয় করা হয়।

সমন্বয়ের জন্য ভবিষ্যত নাই এমন শেয়ারে কেনা কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নে বলেন, আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও নিজস্ব অর্থায়নে চলি। তারপরেও শেয়ার কেনা-বেচা নিয়ে অর্থমন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চাঁপ থাকে। এছাড়া শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার কথাও বিবেচনা করতে হয়।

আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ড : গত বছরের ৩০ জুন আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে আইসিবি এএমসিএল ইউনিট ফান্ডের বিনিয়োগ ছিল ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। যা ৩ মাসের ব্যবধানে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাড়ানোর মাধ্যমে ৩০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকায়। তবে এই বিনিয়োগ আবারও ২ কোটি ৮১ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়েছে। যাতে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকটিতে ফান্ডটির বিনিয়োগ দাড়িঁয়েছে ১.১৭ কোটি টাকায়।

ফান্ডটি আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকের শেয়ারে গড় ক্রয়মূল্য ছিল ৬.৩৪ টাকা।

বাংলাদেশ ফান্ড : এ ফান্ডটির ৩০ সেপ্টেম্বর আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে বিনিয়োগ দাড়িঁয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। যা প্রতিটি ৬.০৭ টাকা গড়ে ১৯ লাখ ৮৩ হাজার শেয়ার কেনা হয়েছে। আর ৩০ জুনে ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ ছিল ৮৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তবে ৩১ ডিসেম্বর এই বিনিয়োগ নেমে এসেছে ৬ লাখ টাকায়। এক্ষেত্রে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিনিয়োগ কমানো হয়েছে।

আইসিবি এএমসিএল পেনশন হোল্ডারস ইউনিট ফান্ড : আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ফান্ডটির ৩০ সেপ্টেম্বর বিনিয়োগ দাড়াঁয় ১৯ লাখ টাকায়। যার পরিমাণ ৩০ জুনে ছিল ৭ লাখ টাকা। তবে ৩১ ডিসেম্বর কমিয়ে আনা হয়েছে ৬ লাখ টাকায়। ফান্ডটি ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ার ৬.২৮ টাকা করে কিনেছে।

আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় এনআরবি ফান্ড : আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ৩০ জুনের ২২ লাখ ১১ হাজার টাকার বিনিয়োগ ৩০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাড়াঁয় ৪৫ লাখ ৮ হাজার টাকা। তবে ৩১ ডিসেম্বর এই বিনিয়োগ শূণ্যে নেমে এসেছে। অর্থাৎ বিনিয়োগের সবটুকুই বিক্রয় করে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি শেয়ার ৬.৪৪ টাকা দরে শেয়ার কেনা হয়েছিল।

আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় ফান্ড :  ফান্ডটির ৩০ জুনের ১৩ লাখ ২৬ হাজার টাকার বিনিয়োগ ৩০ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাড়াঁয় ১৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। আর এই বিনিয়োগ ৩১ ডিসেম্বর ৭ লাখ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে।

 ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ার ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে ৬.৫৫ টাকা। 

বিজনেস আওয়ার/২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: